দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে নিরলসভাবে লড়ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। মহামারি করোনাভাইরাসে মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে তারা নিজেরাও সংক্রমিত হচ্ছেন। দেশে এ পর্যন্ত এক চিকিৎসকের মৃত্যুসহ আড়াই শতাধিক ডাক্তার-নার্স করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় রোবট ব্যবহারের চিন্তা করা হচ্ছে। যেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও নার্সের রোগীর সংস্পর্শে না গেলেও চলে সেখানে রোবট ব্যবহার হতে পারে বলে মনে করছেন তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
হাসপাতালে রোবট ব্যবহারে সক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী আমরা প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন সমাধান নিয়ে আসছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে রোবটের বিষয়ে চাহিদা দেওয়া হলে অবশ্যই আমরা তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। এটা আমাদের বিবেচনায় আছে, আমাদের ইনোভেশন ল্যাব (আইল্যাব) স্থানীয় উদ্ভাবকদের সহায়তায় দেশীয় রোবট নিয়ে কাজ করছে। আমাদের সেই সক্ষমতা আছে।’
অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রগ্রামের পলিসি অ্যাডভাইজার আনির চৌধুরী বলেন, ‘করোনা রোগীদের খাবার, ওষুধ পাঠানোর কাজে রোবট ব্যবহার করা যায়। আমরা আইল্যাব থেকে এমন একটি রোবট বানিয়েছি। হাসপাতালে রোগী খুব বেশি অসুস্থ হলে সেখানে রোবট ব্যবহার খুব কার্যকর হবে না। এটা নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। তবে এটা প্রয়োগ করা যেতে পারে, এটা করা সম্ভব। আমরা হালকা রোবট তৈরির ব্যাপারে কাজ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অনেকেই রোবট বানিয়েছে। তারা এগিয়ে এলে পর্যাপ্ত রোবট সরবরাহ করা যাবে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন কম্পানির যেসব সার্ভিস রোবট আছে সেগুলোও কাজে লাগানো যায়।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের রোবট ব্যবহারের সক্ষমতা কতটুকু এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে কথা বলব। যদি দেখি, এটা আমাদের জন্য সহায়ক তাহলে আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।’
দেশের শীর্ষস্থানীয় সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডাটা সফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব জামান বলেন, ‘অনেক দেশ হাসপাতালে রোবট ব্যবহার করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ফেস রিডিং প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। ফেস রিডিং, সেন্সর ব্যবহার নিয়ে কিছু আলোচনা হচ্ছে। আমাদের ব্যাপক সংক্রমণের আগেই এসব প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল বলেন, ‘পেশেন্ট মনিটরটিং, ওষুধ পাঠানো, পরিচ্ছন্নতার কাজে রোবট ব্যবহার সম্ভব। আমাদের দেশেও বেশ কিছু রোবট তৈরি হয়েছে। সরকার চাইলে বেসরকারি খাতের সহায়তায় রোবট ব্যবহার করতে পারে।’
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করেছে দ্রুগতিসম্পন্ন ও কার্যকর রোবট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোবট ব্যবহার করলে আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তিকে স্পর্শ করার সংখ্যা কমানো যায়। এতে স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি কমে। চীনের যে উহান শহর থেকে কভিড-১৯ মহামারি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানকার একটি হাসপাতালে রোগীদের খাবার দেওয়া, তাপমাত্রা মাপা বা যোগাযোগের মতো কাজে ব্যবহার হচ্ছে রোবট। ‘ক্লাউড জিঞ্জার’ নামে ওই রোবট তৈরি করেছে ক্লাউড মাইন্ডস। থাইল্যান্ড, ইসরায়েলসহ আরো কয়েকটি দেশের কিছু হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবায় রোবটের ব্যবহার হচ্ছে। ভারতের কেরালা রাজ্যেও করোনা প্রতিরোধে মোতায়েন করা হয়েছে রোবট।
দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানা দুর্যোগ মোকাবেলার রোবট বানিয়েছেন। রাজধানীর আসাদগেটের কাছে ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড কনভেনশন সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে চালু হয়েছে দেশের প্রথম রোবট রেস্টুরেন্ট। এতে খাবার পরিবেশন করে দুটি রোবট। রোবট দুটি বানিয়েছে এইচ জেড এক্স ইলেকট্রনিক টেকনোলজি কম্পানি। এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাক্স সোয়াজ জানিয়েছেন, দেশে রোবট ডিজিটালাইজেশনের জন্য যেকোনো সহযোগিতা করতে তারা সব সময় প্রস্তুত।সূত্র: কালের কণ্ঠ।