প্রযুক্তি বিশ্ব প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। এরই ধারাবাহিকতায় উদ্ভাবিত হয়েছিল স্মার্টফোন। শুরুর দিকে স্মার্টফোনের ফিচার ছিল বেশ সীমিত। তবে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এখন স্মার্টফোনে যুক্ত হয়েছে এমন সব ফিচার যা আমাদের জীবনযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্মার্টফোন নির্ভরতা অনেক বেশি। প্রয়োজনীয় অনেক কাজই এখন সেরে নেওয়া যায় স্মার্টফোনে। প্রয়োজনীয় কোনো ডকুমেন্ট তৈরি করা থেকে শুরু করে ইমেইল আদান-প্রদান কিংবা ভার্চুয়াল মিটিং, সবই সেরে নেওয়া যায় স্মার্টফোনেই। এর পাশাপাশি বিনোদনের জন্যও স্মার্টফোনের জুড়ি নেই। হাইএন্ড গেম খেলা কিংবা নেটফ্লিক্সে পছন্দের সিরিজ দেখা, সবই এখন স্মার্টফোন নির্ভর।
তবে এতোসব ফিচার যুক্ত হওয়ায় স্মার্টফোনের চার্জও শেষ হয় বেশ দ্রুত। পুনরায় চার্জ দিতে আবার লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়। এই সমস্যা সমাধানে অপো উদ্ভাবন করেছিল ভোল্টেজ ওপেন লুপ মাল্টি-স্টেপ কনস্ট্যান্ট কারেন্ট চার্জিং বা ভোক। এটি একটি ফ্ল্যাশ চার্জ প্রযুক্তি যা মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই ব্যাটারি ৭৫% পর্যন্ত চার্জ দিতে সক্ষম।
ভোক চার্জিং প্রযুক্তিকে উন্নত করতে প্রতিনিয়তই কাজ করে যাচ্ছে অপো। ফাইভি বিপ্লবেও অপোকে একধাপ এগিয়ে রেখেছে এই প্রযুক্তিটি।
২০১২ সালে ঝ্যাং জিয়ালিয়াং (Zhang Jialiang) নামে অপোর একজন প্রকৌশলীর হাত ধরে ভোক ফ্ল্যাশ চার্জ প্রযুক্তির শুরু হয়। সাধারণত মনে করা হয় যে ভোল্টেজ বেশি হলেই বিদ্যুৎ প্রবাহের গতি বেশি হবে। আর সে কারণে ইলেকট্রনিকস পণ্য নির্মাতারা ভোল্টেজের উচ্চমাত্রার দিকেই বেশি নজর দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে একটি সমস্যা রয়েছে। আর তা হলো ডিভাইস অতিমাত্রায় গরম হয়ে যায়। তবে ঝ্যাং দেখিয়েছেন ভোল্টেজের পরিবর্তে বিদ্যুৎ প্রবাহের গতি বাড়িয়ে চার্জিংয়ের গতি বাড়ানো সম্ভব। এখান থেকেই মূলত ভোক চার্জিংয়ের সূচনা হয়েছিল।
২০১৪ সালে অপোর ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন ফাইন্ড ৭-এ প্রথমবারের মতো ভোক চার্জিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে স্মার্টফোনটি মাত্র ৫০ মিনিটেই ফুল চার্জ দেওয়া যেত।
পরবর্তীতে উন্মুক্ত করা হয় ভোক ২.০। ২০১৮ সালে অপো নিয়ে আসে সুপার ভোক যা ফাস্ট চার্জিংয়ে নিয়ে আসে নতুন মাত্রা। মাত্র ৩৫ মিনিটেই ফুল চার্জ দেওয়ার সুবিধা নিয়ে আসে এই চার্জিং প্রযুক্তি। অপো ফাইন্ড এক্স এবং অপো আর৭১ ডিভাইসে সুপার ভোক ব্যবহার করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে রেনো ২ ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনে ব্যবহার করা হয় ভোক ৩.০ যা আগের সংস্করণের তুলনায় আরও প্রায় ২০ মিনিট কম সময়েই ব্যাটারি ফুল চার্জ দিতে সক্ষম।
২০১৯ সালের অক্টোবরে অপো নিয়ে আসে নতুন তিন ফ্ল্যাশ চার্জিং প্রযুক্তি ৬৫ ওয়াট সুপার ভোক ফাস্ট চার্জ ২.০, ৩০ ওয়াট ওয়্যারলেস ভোক ফ্ল্যাশ চার্জ এবং ভোক ফ্ল্যাশ চার্জ ৪.০।
৬৫ ওয়াট সুপার ভোক ২.০ প্রযুক্তিতে মাত্র ৩০ মিনিটেই ৪,০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি ফুল চার্জ দেওয়া সম্ভব হবে। কাস্টমাইজড এবং অ্যাডভান্সড কমপোনেন্ট, ডিজাইনের পাশাপাশি এতে ব্যবহার করা হয়েছে গ্যালিয়াম নাইট্রাইড সেমিকন্ডাক্টর যা চার্জিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সময়ের পরিমাণ যেমন কমাবে, তেমনি অ্যাডাপ্টরের আকারও ছোট হয়ে যাবে।
ওয়্যারলেস চার্জিংয়েও ভোক প্রযুক্তির ব্যবহার দেখিয়েছে অপো। অপোর ৩০ ওয়াট ওয়্যারলেস ভোক চার্জিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুতগতিতে ফোন চার্জ দেওয়া যাবে। ওয়্যারলেস ভোক চার্জারটি ব্যবহার করে ৪,০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের একটি ব্যাটারি চার্জ হতে সময় লাগবে ৮০ মিনিট। এটি কিউআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। চার্জার গরম হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে বিশেষভাবে এর হার্ডওয়্যার ডিজাইন করা হয়েছে।
অন্যদিকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে আনা হয়েছে ভোক ৪.০ চার্জিং প্রযুক্তি যা ব্যবহার করা হয়েছে অপো ফাইন্ড এক্স২ লাইট স্মার্টফোনে। এর মাধ্যমে ৪,০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের একটি ব্যাটারি ৩০ মিনিটে ৬৭% চার্জ হবে এবং সম্পূর্ণ চার্জ হতে সময় নেবে ৭৩ মিনিট যা এর আগের সংস্করণের তুলনায় ১২% দ্রুতগতির। আর এজন্য এতে ব্যবহার করা হয়েছে ভিএফসি অ্যালগরিদম। এই প্রযুক্তি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যার ফলে স্মার্টফোন চার্জ দেওয়ার সময় গেম খেললেও ফোন গরম হবে না।