সর্বাধুনিক মোবাইল নেটওয়ার্ক ফাইভজি’ থেকে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ ছড়ায় বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুয়া ও গুজব বলে নিশ্চিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে সামাজিকমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, ফাইভজি নেটওয়ার্ক করোনাভাইরাস ছড়াতে সাহায্য করে। এরপর সামাজিকমাধ্যমে প্রচার হতে থাকে ওই তথ্য। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে যার যার এলাকার ফাইভজি টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেয়ার আহ্বান ছড়িয়ে পড়ে সামাজিকমাধ্যমে। এরপর এমন অদ্ভূত ধারণা বিশ্বাস করে বার্মিংহামের ওই ৫জি টাওয়ারে আগুন ধরিয়ে দেয় স্থানীয়রা।
মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর বিষয়টি প্রথম গত জানুয়ারি প্রচার করে ফ্রান্সের একটি ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইটটি দাবি করে, চীনের উহান শহরে ফাইভজি নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হচ্ছিল। সেখান থেকে উচ্চমাত্রার তরঙ্গ নিঃসরিত হয়। সেই তরঙ্গ থেকেই করোনাভাইরাস ছড়ায়।
ফ্রান্সভিত্তিক ওয়েবসাইটি নিজেদের ভাষায় সংবাদটি প্রচার করে। কিন্তু এর পর বেলজিয়ামভিত্তিক একটি ওয়েবসাইট স্থানীয় এক ডাক্তারের সাক্ষাৎকার নিয়ে ইংরিজিতে খবরটি প্রচার করে। ফলে সেটি দ্রুত সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল হয়। অবশ্য তারা খবরটি এক ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে নেয়। কিন্তু ততক্ষণে ভাইরাল হয়।
যুক্তরাজ্যে ছড়ানো গুজবও এমন একটি ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ বলে মন্তব্য করেছেন গবেষকরা। তারা বলেছেন, ফাইভ’জি প্রযুক্তির সঙ্গে করোনা ভাইরাস বিস্তারের কোনো সম্পর্ক নেই।
রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলুলার মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইমন ক্লার্ক বলেন, এই ধারণা ‘সম্পূর্ণ আবর্জনাপূর্ণ, মিথ্যা ও ভ্রান্ত ধারণা।
তবে বিভিন্ন গবেষণায় নিশ্চিত করা হয়েছে, রেডিও তরঙ্গগুলো দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অকার্যকর করার মতো কোনো পরিস্থিতিই নেই, এর সেরকম শক্তি নেই।
এ বিষয়ে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাডিয়াট্রিক্সের অধ্যাপক অ্যাডাম ফিন যোগ করেছেন যে, করোনা ভাইরাস এক ব্যক্তির দেহ থেকে আরেক ব্যক্তির দেহে ছড়ায় তা আমরা জানি, এটি সত্য। এমনকি আমাদের ল্যাবেও অসুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে এটি ছড়িয়েছে। কিন্তু ভাইরাস এবং তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ যা মোবাইলে নেটওয়ার্কের কাজ করে এবং ইন্টারনেট সংযোগে ভূমিকা রাখে এমনটা অসম্ভব।
ফাইভজি নেটওয়ার্ক করোনাভাইরাস ছড়াতে সহায়তা করে গুজব ছড়াতে ইরান বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো বহু দেশে করোনা ছড়িয়েছে যেখানে এখনো ফাইভজি নেটওয়ার্ক চালু হয়নি।