ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ৬৬ সালের ছয়- দফা আমাদের মুক্তির সনদ হিসেবে কাজ করেছে। দেশের নামটি প্রস্তাবনা ছাড়া স্বাধীনতা ঘোষণার সব কিছুই নিহিত ছিলো এই ছয় দফায়। ছয় দফা মানেই স্বাধীনতার ঘোষণা। । এর পর থেকেই বঙ্গবন্ধুর আপোষহীন সংগ্রামের কঠিন পথ বেয়ে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের দিকে এগিয়ে যায় বাঙালি জাতি।
মন্ত্রী আজ রোববার ঢাকায় ডাক অধিদপ্তর আয়োজিত ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় -দফা দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট অবমু্ক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। তিনি বেইলী রোডস্হ তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে জুম ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. নূর-উর-রহমান, অতিরিক্ত সচিব মো. আজিজুল ইসলাম এবং শাহাদাৎ হোসেন এবং ডাক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হারুন অর রশীদ ভিডিওতে সংযুক্ত থেকে বক্তৃতা করেন। ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএস ভদ্র অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
মন্ত্রী বলেন, ১৯৬৬ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয়-দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণ আন্দোলনের সূচনা হয়। এই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গি, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে তৎকালীন পুলিশ ও ইপিআর‘র গুলিতে মনু মিয়া, শফিক ও শামসুল হকসহ অনেক বাঙালি শহীদ হন।
ছয়-দফার মাধ্যমেই গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার প্রস্তুতি কাজ সম্পন্ন করা হয়েছিলো উল্লেখ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, মানুষ আগে থেকে তৈরি না থাকলে যুদ্ধে আমরা জয়ী হতে পারতাম না। বঙ্গবন্ধু সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রটির জন্মের পর থেকেই প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে মহান নেতা শেখ মুজিব বাঙালির জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের যাত্রা শুরু করেছিলেন। অভাবনীয় ত্যাগ ও নির্যাতন সহ্য করে ৬৬, ৬৮, ৬৯ সালে তিনি মহানায়কে পরিণত হন। এরই ধারাবাহিকতায় সত্তরের নির্বাচন আওয়ামী লীগের আকাশচুম্বি বিজয় এবং একাত্তরের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
ষাটের দশকের শেষ প্রান্তে রাজপথে ছাত্ররাজনীতির লড়াকু সৈনিক হিসেবে ছয়-দফা আন্দোলনের পেক্ষাপট তুলে ধরেন জনাব মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজনীতিক শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ছয়-দফা উত্থাপন করেন যাতে পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে বিষয়টি স্হান পায়। কিন্তু আয়োজক পক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগ না দিয়ে লাহোরে অবস্হানকালেই ছয়-দফা উত্থাপন করেন। ছয়-দফার মূল বক্তব্য ছিল প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় ছাড়া সকল ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানে দু‘টি পৃথক ও সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। সরকারের কর, শুল্ক ধার্য ও আদায় করার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকাসহ অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আলাদা হিসাব থাকবে এবং পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষা ঝুঁকি কমাতে এখানে আধা – সামরিক বাহিনী গঠন ও নৌ-সদর দপ্তর স্হাপন।
মন্ত্রী করোনা পরিস্থিতিতে নানা প্রতিকুলতা সত্ত্বেও ঐতিহাসিক ৭ জুন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়েও টেলিকম ও ইন্টারনেট সেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য তাঁর অধীনস্থ দপ্তর ও সংস্থার সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ডাক অধিদপ্তর ‘ছয়-দফা শহীদ দিবস’ উপলক্ষে ১০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট এবং ১০টাকা মুল্যমানের একটি উদ্বোধনী খাম প্রকাশ করেছে।