সুইডিশ টেলিকম গিয়ার নির্মাতা এরিকসন এবং ফিনিশ টেলিকম গিয়ার নির্মাতা নকিয়ায় অর্থায়নে ব্রাজিল ও দেশটির সেলফোন অপারেটরগুলোকে প্ররোচিত করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ লক্ষ্যে ব্রাজিল এবং দেশটির স্থানীয় টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জোরেশোরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি ব্রাজিলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত টোড চ্যাপম্যান স্থানীয় এক সংবাদপত্রে দেয়া সাক্ষাত্কারে এমনটি জানিয়েছেন। খবর রয়টার্স।
ফলহা ডি সাও পাওলো নামের ওই পত্রিকাটিকে দেয়া সাক্ষাত্কারে চ্যাপম্যান বলেন, এ ধরনের অর্থায়ন ওয়াশিংটনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটির লক্ষ্য হবে ডাটা ও ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি এবং নাগরিকদের সংবেদনশীল তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বিশ্বের শীর্ষ টেলিকম সরঞ্জাম নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চীনের হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কোম্পানি লিমিটেডকে উল্লেখ করে এমন ধরনের মন্তব্য করেন চ্যাপম্যান। কারণ ব্রাজিলে প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে হুয়াওয়ে। তবে ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের সাপে-নেউলে সম্পর্কের জেরে হুয়াওয়েকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে ব্যাখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। মূলত বৈশ্বিক টেলিকম বাজারে হুয়াওয়ের আধিপত্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর উত্থানে সহায়তার জন্য এমন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাম্প। যে কারণে নিজেদের দেশে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি অন্যান্য দেশকেও হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা না করার জন্য প্ররোচিত করে আসছে ওয়াশিংটন। আর একই কারণে হুয়াওয়ের ফাইভজি সেবার ক্ষেত্রেও অন্যান্য দেশের অর্থায়ন বাগিয়ে নিতে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রাজিলের সঙ্গে আলোচনা তারই অংশবিশেষ বলে মনে করা হয়। যদিও হুয়াওয়ে এ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছে।
অন্যদিকে এমন একটি সময় ব্রাজিলের স্থানীয় টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোকে এরিকসন ও নকিয়ায় অর্থায়নের জন্য ওয়াশিংটন প্ররোচিত করছে, যখন হুয়াওয়ে দেশটিতে ফাইভজির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফলভাবে শেষ করেছে। চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে ব্রাজিলের প্রধান চারটি ক্যারিয়ারের ওপর ফাইভজির পরীক্ষামূলক ব্যবহার করেছে। এ চারটি ক্যারিয়ার হলো—টেলিফোনিকা ব্রাজিল সা, টিআইএম পারটিসিপাকোয়েস সা, আমেরিকা মভিল’স ক্লারো ও অয় সা। অন্যদিকে আসন্ন ফাইভজি স্পেকট্রামের নিলামকে সামনে রেখে দেশটির টেলিকম খাতের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে হুয়াওয়ে।
তবে ওয়াশিংটনের এমন প্রতিবন্ধকতায় থেমে নেই বেইজিংও। এর আগে গত বছরের আগস্টে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে ব্রাজিলে হুয়াওয়ের কারখানা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের মধ্যে সাও পাওলোতে হুয়াওয়ে ৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে আরো একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করবে। মূলত মার্কিন বিরোধিতা সত্ত্বেও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর বাজারে হিস্যা বাড়ানোর জন্য এ বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে হুয়াওয়ে।
তবে বৈশ্বিক টেলিকম বাজারে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির এমন আধিপত্য মোটেই ভালোভাবে নিচ্ছে না ট্রাম্প প্রশাসন। এজন্য জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে হুয়াওয়ের পণ্য বর্জন করার আদেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে মিত্র দেশগুলোকেও হুয়াওয়ের পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন। তবে আপাতত হোয়াইট হাউজের এ আহ্বানে কর্ণপাত করছে না কোনো দেশই। আর এজন্য হুয়াওয়ের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে এবার আরো জোরেশোরে নেমেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর অংশ হিসেবেই ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশকে নিজেদের মতো করে বোঝানোর চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন।
হুয়াওয়েকে পাশ কাটিয়ে ব্রাজিলের অর্থায়ন বাগিয়ে নিতে চ্যাপম্যানও তাই ব্রাসিলিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। তার যুক্তি ব্রাজিলে ফাইভজি প্রতিষ্ঠায় চীনা কোম্পানিগুলোকে অনুমতি দিলে এটি বিদেশী বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে। তার প্রশ্ন, যেখানে জাতীয় নিরাপত্তা এবং নাগরিকদের তথ্য নিরাপদ নয়, সেখানে কোনো বিদেশী কোম্পানি কি বিনিয়োগ করতে আসবে?
অন্যদিকে ব্রাজিলের এ অর্থায়ন পেতে প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র ঋণ দেবে বলেও জানান চ্যাপম্যান। তিনি জানান, ব্রাজিলের সঙ্গে এ অর্থায়ন বিষয়ে আলোনায় ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশন থেকে অর্থ সরবরাহ করা হবে। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি মূলত চীনের ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন ট্রাম্প।