ভারত-চীন সীমান্ত উত্তেজনা ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এখন সবচেয়ে বেশি চর্চিত বিষয়। দুই দেশের মধ্যেই পরস্পরবিরোধী মনোভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে ভারতের দিক থেকে চীনবিরোধী মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠে এসেছে। এ অবস্থায় ভারতের বাজারে চীনা পণ্য বয়কট করার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। সেটি হলে দেশটিতে চীনা স্মার্টফোনের বিক্রিতে ধস নামতে পারে বলে মনে করছেন তারা। তাদের মতে, বিশেষ করে চলমান সংকটকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী শাওমি, অপো ও ভিভোর মতো চীনা ব্র্যান্ডকে পিছে হটিয়ে বাজার দখল করতে পারে মাইক্রোম্যাক্স, লাভা ও কার্বনের মতো ভারতীয় ব্র্যান্ডগুলো। তবে বিশ্লেষকরা এমন ধারণা করলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে চীনা স্মার্টফোনের ওপর খুব একটা প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা। খবর ইটি টেলিকম।
ভারতের স্মার্টফোন বাজারে আধিপত্য ধরে রাখা চীনা ব্র্যান্ড শাওমির স্থানীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মানু জৈন ইটি টেলিকমকে দেয়া একান্ত এক সাক্ষাত্কারে বলেন, সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান ও হতাহতের ঘটনায় স্থানীয় ভোক্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। সে কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাওমিকে লক্ষ্য করে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে এটি শাওমির বিক্রিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। ভারতের স্মার্টফোনের বাজারে আধিপত্য ধরে রাখা চীনা এ ব্র্যান্ডটির ব্যবসার ক্ষেত্রে ভোক্তাদের এমন অসন্তোষ দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বর্তমান প্রেক্ষাপটের বিষয় উল্লেখ করে শাওমির এ ভারতীয় এমডি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহের দিকে যদি আমরা লক্ষ্য করি, তাহলে দেখা যাবে, সেখানে একটি দেশ বা অঞ্চলের কোম্পানির পণ্যের বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এটি দেশটিতে জারি করা লকডাউনের মাঝামাঝি সময় থেকে হয়ে আসছে, যা সম্প্রতি আরো বেড়েছে। আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারছি যে ভোক্তারা কিছুটা ক্ষুব্ধ অবস্থায় রয়েছে।
তবে কী চলমান চীনবিরোধী মনোভাব শাওমির বাজার হিস্যায় কোনো ব্যাঘাত ঘটাবে না—ঠিক এমন ধরনের প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে নিজেই আবার উত্তর দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, চলমান প্রেক্ষাপট শাওমির ব্যবসায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। তার মতে, সেখানে স্থানীয় ভোক্তাদের বিক্ষুব্ধ একটা শ্রেণীর মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছে। যেটা বর্তমান সৃষ্ট জটিলতায় পূর্ব অনুমিত ছিল।
বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে শাওমির ভারতীয় এমডি বলেন, এ ধরনের সংকটময় সময়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। চীনা কোম্পানিটিও নিরাপত্তাজনিত কোনো উদ্বেগ দেখছে না। এমনকি আমাদের অফিস, দোকান ও কারখানায়ও নিরাপত্তা জোরদার করার মতো তেমন কোনো পরিস্থিতি দেখছেন না তারা। তার মতে, শাওমির দোকানগুলোর বাইরে যারা বিক্ষোভ করছেন, সেটি পরিস্থিতি ঘোলা করার জন্য হালে পানি পাওয়ার মতো নয়।
তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতের বাজারে স্থানীয় স্মার্টফোনের চেয়ে শাওমির বাজার হিস্যা অনেক বেশি। চীনা প্রতিষ্ঠানটি তাদের বেশির ভাগ স্মার্টফোন ও টিভি ভারতেই তৈরি করে। এমনকি এসব প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে যেসব মূল উপাদান প্রয়োজন হয়, তার ৬৫ শতাংশও স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করা হয়। ফলে ভারতের হ্যান্ডসেটের বাজারে তাদের আধিপত্য আছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি দেশটিতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে।
চীনবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো ভারতের বাজারে হিস্যা বাড়াতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে শাওমির এ কর্মকর্তা বলেন, যারা মার্কিন ব্র্যান্ডের কথা বলছেন, তারা হয়তো ভুলে গেছেন যে তাদের ফোনের শতভাগ চীনা পণ্য দিয়ে তৈরি। তারা প্রতিটি উপাদানই চীন থেকে আমদানি করে। আর যারা স্থানীয় ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়, তারাও কিন্তু চীন থেকে মূল উপাদান নিয়ে আসে। এমনকি তারা হোম স্ক্রিনও পরিবর্তন করে না। শুধু লোগো পরিবর্তন করেই এটিকে ভারতীয় ব্র্যান্ড বলে চালিয়ে দেয়।
শাওমির এ কর্মকর্তার বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট, ভারতের স্মার্টফোনের বাজারের প্রায় পুরোটাই চীননির্ভর। এমনকি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যেও চীনের আধিপত্যের এ চিত্রটি উঠে এসেছে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ভারতের বাজারে সরবরাহ হওয়া বিদেশী স্মার্টফোনের মধ্যে ৮১ শতাংশই এসেছে চীন থেকে। আর মাইক্রোম্যাক্স ও লাভার মতো স্থানীয় ব্র্যান্ডের বাজার হিস্যা বর্তমানে ১ শতাংশের মতো।