ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা গর্ব করতে পারি যে ঘাতকরা বাংলাদেশকে হত্যা করতে পারেনি। শুধু তাই জাতির পিতাকে হত্যা করে তাকে আরও শক্তিশালী প্রমাণ করেছে।
তিনি বলেন, আজ প্রমাণিত-খুনী মাজেদের স্বীকারোক্তি অনুসারে জাতির পিতাকে সপরিবারে খুনের ষড়যন্ত্রকারীদের নেতৃত্ব দিয়েছে জিয়াউর রহমান। এই জিয়া কেবল খুনী নয়-পাকিস্তানের এজেন্ট। ক্যাপ্টেন মাজেদ তার জবানবন্দীতে বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। পঁচাত্তরে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে থাকলে আমরা আজকের এই বাংলাদেশ পেতাম না।
মন্ত্রী আজ ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে ওয়েবিনারে সংযুক্ত থেকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: নূর-উর-রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহিরুল হক, বাংলাদেশ কমিউনিকেশন্স স্যাটেলাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান ড. শাহাজাহান মাহমুদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহাদাৎ হোসেন ও সেলিমা সুলতানা, যুগ্ন-সচিব মো: জেহসান ইসলাম, বিটিসিএল ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ড. মো: রফিকুল মতিন এবং ডট মহাপরিচালক মহসীনুল আলম প্রমূখ বক্তৃতা করেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও এর অধীন সংস্থাসমূহের কর্মকর্তা – কর্মচারিবৃন্দ সরাসরি বা অন-লাইনে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন।
মোস্তাফা জব্বার ১৯৪৭ সালের পর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধু তার সুপরিকল্পিত চিন্তাধারায় ২৩ বছরের কঠিন পথ অতিক্রম করেছেন। তিনি স্বাধীনতা অর্জনে জনযুদ্ধ কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন। এই সূদুরপ্রসারি কৌশলের ফলে শক্তিশালী পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অস্ত্রের সামনে একমতো খালি হাতে এবং বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে রেখে যে যুদ্ধটা বাংলার মানুষ করেছে পৃথিবীর কোন দেশ তা পারেনি। গণযুদ্ধের জন্য গণজাগরণ হয়েছে ইতিহাসে এটা অন্য কোথাও নেই।
একাত্তরের রণাঙ্গণের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, এদেশের মায়েরা যুদ্ধের সময় তাদের আপন সন্তানের মতো আমাদের খাবার দিয়েছেন। তারা নিজেরা গোয়াল ঘরে থেকে তাদের শোবার ঘরে আমাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন এবং অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছেন। বাংলার মায়েরা বঙ্গবন্ধুর জন্য রোজা রেখেছেন, দোয়া করেছেন । এটাই ছিলো বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা অর্জনের লড়াই এর বড় অর্জন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ কোথায় যাবে এ বিষয়ক রুপরেখা জাতির পিতা শুধু প্রস্তুতই করেননি, বাস্তবায়নও শুরু করেছিলেন ।
মন্ত্রী বলেন ষড়যন্ত্রকারীরা পঁচাত্তর পরবর্তী ২১ বছর বাংলাদেশকে পেছনে টেনেও সুবিধা করতে পারেনি কারণ বঙ্গবন্ধু তার সুযোগ্য সন্তান রেখে গেছেন। দীর্ঘ ২১ বছরের পশ্চাদপদতার জঞ্জাল সরিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা তার ১৬ বছরের শাসনে দেশকে হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ির তাচ্ছিল্যের জবাব দিয়েছেন। বাংলাদেশকে তিনি শতশত বছরের পশ্চাদপদতা অতিক্রম করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্বে জায়গায় উপনীত করেছেন। করোনাকালেও বিশ্বের উন্নত দেশ গুলোর প্রবৃদ্ধি যেখানে নাজুক অবস্থায় সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সারা বিশ্বে করোনায় থমকে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচী বাস্তবায়নের নেতৃত্বের দূরদর্শীতার ফলে আমাদের জীবন যাত্রা উন্নত দুনিয়ার মানুষদের চেয়ে পিছিয়ে নেই। ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্লের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য । তাঁর এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের ধারাবহিকতায় আমরা ২০২৩ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -২, তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল এবং ৫জি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছি।
তিনি বলেন, তরুণরাও আজ অনলাইন ব্যবসায় নিজেদের নিয়োজিত করছে আমাদের তৈরি করা ডিজিটাল মহাসড়কে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ যাতে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য প্রতিটি ইউনিয়নে, প্রত্যন্ত চর-দ্বীপ-হাওর-বিলে ইন্টারনেট সুবিধা আমরা পৌঁছে দিচ্ছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুটিও আজ ইন্টারনেটের সাথে পরিচিত। তিনি দুর্যোগকালে নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা সচল রাখতে নিরলস প্রচেষ্টার জন্য টেলিকম বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকলকে ধন্যবাদ জানান।
মো: নূর- উর -রহমান বলেন, জাতির পিতার নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়ন করাই হবে আমাদের লক্ষ্য। ঘাতকতারা আমাদের অগ্রগতি থামিয়ে দিতে চেয়েছিলো, থামাতে পারে নাই। বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের বিস্ময়।