প্রযুক্তিপণ্যের রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে চলেছে বাংলাদেশী মাল্টিন্যাশনাল ব্র্যান্ড ওয়ালটন। দ্রুত বাড়ছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত ওয়ালটন পণ্যের রপ্তানি বাজার। এরই ধারাবাহিকতায় ওয়ালটন কারখানায় তৈরি উন্নত মানের ফ্রিজ কম্প্রেসর রপ্তানি তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে ইরাক। নিজস্ব ব্র্যান্ডের নামেই কম্প্রেসর রপ্তানির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের এই আরব দেশটিতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরো জোরদার করলো ওয়ালটন। দেশটিতে ধাপে ধাপে যাবে ওয়ালটনের রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, টিভিসহ অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্য।
জানা গেছে, ইরাকে রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে লক্ষ্যে বাগদাদের খ্যাতনামা প্রযুক্তিপণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান আশ্রকাত আলনারজেস জেনারেল কোম্পানির সঙ্গে ওয়ালটনের একটি চুক্তি হয়েছে। ইরাকে ওয়ালটন পণ্যের পরিবেশক করা হয়েছে তাদের।
ওয়ালটন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইউনিট (আইবিইউ) শাখার এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলের প্রধান রকিবুল ইসলাম জানান, ইরাকি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিরা গত বছরের শেষ দিকে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে কম্প্রেসর উৎপাদন কারখানা পরিদর্শন করেন। বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে উচ্চ গুণগতমানের কম্প্রেসর উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখে সন্তুষ্ট হন তারা। সে সময় তারা ইরাকের বাজারে ওয়ালটন কম্প্রেসর বাজারজাত করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রথম বছর তারা ওয়ালটনের কাছ থেকে কয়েকটি ধাপে বিশাল পরিমাণ কম্প্রেসর নেয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এরইমধ্যে কম্প্রেসরের প্রথম চালান পাঠানো হয়েছে।
আশ্রকাত আলনারজেস জেনারেল কো. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াদ এম দাহাম বলেন, ‘বাংলাদেশে অত্যাধুনিক কারখানায় উচ্চ মানের কম্প্রেসর তৈরি করছে ওয়ালটন। এসব কম্প্রেসর ইরাকের বাজারের জন্য খুবই উপযুক্ত। তার দৃঢ় বিশ্বাস- ইরাকে কম্প্রেসরের সিংহভাগ বাজার ওয়ালটন দখল করে নিতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও ওয়ালটন কম্প্রেসর বাজারজাত করা সহজ হবে।’
ওয়ালটন কম্প্রেসরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রকৌশলী মীর মুজাহেদীন ইসলাম জানান, বিশ্বমানের কম্প্রেসর ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ তৈরি করছে ওয়ালটন। উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে মান নিয়ন্ত্রণে অনুসরণ করা হচ্ছে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি। কারখানায় স্থাপন করা হয়েছে আন্তর্জাতিকমানের মাননিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পরীক্ষা সরঞ্জাম ও মেশিনারিজ। ওয়ালটন কারখানায় মাদারবোর্ড তৈরির জন্য রয়েছে নিজস্ব ইউনিট। কম্প্রেসরের সর্বনিম্ন নয়েজ লেভেল নিশ্চিত করার জন্য রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত হেমি অ্যান-ইকোয়িক অ্যাকুইস্টিক চেম্বার। জার্মান প্রযুক্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে ‘সাইলেন্ট ও ডিউর্যাবল’ কম্প্রেসর তৈরি হচ্ছে। লেটেস্ট প্রযুক্তির নতুন আরেকটি সিরিজের কম্প্রেসর উৎপাদনে কাজ করছে ওয়ালটনের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রকৌশলীরা। নতুন এই সিরিজের উৎপাদন শুরু হলে রপ্তানি কয়েকগুণ বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী।
ওয়ালটন আইবিইউ শাখার প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড কিম জানান, বিশ্ববাজারে শক্তিশালী অবস্থান তৈরির লক্ষে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিশ্বের বাজারগুলোতে রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিজস্ব ব্র্যান্ডের পাশাপাশি ওইএম পদ্ধতি বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের পণ্য তৈরি করছে ওয়ালটন। ওয়ালটনের বিভিন্ন পণ্য ইতোমধ্যে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক আন্তর্জাতিক টেস্টিং ল্যাব ‘এসজিএস’ এর কাছ থেকে সিই, আরওএইচএস, ইএমসি ইত্যাদি মান সনদ অর্জন করেছে। ইউরোপে পণ্য রপ্তানিতে অত্যাশক এসব সনদ অর্জন করায় জার্মানি, পোল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে ওয়ালটন পণ্যের রপ্তানি বাণিজ্য ।
ওয়ালটনের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ জানান, কম্প্রেসর উৎপাদন শিল্প বাংলাদেশের আরেকটি সম্ভাবনাময় খাত। রয়েছে বিশাল আন্তর্জাতিক বাজার। ওয়ালটনের টার্গেট- বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ কম্প্রেসর রপ্তানিকারক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা।
তিনি আরো জানান, বিশ্বের প্রায় ৩৫টি দেশে প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানি হচ্ছে। ওয়ালটন পণ্যের ডিজাইন, উৎপাদন, উচ্চ গুণগতমান এবং বৈশ্বিক বিপণন নিয়ে কাজ করছেন ইতালি, জাপান ও দক্ষিন কোরিয়ার বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা প্রকৌশলীরা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এশিয়ার ৮ম ও বিশ্বের ১৫তম কম্প্রেসর উৎপাদনকারি দেশ। বাংলাদেশের একমাত্র কম্প্রেসর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। যার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৪ মিলিয়ন। ২০২৫ সালের মধ্যে উৎপাদন সক্ষমতা ১০ মিলিয়নে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। শুরু থেকেই জার্মানভিত্তিক বিশ্বের একটি খ্যাতনামা কম্প্রেসর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ যন্ত্রাংশ নিচ্ছে।