তার অবয়ব সম্পূর্ণ মানুষের মতো। নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে তবে সে রোবট৷ বর্তমান সময়ের বিস্ময়কর আবিষ্কার সোফিয়া রোবট কে চেনো না এমন কেউ নেই । প্রযুক্তিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ একটা অটোরিকশাচালক সকলে চেনে রোবট সোফিয়াকে৷
কি ভাবছেন, আজকের আর্টিকেল সোফিয়াকে নিয়ে? নাহ! আজকের আর্টিকেল আমাদের বংলাদেশের সোফিয়াকে নিয়ে।
বাংলাদেশের রোবট রিবোকে আর কয়জন চেনেন? আপনারা খুব কম মানুষই আছে যারা বিশ্বের প্রথম বাংলাভাষী রোবট রিবোকে চেনেন।
আজকের এই আর্টিকেলের আমরা জানবো বিশ্বের প্রথম বাংলা ভাষাযভাষী রোবট রিবোকে ।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু স্বপ্নবাজ যুবকের হাতে করে ওঠে রিবো নামের বাংলাদেশের প্রথম বাংলাভাষী সোসিয়াল রোবট । বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে, কেউ বাংলায় প্রশ্ন করলে সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। তার পাশাপাশি হ্যান্ডশেক করতে পারে৷
বেশ কিছুদিন আগে হংকংয়ের তৈরি রোবট সোফিয়া আমাদের দেশ থেকে ঘুরে গেল । তাকে দেখার জন্য সবার হুলুস্থুল৷ অথচ সমসাময়িক(কিছু দিন আগে) দেশে তৈরি হয়েছিল রোবট যেটা কিনা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে৷
তবে এই রোবট নিয়ে তেমন মাতামাতি হয়নি।বিষয়টি নজর এড়িয়ে যায়নি বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদ্যার৷
বাংলাদেশের সর্ব প্রথম রোবট রিবো তৈরীর সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই ডিপার্টমেন্টের সাবেক অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।
চলুন জেনে নেওয়া যাক শুরুর গল্পটা!
২০১৩ সালের দিকে রোবো সাস্ট নামের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়৷ যেটি মূলত রোবটিক্স নিয়ে কাজ করতো । তাদের আশা ছিল ভবিষ্যতে যদি তারা বড় ধরনের কোন ফান্ড পায় তাহলে তাদের কাজের অগ্রগতি হবে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সাইন্স ফিকশন সোসাইটি তাদের বার্ষিক অনুষ্ঠানে একটি প্রদর্শনী দেখানোর জন্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবো প্রজেক্ট কে ১ লাখ অনুদান প্রদান করেন। রোবো সাস্টের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্নধর্মী একটি রোবট তৈরি করা । রোবট তৈরি করার কনসেপ্ট বা সাধারণ ধারণাটি তাদের কাছে বেশ স্পষ্ট ছিল । তবে তারা ভিন্নধর্মী একটি রোবট তৈরি করার আগ্রহ প্রকাশ করে৷ সবাই মিলে চিন্তাভাবনা করে ঠিক করে, ” আচ্ছা এমন একটি রোবট তৈরি করা যেতে পারর যেটি আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারবে। তাহলে কেমন হয়? এবং সেই চিন্তা ভাবনা থেকে উঠে আসে রিবো।
রিবোর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে । বাংলাদেশের প্রথম সোশ্যাল রোবট শুধুমাত্র বাংলাতে কথা বলতে পারবে ব্যাপারটা তেমন নয়। এর পাশাপাশি বাংলাতে লিখতে সক্ষম রিবো৷
বাংলাদেশের প্রথম সোশ্যাল রোবট তৈরি করার জন্য বাংলাদেশ সাইন্স ফিকশন সোসাইটি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবো সাস্টকে অনুদান হিসেবে প্রদান করেছিল এক লাখ টাকা। তবে রোবট তৈরিতে খরচ হয়েছিল ১০ হাজার টাকা।
বাংলা কথা এবং বাংলায় লেখা ছাড়াও অন্যদের সাথে হ্যান্ডশেক করতে পারে এবং তার পাশাপাশি বাংলা গানের তালে তালে নাচতে পারে।
রোবটটির কারিগরদের ইচ্ছা রয়েছে অদূর ভবিষ্যতে মুখের কিছু ভঙ্গিমা যোগ করা। যেমন হাসা, কাদা নিজের অনুভূতিকে প্রকাশ করা রাগ দেখানো, স্বভাব, চলন, ভঙ্গি ইত্যাদি এবং এর কারণে প্রতিনিয়ত তো রোবট সাস্ট প্রজেক্টে কাজ করে চলেছে। তবে রিবো অন্যদের সাথে কথা বলার সময় নিজের অঙ্গভঙ্গি প্রকাশ করতে পারে। হাত দিয়ে কোন কিছু দেখিয়ে দিতে পারে । এছাড়াও হাত নেড়ে তার মনোভাব প্রকাশ করতে পারে । তার পাশাপাশি ঘাড় নাড়াতে পারে । বাংলা কথা বলার সময় মুখের জরতা একদম থাকে না বললেই চলে৷ রিবোর ভয়েস শুনতে বাংলা গুগোল টেক্সট টু ভয়েজ এর মতো।
অবশ্য এই রোবটটির পূর্বেও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট প্রযুক্তির আরো দুইটি রোবট তৈরি করে তবে৷ সেগুলো তেমন জনপ্রিয়তা পায় না৷
রোবটটির কারিগরদের আশা অদূর ভবিষ্যতে রোবট রিবোকে নিয়ে আরো কাজ করা হবে । তার পাশাপাশি রিবো কে কিভাবে আরো ডেভলপ করা যায় সেই বিষয়ে যথেষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে তাদের৷