করোনা পরিস্থিতে কাজের ক্ষেত্রে অনলাইনে মিটিং ও প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বিভিন্ন প্লাটফর্মের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর ব্যবহার ভবিষ্যতেও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন। এই প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে দেশীয় প্রযুক্তি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি বিশ্বমানের একটি ভিডিও কনফারেন্স প্লাটফর্ম নিয়ে আসতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির আরএনডি শাখা ইতোমধ্যে তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সন্নিকটে রয়েছে।
বর্তমানে যে সকল ওপেন সোর্স প্লাটফর্ম রয়েছে সেগুলো ২০ জনের বেশি কোন লোড নিতে পারে না, সাথে যুক্ত হয় অসম্ভব যন্ত্রণাদায়ক শব্দ এবং এর কোনটাতেই কোন অডিও সিস্টেম নিয়ে কাজ করা যায় না। এছাড়া এগুলোতে ৪/৫ জনের কনফারেন্স ভাল হয়, কিন্তু ১০/১৫ জনের বেশি হলে আর পারে না। ওপেন সোর্স প্লাটফর্ম এর পাশাপাশি বর্তমানে জুম, গোটুমিটিং, ব্লুজিন্স এর মত প্লাটফর্ম রয়েছে যা সারা বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো থাকার পরও ভিডিও কনফারেন্স প্লাটফর্ম নিয়ে কাজ করার কারণ জানতে চাইলে সিনেসিস আইটির গ্রুপ সিইও জনাব রূপায়ন চৌধুরী বলেন, “আমাদের প্লাটফর্মে মৌলিক এমন কিছু থাকবে যা ব্যবহারকারিদের অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা দিবে। আমরা কয়েকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রেখে কাজ শুরু করি, সেগুলো হচ্ছে একটা ভিডিও মিটিং এ ১২০০ এর মত অংশগ্রহণকারী থাকবে, অডিও বা সাউন্ড কোয়ালিটি হবে অসম্ভব উচ্চমানের। ব্যবহারকারিরা তাদের পিসি থেকে খুবই কম ব্যান্ডউইথ এ অনায়াসে এইচ-ডি কোয়ালিটির ওয়েব মিটিং করতে পারবেন যা কিনা ব্যবহারকারিদের জন্য অনেক সাশ্রয়ী হবে। এছাড়া, এই ধরণের প্লাটফর্ম ব্যবহারকারিদের জন্য উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল – ইনফর্মেশন এবং সাইবার সিকিউরিটি। আমারা এই সিস্টেমটির প্রতিটি জায়গায় সিনেসিস আইটির নিজস্ব এবং উচ্চ শক্তিশালী সিকিউরিটি সিস্টেম ব্যবহার করছি। উল্লেক্ষ্য যে, উচ্চ মানের এবং শক্তিশালী ইনফর্মেশন সিকিউরিটি সিস্টেম ব্যবহারের জন্য সিনেসিস আইটি ইতোমধ্যেই আই-এস-ও ২৭০০১ সনদ লাভ করেছে।
প্লাটফর্মটি সম্পর্কে সিনেসিস আইটি’র মার্কেটিং এবং প্রোডাক্ট ইনোভেশন বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার জনাব কাজী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান “এটি শুধুমাত্র একটি ভিডিও কনফৈরেন্সিং প্লাটফর্ম না বরং এটি আগামীদিনের একটি কোলাবোরেশন এবং ব্যবহারকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বিশ্লেষণের একটি মৌলিক প্লাটফর্ম হবে, এই ধরণের কনসেপ্ট নিয়ে একসাথে তিনদেশ – অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিজ্ঞ তিনটি টিম একসঙ্গে কাজ শুরু করে। এই প্লাটফর্মটিতে আরও থাকছে ই-হেল্থ, ই-লার্নিং এবং ই-গভর্নেন্স এর জন্য বিশেষ ধরণের ফিচার এবং আরও অন্যান্য নানা সুবিধাসমূহ। এছাড়াও, এতে যোগ হতে যাচ্ছে “আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা” যা ব্যবহারকারিদের এই প্লাটফর্মটি ব্যাবহারে এনে দিবে আরও নানা ধরণের সুযোগ-সুবিধা”।
এক প্রশ্নের উত্তরে সিনেসিস আইটি’র গবেষণা এবং প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান জনাব বিজন কুমার ধর বলেন, “যদিও শুরুতে আমাদের বেশ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে কারন অনেকেই বলেছেন এটা কাগজে কলমে সম্ভব, বাস্তবে নয়। একটু সফলতা আবার ব্যর্থতা এভাবে আমাদের কাজ এগিয়ে গেছে এবং আমরা আশা হারাই নি। আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে সবাইকে জানাতে চাই, আমরা আমাদের যে লক্ষ্য তার খুব কাছেই আছি। সম্প্রতি আমাদের একটি টেস্টে ১০০ জনের একটি ভিডিও কনফারেন্স শেষ করি এবং সবার অভিজ্ঞতা বেশ ভালো ছিল। এখানে ১০০ জনে ৬৪ কোরের সার্ভারের মাত্র ৫% ব্যবহার হয়েছে। ব্যান্ডউইথের ব্যবহার খুবই সন্তোষজনক হলেও ব্যবহারকারিদের কথা মাথায় রেখে সিস্টেমটিকে আরও উন্নত করা হচ্ছে। এটি যে ইঞ্জিন তাতে অনায়াসে ৫০০ জনের একটা মিটিং করা যাবে। আমরা প্লাটফর্মটি নিয়ে এমন ভাবে কাজ করছি যেন ১২০০ জনের একটি মিটিং অনায়াসে করা যায় যেখানে জুম সর্বচ্চো সুবিধা দিচ্ছে ১০০০ জনের।
ব্যবসায়িক প্রসার এবং কর্মপরিধি বিস্তারের কারণে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সিনেসিস আইটি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়াতেও প্রতিষ্ঠান রেজিস্টার করে। এই ভিডিও প্ল্যাটফর্ম নিয়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি তাদের প্রথম টার্গেট মার্কেট হবে যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়া। আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে তারা এটি নিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।