ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, পৃথিবীতে বাঙালির মেধা, মনন, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস অনন্য।
তিনি বলেন, ‘বাঙালি চতুর্থ কিংবা পঞ্চম বৃহত্তম ভাষাভাষী জাতিই নয়, শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ রাখে।’
মন্ত্রী রোববার রাতে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কলকাতায় বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের কলকাতা ভিত্তিক সংগঠন ‘বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড’ কর্তৃক মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীষ সুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ডা. জিয়াউদ্দিন, বাংলাদেশের রণাঙ্গণের সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত ভারতীয় সাংবাদিক ড. পার্থ চ্যাটার্জি ও সাংবাদিক বিকাশ চৌধুরী এবং কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাই- কমিশনের প্রথম সচিব (প্রেস) মোফাকখারুল ইকবাল বক্তৃতা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণের বিশেষ অবদান গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের মানুষের জন্য যে ত্যাগ আপনারা স্বীকার করেছেন, যে ভাবে পাশে থেকেছেন তা ইতিহাসে বিরল।’
তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি উল্লেখ করে বলেন, পৃথিবীর সকল বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু আসন করে নিয়েছেন।
তিনি মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর যে সকল সদস্য জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার বলেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যে বাংলাদেশ দেখছি, তাতে মনে হয় একাত্তরে যে যুদ্ধে গিয়েছিলাম সেটা না করলে জীবনে বড় ভুল হতো। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর দেশ হয়ত স্বাধীনতা না পেলে রেখে যেতে পারতাম না।
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ডিজিটাল প্রযুক্তিসহ দেশের সার্বিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর এবং ২০০১ সাল পরবর্তী ৮ বছর বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ধারায় ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বে পশ্চাদপদতার সকল জঞ্জাল দূর করে বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশের অভাবনীয় সফলতা আজ বিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ হ্যানরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ নয়, বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়।
মন্ত্রী বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডকে বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মিলনের সেতুবন্ধন উল্লেখ করে বলেন, ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামে ইন্টারনেটে বাংলাভাষা নিয়ে বিদ্যমান জটিলতা দুই বাংলার সহযোগিতায় অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি। এ ব্যাপারে মন্ত্রী পশ্চিম বঙ্গের পবিত্র সরকারের ভূমিকা গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।
বক্তারা একাত্তরে বাংলাদেশের রণাঙ্গণে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তাদের প্রাণবন্ত বর্ণনায় যুদ্ধের দিনগুলোর চিত্র ভেসে আসে যা শ্রোতা থেকে বক্তা প্রত্যেককেই অশ্রুসিক্ত করে।
মন্ত্রী তাদের এই বর্ণনা গুলোকে যথাযথভাবে লিপিবন্ধ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের দেখা যুদ্ধকালীন বাংলাদেশ নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে। উপস্থাপক স্নেহাশীষ সুর যুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের দু’জন সাংবাদিক পাকিস্তানীদের হাতে জীবন দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।
তিনি তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাদের আত্মত্যাগ লিপিবদ্ধ করার দাবি জানান।