গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া তথ্য মালিক সংস্থা ফেসবুক ইনকরপোরেশনের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) থেকে গ্রাহকরা এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি পেতে শুরু করেছেন। ভারতে অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস উভয় অপারেটিং সিস্টেমে চলা মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপ তার শর্ত ও গোপনীয়তার নীতি বদল করছে। এতে ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্মতি না দিলে এই অ্যাপের পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে ওই গ্রাহকের জন্য। তারা এটাও বলেছে, চাইলে যে কেউ হেল্প সেন্টারে গিয়ে তার অ্যাকাউন্ট মুছেও ফেলতে পারেন।
বিজ্ঞপ্তিটিতে তিনটি ক্ষেত্রে আপডেটের কথা উল্লেখ রয়েছে। এক. হোয়াটসঅ্যাপ পরিষেবা ও আপনার (গ্রাহকের) তথ্য আমরা যেভাবে ‘প্রসেস’ করি। দুই. ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে ফেসবুকের পরিষেবাগুলো ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট সংরক্ষণ ও ব্যবহার করতে পারবে। তিন. ফেসবুকের সঙ্গে আমাদের অংশীদারি কি ধরনের, কিভাবে ফেসবুকের অন্যান্য প্রোডাক্টকে আমরা তথ্য সরবরাহ করি।
গত কয়েক বছর ধরে আর্থিক লেনদেন পরিষেবার দিকে এগুতে চাইছে ফেসবুক। সেই লেনদেন সংক্রান্ত বার্তা বিনিময় হয় হোয়াটসঅ্যাপে। সেই সব বার্তা নিজের মতো করে ব্যবহার করতে বা রাখতে হবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে। গোপনীয়তার শর্তাবলি সেই উপযোগী করতে হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপকে। ব্যবসায়িক সংস্থাগুলোর জন্য হোয়াটসঅ্যাপের এনক্রিপটেড মেসেজ ও ফেসবুকের খোলা খাতার মধ্যে একটা স্থায়ী যোগসূত্র গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মার্ক জাকারবার্গ।
তৃতীয় পক্ষের কাছে ফেসবুকের তথ্য বিক্রির কারণে গত কয়েক বছরে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে জাকারবার্গকে। হোয়াটসঅ্যাপের জনপ্রিয়তা মূলত ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও এনক্রিপশনের কারণে। অথচ প্রতিদিন বা মাসে একবার হলেও কোনো ইমেইল অ্যাকাউন্টে যখন বার্তা ও মিডিয়া ফাইল ‘ব্যাক আপ’ করা হয়, তখন গোপন সেসব বার্তার এনক্রিপশন নামের রক্ষাকবচটি আর থাকে না।
হোয়াটসঅ্যাপ এবার সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, গ্রাহকদের নাম, ফোন নম্বর, ফোনের তথ্য, আইপি অ্যাড্রেস, গ্রাহকের বার্তা বিনিময়ের ধরন, লেনদেন তথ্যসহ অন্যান্য কিছু তথ্য তারা এখন থেকে ফেসবুকের অন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে শেয়ার করবে। এটি তারা কখনো সরাসরি করবে আবার কখনো অনুমতি নিয়ে করবে বলে জানানো হয়েছে।
ফেসবুকের তথ্য চুরির বিষয়টি নতুন কিছু নয়। এবার বিপুল সংখ্যক হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর তথ্য সরাসরি তুলে দেয়া হচ্ছে ফেসবুকের কাছে। ফেসবুক এই তথ্য নিয়ে কি করবে সেটা প্রশ্ন উঠেছে গ্রাহকদের অনেকের ভেতর।
ফেসবুক পেমেন্টস ইনকর্পোরেশনের প্রয়োজনের কথা আগেই বলা হয়েছে। এছাড়া ওনাভো, ওকুলাস, ক্রাউডট্যাঙ্গল নামে বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা রয়েছে ফেসবুকের। ওকুলাস অনলাইন গেম সংক্রান্ত সংস্থা। ক্রাউডট্যাঙ্গল একটি অনুসন্ধানী সংস্থা। নিরন্তর খুঁজে চলেছে, কোথায় কী হচ্ছে, কোনটা খবর হতে পারে, কার কথার গুরুত্ব কতটা, আমেরিকার নির্বাচনে কী হচ্ছে, রাশিয়ার কী প্রভাব আফ্রিকায়- এমন হাজারো বিষয় ঘেঁটে কোনো প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি নিখুঁত লক্ষ্যে তীর ছুড়তে সাহায্য করে এরা।
এনবিসি নিউজ কোন খবরকে জাতীয় স্তরে দেবে নাকি সাধারণভাবে উপস্থাপন করবে সেক্ষেত্রে এই অ্যাপের সাহায্য নেয় তারা। করোনায় কারা পিছিয়ে গেল, কি পদক্ষেপ নিলে প্রভাব বেশি হবে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে ক্রাউডট্যাঙ্গল।