শর্ট ভিডিও তৈরির সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম টিকটকের ভারতীয় কার্যক্রম বেচতে চায় প্যারেন্ট প্রতিষ্ঠান বাইটডান্স। এরই মধ্যে চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে ভারতে টিকটকের প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপ ‘গ্ল্যান্স’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। ভারতে টিকটক অ্যাপ ব্যবহারে স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দেশটিতে লাখ লাখ ব্যবহারকারী হারানোয় কার্যক্রম বেচতে চাইছে টিকটক। খবর ব্লুমবার্গ।
গত বছর জুনের শেষদিকে চীনের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার জেরে ভারতে বিভিন্ন মহল থেকে চীনা পণ্য বর্জনের ডাক ওঠে। সোস্যাল মিডিয়ায় চীনা অ্যাপ আনইনস্টলেরও দাবি জানান অনেকে। টিকটক, ইউসি ব্রাউজার, শেয়ারইট, বিগো লাইভ ও হেলোর মতো ৫৯টি জনপ্রিয় অ্যাপসহ দুই শতাধিক অ্যাপ নিষিদ্ধের মধ্য দিয়ে সে পথেই হাঁটে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। অ্যাপগুলোকে দেশটির সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা, প্রতিরক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি উল্লেখ করা হয়।
ভারত সরকারের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে বলা হয়, চীনা অ্যাপগুলো দেশ ও দেশের নাগরিকদের জন্য বিপজ্জনক। যে কারণে স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটসহ সব ধরনের গ্যাজেটে অ্যাপগুলোর ব্যবহার স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হলো। ভারতীয়দের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষাদান এবং দেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্যই অ্যাপগুলো স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার পর বিবৃতিতে টিকটক জানায়, গত সাত মাসে ভারতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সমাধান সম্পর্কে সরকারের প্রতিক্রিয়ার অভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে জনবল কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভারতে প্রতিষ্ঠানটির ২ হাজারের বেশি কর্মী রয়েছে। একই সঙ্গে বিবৃতিতে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়, লাখ লাখ ব্যবহারকারী, শিল্পী, গল্পকার, শিক্ষাবিদ ও অভিনয়শিল্পীদের সমর্থনের মাধ্যমে টিকটক ভারতে পুনরায় কার্যক্রম চালু করার সুযোগ পাবে।
চীনের দাবি, নয়াদিল্লি জাতীয় সুরক্ষার বিষয়টিকে চীনা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিষিদ্ধ করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। চীন সরকার বাইদু, টিকটক ও অন্যান্য জনপ্রিয় চীনা অ্যাপগুলো নিষিদ্ধ করায় ভারতীয় পদক্ষেপের সমালোচনা করে এবং নয়াদিল্লিকে পুনরায় ট্র্যাকে ফিরে এসে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আবেদন জানায়।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গাও ফেং বলেন, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যে কোনো বৈষম্যপূর্ণ নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিরোধিতা করে চীন। চীনা অ্যাপগুলো জাতীয় সুরক্ষার হুমকি হতে পারে ভারতের এমন অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি গাও। তবে তিনি বলেন, বেইজিং তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশের বাইরে আইন মেনে চলার পরামর্শ দেয়।
গাও ফেং বলেন, চীন-ভারত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা দুই দেশের জনগণের জন্যই অভিন্ন প্রত্যাশা। বেইজিং আশা করছে, নয়াদিল্লি চীনা সংস্থাগুলোর জন্য একটি উন্মুক্ত, সুষ্ঠু ও বৈষম্যহীন ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি করবে। এর মাধ্যমে চীন-ভারত দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা যত দ্রুত সম্ভব ট্র্যাকের দিকে ফিরে আসবে।
টিকটকের প্যারেন্ট কোম্পানি চীনা ইন্টারনেট কোম্পানি বাইটডান্স। শর্ট ভিডিও তৈরির সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপ টিকটক দিয়ে ব্যাপক পরিচিতি পায় প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি টিকটকের নিরাপত্তা দুর্বলতার কারণে বিশ্বজুড়ে তীব্র বিতর্কের মুখে রয়েছে। তথ্য নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই সম্প্রতি মোবাইল পেমেন্ট সেবা খাতে নাম লিখিয়েছে বাইটডান্স। মূলত ই-কমার্স ব্যবসা জোরদারের অংশ হিসেবে চীনে ‘ডুইন পে’ নামে মোবাইল পেমেন্ট সেবা চালু করে প্রতিষ্ঠানটি।
গত বছর টিকটকসহ ৫৯ চীনা অ্যাপে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ভারতীয় সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চীনা অ্যাপগুলো বন্ধের সুপারিশ পেয়েছিল। অ্যাপ বন্ধ ছাড়াও ভারত সরকার দেশে চীনা কোম্পানির ফোরজি নেটওয়ার্ক হালনাগাদ ও রেলওয়ে নেটওয়ার্কের চুক্তি বাতিল করেছে। এছাড়া ই-কমার্স প্লাটফর্মগুলোয় চীনা পণ্য বিক্রি বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে।