‘সনি’ ব্র্যান্ডের নামের সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। এই নামটি শুনলে অনেকের মাথায় প্রথমে যে জিনিসগুলো আসে সেগুলো হচ্ছে টিভি, ক্যামেরা অথবা প্লে স্টেশন। মূলত সনি এমন একটি ব্র্যান্ড, যেটি আমাদের দৈনন্দিন কাজে সাথে রিলেটেড। অনেক যুগ ধরেই ‘সনি’ তাদের সেরা কিছু ইলেকট্রনিকস পন্য দিয়ে আমাদের সন্তুষ্ট করে আসছে। বর্তমানে ‘সনি’ তাদের পন্য সামগ্রীতে অনেক পরিবর্তন এনেছে। যাই হোক, এই ‘সনি’র ইতিহাসের ব্যাপারে অনেকেই হয়তো জানেনা। অনেকেই জানেনা ‘সনি’ সফলতার পাশাপাশি দেখেছে ক্ষতির মুদ্রার ওপিঠ। আজ আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো ‘সনি’ কিভাবে আজকের এই অবস্থানে এসেছে এবং তাদের সফলতার কাহিনী। তো চলুন নিচে গিয়ে জেনে আসা যাক বিস্তারিতঃ⤵
‘সনি’ নামটির সূত্রপাত হয় ১৯৫৮ সালে। ১৯৬০ সালে ‘সনি’র কো ফাউন্ডার ‘আকিও মোরিতা’ আমেরিকাতে ‘সনি’র প্রথম সাবসিটারী প্রতিষ্ঠা করেন। যেটি আমেরিকাতে, জাপানে তৈরী হওয়া প্রোডাক্টসগুলোর ব্যাপারে একটি ভালো ধারনা সৃষ্টি করতো। সে বছরই বিশ্বে প্রথম ‘সনি’ অল ট্রাঞ্জেস্টার পোর্টেবল টেলিভিশন বাজারে নিয়ে আসে। ১৯৬৮ সালে তারা প্রথমবারের মতো বাজারে নিয়ে আসে কালার টেলিভিশন। এর মাধ্যমে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সেরা টেলিভিশন ম্যানুফ্যাকচারারের খেতাবটি ‘সনি’র দখলে ছিলো।
১৯৬৯ সালে একটি কম্প্যাক্ট কেসেট রেকর্ডার বের করে ‘সনি’। কিছুদিন পর তারা নতুন করে বিশ্বের প্রথম কমার্শিয়াল ভিডিও কেসেট রেকর্ডারের একটি অটোটেপ রিলিজ করে।
১৯৭৩ সালে ইলেকট্রনিকস কেটাগরিতে এগিয়ে থাকার জন্য ‘সনি’ একটি অ্যাওয়ার্ড পায়। ১৯৭৯ সালে প্রথমবারের মতো ‘স্টেইরিও ক্যাসেট প্লেয়ার, ওয়াকম্যান’ নিয়ে আসে। যেটি ছিলো বিশ্বের প্রথম পোর্টেবল ক্যাসেট প্লেয়ার।
১৯৮১ সালে ‘সনি’ ব্র্যান্ড ‘ফিলিপস’ এর সাথে পার্টনারশিপ করে ‘কম্প্যাক্ট ডিস প্লেয়ার’ রিলিজ করে বাজারে।
১৯৯৪ সালে তারা লঞ্চ করে ‘প্লে স্টেশন ১’। যেটি তখন ১০৪ মিলিওন ইউনিট বিক্রি করা হয়। তবে, ২০০০ সালে লঞ্চ হওয়া ‘সনি প্লে স্টেশন ২’ ছিলো ‘সনি’র অন্যতম সফল একটি ইলেকট্রনিকস পন্য।
২০০১ সালে ‘এরিকসন’ কোম্পানির সাথে যৌথ উদ্যোগে ‘সনি’ তাদের মোবাইল ডিভিশন ‘সনি এরিকসন মোবাইল কমিউনিকেশন’ প্রতিষ্ঠা করে। যে ফোনগুলো অনেক চাহিদা পায় ক্রেতাদের কাছে। আস্তে আস্তে তারা এগিয়ে যেতে থাকে অনেক উপরে। এরপর আস্তে আস্তে তারা বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস তৈরী করে মার্কেটে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে।
কিন্তু, কেউই চিরদিন সফলভাবে থাকতে পারেনা। বিশেষ করে তাদের টেলিভিশনের চাহিদা বর্তমানে খুব কম। এর কারন বাজারে অন্য ব্র্যান্ডের আকর্ষণ।
যে কারনে ‘সনি’র টেলিভিশন সেক্টরের লভ্যাংশ কমে যেতে শুরু করে। স্মার্টফোনের দিক দিয়েও ব্যার্থতা লাভ করেছে ‘সনি’। ‘সনি’ ২০১১ সালে তাদের ‘এক্সপেরিয়া’ মডেল লঞ্চ করেছিলো হতে চেয়েছিলো মোবাইল জগৎের রাজা। যে কারনে তারা শুধু প্রিমিয়াম ধরনের স্মার্টফোনই বাজারে আনতে থাকে। যেগুলোর দাম অনেক বেশি। কিন্তু, তখন অন্যান্য স্মার্টফোন ব্র্যান্ড আরও কম দাম ভালো কিছু অফার করার কারনে, সেখানেও বেশি একটা লাভের দেখা পায়নি তারা।
‘সনি’র এরকম অনেক ডিভাইস তৈরী করেছিলো তারা। যেগুলো দেখতে অসাধারণ হলেও দাম বিবেচনায় এবং কম্পেটেটিভ পর্যায়ের কারনে মার্কেট হারাতে শুরু করে ‘সনি’। কিন্তু, এরপরেও তারা থেমে থাকেনি।
২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ‘প্লে স্টেশন ৪’ এর ১০২ মিলিওন ইউনিট বিক্রি করতে সক্ষম হয় ‘সনি’। সম্প্রতি তারা ‘প্লে স্টেশন ৫’ লঞ্চ করেছে বাজারে। এছাড়াও তাদের কিছু গেইম পার্সেজ সিস্টেমের কারনে তারা তাদের নিজেদের বাজারে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলো।
২০১৮ তে বিভিন্ন ভালো মানের ডিএসএলআর ক্যামেরা বাজারে এনেও অনেক লাভ করেছে ‘সনি’। ‘সনি’র ক্যামেরা সেন্সর বর্তমানে অনেক স্মার্টফোনেই ব্যাবহার করা হয়। এছাড়া তাদের ভালো কোয়ালিটির ক্যামেরা দিয়ে হলিউডের বিভিন্ন সিনেমার শ্যুটিং এবং সেসব সিনেমার ভিডিওগ্রাফিক স্পন্সরও তারা হয়ে থাকে।