অ্যাপল ইনকরপোরেশন ও স্যামসাংয়ের মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ফাইভজি নেটওয়ার্কের জন্য রয়্যালটি আদায় করবে হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কোম্পানি। আগামী প্রজন্মের এ নেটওয়ার্কের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী চীনা প্রতিষ্ঠানটি তাদের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। খবর ব্লুমবার্গ
বিশ্বের বৃহৎ টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা হুয়াওয়ে। পাশাপাশি দ্বিতীয় শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতার তকমাটিও তাদের দখলে। বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য গত কয়েক বছরে প্রতিষ্ঠানটি ফাইভজি অবকাঠামো বৃদ্ধি করেই চলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী প্রজন্মের এ নেটওয়ার্কের একচ্ছত্র আধিপত্যও তাদের দখলে থাকবে। আধিপত্য বাড়াতে অন্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় কম, তবে যৌক্তিক ফি আরোপের চিন্তা করছে তারা।
ফাইভজি নেটওয়ার্ক পেটেন্টের সবচেয়ে বৃহৎ পোর্টফোলিও এখন হুয়াওয়ের দখলে। যে কারণে আইফোন নির্মাতা অ্যাপল ও স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি এখন আলোচনায় যেতে চায়। উদ্দেশ্য যৌক্তিকভাবে পেটেন্ট বা স্বত্বের ফি আদায় করা।
হুয়াওয়ের চিফ লিগ্যাল অফিসার সং লিউওপিং জানিয়েছেন, তারা এখন আলোচনার মাধ্যমে ক্রস লাইসেন্সিংয়ের জন্য ফি আদায়ের কথা ভাবছে। তবে এটি অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান কোয়ালকম ইনকরপোরেশন, এরিকসন ও নকিয়ার চেয়ে কম হবে।
চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের লাগাম টেনে ধরতে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চক্ষুশূল ছিল প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির ওপরএকের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ট্রাম্প সরকার। মার্কিন বাজারে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি মিত্র দেশগুলোতেও হুয়াওয়ের ফাইভজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন ট্রাম্প।
তবে হুয়াওয়ে তাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে অপ্রতিরোধ্য। হুয়াওয়ের শীর্ষ নির্বাহীরা বলছেন, তারা ২০২১ সালের মধ্যেই ফাইভজি নেটওয়ার্কের পেটেন্ট থেকে ১২০ কোটি থেকে ১৩০ কোটি ডলার আদায় করবে। হুয়াওয়ের মেধাসম্পদ সুরক্ষা বিভাগের প্রধান জ্যাসন ডিং জানিয়েছেন, ফাইভজি নেটওয়ার্কের রয়্যালটি হিসেবে স্মার্টফোনপ্রতি ২ ডলার ৫০ সেন্ট করে আদায় করবে তারা।
রাজস্ব আয়ের দিক থেকে চীনের বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। প্রতিষ্ঠানটি এখন কানেকটেড কার, স্মার্টহোম ও রোবোটিক সার্জারির মতো খাতগুলোতেও নিজেদের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করতে চায়। এজন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ওঠার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ এটির ফলে বাইরের দেশগুলোতে প্রতিষ্ঠানটির ফাইভজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ বেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
একই কারণে ফাইভজি নেটওয়ার্কের রয়্যালটি আদায়ের ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয়ভাবে এগোতে চায় হুয়াওয়ে। জ্যাসন ডিং বলছেন, পানি পরিমাপক যন্ত্র থেকে শুরু করে স্মার্ট কার, সব ধরনের ফাইভজি প্রযুক্তি পণ্য থেকেই তারা রয়্যালটি আদায় করবে। এখন পর্যন্ত সেটি কত হবে, তা নিশ্চিত হয়নি। তবে স্মার্টফেনের ক্ষেত্রে এটির পরিমাণ হবে ২ ডলার ৫০ সেন্ট।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতার শেষের দিকে এসে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে একের পর এক আগ্রাসী পদক্ষেপ নেয়। এর ফলে জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটির ফাইভজি নেটওয়ার্কের অনেক চুক্তি হাতছাড়া হয়ে যায়। বিশেষ করে কানাডাসহ অনেক দেশে নিজেদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ নকিয়া ও এরিকসনের কাছে হাতছাড়া হয়। বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পরও হুয়াওয়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এ চাপ অব্যাহত রয়েছে।
তবে তা সত্ত্বেও হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রাকে আগ্রাসীভাবে এগিয়ে নিতে চায়। এজন্য যাতায়াত, কৃষি, উৎপাদনসহ শিল্প খাতের প্রযুক্তি পণ্যের নিজেদের হিস্যা আরো বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটি যদি প্রতিদ্বন্দ্বী শাওমি করপোরেশন, লেনোভো গ্রুপ লিমিটেড ও অপোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে রয়্যালটি আদায় করতে পারে, তাহলে তাদের ফাইভজি নেটওয়ার্কের প্রবৃদ্ধি নতুন উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছবে।