মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বিকাশের গ্রাহকরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন অনুযায়ী ক্যাশআউট চার্জ ১৮ টাকা ৫০ পয়সা হলেও এজেন্টরা গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করছে ২০ টাকা। প্রতিদিনই কয়েক লাখ গ্রাহকদের কাছ থেকে এভাবে প্রতি হাজারে ১ টাকা ৫০ পয়সা করে বেশি আদায় করায় কোটি কোটি টাকা কার হাতে যাচ্ছে সেই প্রশ্ন তুলেছেন এই খাতের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
শনিবার টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ টিআরএনবি আয়োজিত‘ প্রতিযোগিতা ও অংশীদারিত্বে প্রেক্ষাপট : প্রসঙ্গ এমএফএস সেবা’ এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এসব কথা বলা হয়।
এমএফএস সেবায় গ্রাহকের সাথে প্রতারণার বিষয়টি তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম বলেন, বলা হচ্ছে বিকাশ লস করছে। আসলে সেটি হয়তো সত্য নয়, হয়তো হিসাবে গড়মিল আছে। নাহলে আলিবাবা, ব্র্যাক ব্যাংক বিনিয়োগ করতো না। চার্জের বিষয়ে তিনি বলেন, বিকাশের ১৮ টাকা ৫০ পয়সার জায়গায় ২০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে বিকাশ ও বাংলাদেশ ব্যাংক কি কোন উদ্যোগ নিতে পারে না। এটা গ্রাহকের সাথে সুস্পষ্ট প্রতারণা ও চুরি। প্রত্যেক দিন কত পরিমাণ গ্রাহক এই প্রক্রিয়ায় ঠকছে? বিকাশের মতো একটা লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এজেন্টরা এই ক্রাইম করছে। অন্যদিকে নগদের কথা তুলে ধরে আবুল কাশেম বলেন, নগদ বলছে ক্যাশআউট চার্জ ৯ টাকা ৯৯ পয়সা। এক পয়সা কি ফেরত দেয়া হয়? এটাও এক ধরণের প্রতারণা বা অতিচালাকি। সাধারণ মানুষের সাথে চিটিং।
সেন্ট মানিতে টাকা কাটার বিষয়ে আবুল কাশেম জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে সেন্ট মানিতে টাকা কাটা যাবে না। একজন (নগদ) শুনলেও আরেকজন (বিকাশ) সেটি শুনছে না। এটার বিহিত হওয়া দরকার।
টিআরএনবির সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক বদিউজ্জামান দিদার, এসেসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস বাংলাদেশ (এমটব) এর সভাপতি এবং রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, বিকাশের চীফ কমার্শিয়াল অফিসার মিজানুর রশিদ, রকেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মো. শিরিন, নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম ও সুপ্রীম কোর্টের ব্যারিস্টার ইফতেখার জোনায়েদ। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে।
মোস্তাফা জব্বার জানান, মানুষ জীবনযাত্রা সহজ করার জন্য সহজ জিনিস গ্রহণ করে তার উদাহরণ এমএফএস। ভবিষ্যতে ব্যাংকে ব্যাংক কর্মকর্তারা কাস্টমারের চেহারা দেখবেন কিনা সন্দেহ আছে। খরচের বিষয়ে তিনি বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কোন কিছু নির্ধারণ করে দেয়া মানে তার বিকাশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন। যে কোম্পানি চার্জ নির্ধারণ করে তা তার প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার সক্ষমতার কথা বিবেচনা করে। কেউ সর্বোচ্চ চার্জ করেও টিকে থাকে আবার কেউ সর্বনিম্ন করেও হারিয়ে যায়। আমি সর্বোচ্চ নির্ধারণ করার পক্ষে সর্বনিম্নের পক্ষে না। কারণ সর্বনিম্ন করে দিলে জনগণকে সেটা বাধ্য হয়ে দিতে হয়। মিনিমাম লিমিট দেয়া না থাহলে তালে কোন না কোন প্রতিষ্ঠান তার নিচেও সেবা দিতে পারে। তাহলে জনগণ উপকৃত হবে। আর গ্রাহকরা খরচের অভিযোগ করে না কারণ আগে যে কাজ যে টাকা খরচ করে করতো সেটার সাথে তুলনা করে দেখছে এমএফএসে সেটি কম হচ্ছে। তবে সমস্যা, সঙ্কট আছে। এজন্য কর্তৃপক্ষ আছে। যাদের যা দায়িত্ব পালন করা দরকার সেটা করে মানুষের কষ্ট দুরবস্থার জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। আমরা ডিজিটালাইজেশন আমাদের প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করবো।
মন্ত্রী বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি তবে কেউ যাতে মনোপলি করতে না পারে সেটি লক্ষ্য রাখছি। যাতে এককভাবে কেউ বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। তবে প্রতিযোগিতা না থাকলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মানুষ। প্রতিযোগিতা অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখবো মনোপলি হতে দিবো না।
শ্যাম সুন্দর শিকদার জানান, বিকাশের ক্যাশ আউটে ১৮ টাকা ৫০ পয়সার জায়গায় ২০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চুরি, প্রতারণা হচ্ছে। কার কাছে এটা চলে যাচ্ছে। অপারেটররা আয়-ব্যয়ের হিসেব দিচ্ছে না। চার্জের বিষয়ে তিনি বলেন, চার্জ কমালে মার্কেট নষ্ট হবে তা ঠিক নয়। মার্কেট পজিশন গাইড করবে অপারেটরদের কখন কোন জায়গায় রেট দাঁড়াবে। কস্ট কমানোর সুযোগ আছে। বিকাশও জানিয়েছে তাদের আপত্তি নেই। সরকার বিবেচনা করে করতে পারে।বিটিআরসির কিছু দায়ের কথা বলা হয়েছে। বিটিআরসির কিছু দায় আছে। বিটিআরসি দায়িত্ব যথাসময়ে জনস্বার্থে পালন করবে।
বদিউজ্জামান দিদার জানান, কেউ নির্ধারিত রেটের চেয়ে বেশি নিতে পারবে না। আগে ২ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। অনেকগুলো পক্ষ এতে জড়িত। এজেন্ট, ডিস্ট্রিবিউটর, এমএনও, অপারেটর, সরকার সবার খরচটি মিলে এটি করা হয়েছে।