সারাদেশে চলছে কঠোর লকডাউন। আর এ সময়ে আমের মৌসুমে জমে উঠেছে অনলাইন ব্যবসা। গ্রাহকদের কাছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনপ্রিয় আম পাঠাতে ব্যবসায়ীরা বেছে নিয়েছেন কুরিয়ার সার্ভিসের সেবা।
কিন্তু কুরিয়ার সার্ভিসের স্বেচ্ছাচারিতায় একরকম জিম্মি হয়ে পড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাধারণ মানুষসহ অনলাইন ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছর আমের মৌসুম এলেই জেলার প্রায় সব উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠে অসংখ্য কুরিয়ার সার্ভিস। তারা আম পরিবহনের জন্য ইচ্ছেমতো টাকা নেয়। সেবাও পাওয়া যায় না ঠিকমতো।
অনলাইনে আমের ব্যবসা করেন রহনপুর উপজেলার তূর্য। অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমি গত ২৩ মে ৩০ কেজি আম সুন্দরবন কুরিয়ারের মাধ্যমে বরগুনার এক গ্রাহকের কাছে পাঠাই। আমগুলো পৌঁছাতে প্রায় চার দিন লেগেছিল। পঞ্চম দিনে গ্রাহক আম বুঝে নিতে গিয়ে দেখেন কার্টন কেটে আম বের করে নেয়া হয়েছে। ওজন করে দেখা যায়, প্রায় ৫-৬ কেজি আম সরানো হয়েছে। আমি সেদিনের পর থেকে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি।’
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেলে কানসাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ওমেক্স নামে একটি কুরিয়ারের পরিচালক ইসমাইল হোসেন বাচ্চুর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হচ্ছে গ্রাহকদের।
এ সময় অনলাইনে আমের ব্যবসায়ী রনি জানান, তিনি গত ১ জুন দুটি কার্টনে করে ওমেক্স কুরিয়ারের মাধ্যমে ৩০ কেজি আম রাজধানীর মিরপুরে পাঠান। দীর্ঘদিন পরেও আমগুলো গ্রাহকের কাছে না পৌঁছালে কুরিয়ারের কানসাট শাখায় যোগাযোগ করলে জানানো হয়, বিকেলের মধ্যে আম পেয়ে যাবেন।
তিনি বলেন, ‘সেদিন বিকেলে ২০ কেজি আম পেলেও ১০ কেজি আমের খোঁজ আজও মেলেনি। এখন সকালে গেলে বলে বিকেলে আসেন। বিকেলে গেলে বলে সকালে আসেন। এখনও আম যায়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওমেক্স কুরিয়ার এন্ড লজিস্টিকসের পরিচালক ইসমাইল হোসেন (বাচ্চু) বলেন, ‘আম পৌঁছায়নি এজন্য আমি কোম্পানির হেড অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম। তবে তারা ক্ষতিপূরণ দিতে চাননি।’
কুরিয়ারের এসব অব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। ফেসবুকে তারেক রহমান পাশা নামে একজন লিখেছেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের জননী কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপনাতে অনেক সমস্যা আছে। এর আগে অনেক মানুষের আম চুরি হয়েছে। এবার আমি ভুক্তভোগী। আমার আম চুরি হয়ে গেছে। আমরা এই কুরিয়ারে যেকোনো পণ্য আদান-প্রদানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আম নিশ্চয়ই বাইরের কেউ চুরি করবে না। তাদের ভেতরের লোকজনই করেছে। জননী কোনোভাবেই নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হতে পারে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জননী কুরিয়ার সার্ভিস কানসাট শাখার ব্যবস্থাপক সোহাগ আলী বলেন, ‘মৌসুমে প্রচুর পরিমাণ আম বুকিং হয়। গ্রাহকদের ভালো সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। তারপরেও যদি দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে সেজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।’
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার উপ-পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনেছি এবং আমাদের কাছে অনেকেই লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যারা অভিযোগ দিয়েছেন সবাই সমাধান পেয়েছেন। আমাদের অফিসে এসে অভিযোগ করতে হবে এমনটা নয়, ই-মেইলেও অভিযোগ করা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কুরিয়ার সার্ভিসের প্রতারণা ঠেকাতে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে। যাদের সরকারিভাবে অনুমোদন আছে শুধু তারাই সেবা দিতে পারবে।’