চলতি বছর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বাজার থেকে বিশ্বব্যাপী আয় বছরওয়ারি ১৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৩৪ হাজার ১৮০ কোটি ডলার দাঁড়াতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) ওয়ার্ল্ডওয়াইড সেমি-অ্যানুয়াল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ট্র্যাকার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এআই বাজারের আওতার মধ্যে রয়েছে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও সার্ভিসেস।
আইডিসির পূর্বাভাস, আগামী বছর এআই বাজারের প্রবৃদ্ধি হবে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২৪ সালের মধ্যে এ বাজার ৫০ হাজার কোটি ডলার ছোঁবে। ২০২১ সালে এআই থেকে যে আয় হচ্ছে, সেখানে তিনটি ক্যাটাগরির মধ্যে এআই সফটওয়্যারের ভূমিকা ৮৮ শতাংশ। তবে প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় আগামী কয়েক বছর এআই হার্ডওয়্যারে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি থাকবে। ২০২৩-পরবর্তী সময়ে এআই সার্ভিসেস হবে সবচেয়ে দ্রুত সম্প্রসারমাণ ক্যাটাগরি।
আইডিসির প্রাক্কলন, আগামী পাঁচ বছরে এআই প্লাটফর্মগুলোর সিএজিআর হবে ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ। সবচেয়ে শ্লথগতির প্রবৃদ্ধি থাকবে এআই সিস্টেম ইনফ্রাস্ট্রাকচার সফটওয়্যারের, পাঁচ বছরে যাদের সিএজিআর থাকবে ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে এআই সফটওয়্যার থেকে মোট আয়ের ৩৫ শতাংশ শেয়ার থাকবে তাদের। এআই অ্যাপ্লিকেশন বাজারে আগামী পাঁচ বছরে এআই সিআরএম থেকে কিছুটা শক্তিশালী থাকবে এআই ইআরএম। তবে এআই প্লাটফর্মে সবচেয়ে দ্রুতগতির বাজার থাকবে এআই লাইফসাইকেল সফটওয়্যারের।
আইডিসির এআই অ্যান্ড অটোমেশন রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট রিতু জ্যোতি বলেন, গত বছর এ খাতে আকস্মিক বিঘ্নের বিষয়টি অবশ্যই অস্বস্তিকর ছিল। কিন্তু এটা এ খাতের রূপান্তর ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার বিকাশেও ভূমিকা রেখেছে। ডিজিটাল রূপান্তরে নিকট-ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বছর ছিল ২০২০। এর ফলে এআই বাজারও অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে।
২০২০ সালে এআই সার্ভিসের বাজার ছিল ১ হাজার ৯৪০ কোটি ডলার। চলতি বছরে এ খাতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। আগামী পাঁচ বছরে এ খাতের সিএজিআর থাকবে ২১ শতাংশ। এ খাতটিকে আবার দুটি শাখায় ভাগ করা যায়; আইটি সার্ভিসেস ও বিজনেস সার্ভিসেস। দুই শাখার মধ্যে বৃহত্তম হচ্ছে আইটি সার্ভিসেস যাদের এআই সার্ভিসেস থেকে মোট আয়ে যার শেয়ার ৮০ শতাংশ। ২০২৫ সালের মধ্যে এআই সার্ভিসেস বাজারের আকার দাঁড়াতে পারে ৫ কোটি ডলার।
এআই ট্র্যাকার প্রতিবেদন প্রকাশের সময় এআই সার্ভিসেস বাজারে যুক্ত ছিল প্রায় ১৯০টির মতো কোম্পানি। এআই আইটি সেবা প্রদানে ২০২০ সালে শীর্ষ তিন কোম্পানি হচ্ছে আইবিএম, অ্যাকসেনচার ও টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস (টিসিএস)। গত বছর প্রতিটি কোম্পানিরই আয় হয়েছে শতকোটি ডলারের বেশি এবং সম্মিলিতভাবে তিন কোম্পানির বাজারশেয়ার ২৬ শতাংশ। তাদের বাইরে আরো আটটি কোম্পানি প্রত্যেকে ৫০ কোটি ডলারের বেশি আয় করেছে।
এআই খাতে সবচেয়ে কম অবদান ছিল এআই হার্ডওয়্যারের, মোট এআই বাজারে যাদের শেয়ার মাত্র ৫ শতাংশ। তবে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি দেখতে পারে এআই হার্ডওয়্যার। ২০২২ সালেও এটি থাকবে সবচেয়ে দ্রুত সম্প্রসারমাণ এআই খাত। আগামী পাঁচ বছরে এ খাতের সিএজিআর হবে ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ। হার্ডওয়্যার খাতকেও দুভাগে ভাগ করা যায়; সার্ভার ও স্টোরেজ। এআই হার্ডওয়্যারে সর্বোচ্চ ৮২ শতাংশ বাজারশেয়ার সার্ভারের। তবে আগামী পাঁচ বছরে স্টোরেজ চাঙ্গা প্রবৃদ্ধি দেখাতে পারে এবং পাঁচ বছরে তাদের সিএজিআর থাকতে পারে ২২ দশমিক ১ শতাংশ। গত বছর এআই সার্ভার বাজারে দেখা গেছে, ছয়টি কোম্পানি প্রত্যেকে ৫০ কোটি ডলার করে আয় করেছে। সেগুলো হচ্ছে ডেল, এইচপি, হুয়াওয়ে, আইবিএম, ইন্সপার ও লেনোভো। একত্রে তারা ৬২ শতাংশ বাজার শেয়ারের নিয়ন্ত্রণ রেখেছে।