যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ), জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পর এবার ভারতে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার মুখোমুখি হয়েছে অ্যাপল। মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ডেভেলপারদের ইন-অ্যাপ কেনাকাটায় অ্যাপলের লেনদেন প্লাটফর্ম ব্যবহারে বাধ্য করা এবং ৩০ শতাংশ কমিশন গ্রহণ করা। এর মাধ্যমে বাজারে একক আধিপত্য বিস্তার করছে অ্যাপল। খবর রয়টার্স।
ভারতের অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার অভিযোগের সঙ্গে ইইউর দায়ের করা অভিযোগের মিল রয়েছে। ডেভেলপারদের কাছ থেকে অ্যাপলের ৩০ শতাংশ ইন-অ্যাপ ফি নেয়া ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে গত বছর তদন্ত শুরু করে ২৭ দেশের ব্লকটি।
ভারতে অ্যাপলের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছে স্বল্প পরিচিত অলাভজনক সংস্থা টুগেদার উই ফাইট সোসাইটি। তাদের ভাষ্যে, অ্যাপ ডেভেলপার ও ক্রেতাদের খরচ বাড়িয়ে প্রতিযোগিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে অ্যাপলের ওই ৩০ শতাংশ ফি। পাশাপাশি এটি বাজারে প্রবেশের প্রতিবন্ধকতা হিসেবেও কাজ করছে।
মামলার নথিতে বলা হচ্ছে, ৩০ শতাংশ কমিশনের অস্তিত্ব থাকার মানে দাঁড়াচ্ছে কিছু অ্যাপ ডেভেলপার কখনো বাজারে পৌঁছতে পারবে না এবং এটি ভোক্তার ক্ষতির কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে।
ভারতীয় আদালত মামলা, নথি এবং পর্যালোচিত মামলার বিস্তারিত জানালেও কম্পিটিশন কমিশন অব ইন্ডিয়া’ (সিসিআই) এ রকমটি করে না। মামলা প্রসঙ্গে অ্যাপল বা সিসিআই কোনো মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, সামনের সপ্তাহগুলোতে সিসিআই মামলাটি পর্যালোচনা করে দেখবে এবং প্রয়োজনে নিজেদের তদন্ত বিভাগকে বড় মাপে তদন্ত করে দেখতে বলবে। আবার অভিযোগের কোনো ভিত্তি না পেলে গোটা মামলাটিই খারিজ করে দিতে পারে তারা।
একটি সূত্র বলছে, তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেয়ার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ ইইউও এটি নিয়ে তদন্ত করছে। মামলার বিস্তারিত প্রকাশ্য না হওয়ার কারণে তিনি নিজের পরিচয় দিতে রাজি হননি।
টুগেদার উই ফাইট সোসাইটি ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ রাজস্থানভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা। এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ভারতীয় ভোক্তা ও স্টার্টআপের স্বার্থ সংরক্ষণে মামলা করেছে তারা।
গত বছরের শেষের হিসাব অনুসারে, ভারতে মোট ৫২ কোটি স্মার্টফোনের মধ্যে অ্যাপলের আইওএস চালিত ফোন রয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। বাকি স্মার্টফোনগুলো অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম চালিত। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে ভারতে মার্কিন স্মার্টফোন জায়ান্টটির ভিত্তি দ্বিগুণ বেড়েছে।
চলতি সপ্তাহেই নতুন এক আইনে অনুমোদন দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত। ওই বিলটির বদৌলতে গুগল এবং অ্যাপল নিজ লেনদেন প্রক্রিয়া সফটওয়্যার নির্মাতাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারবে না। দক্ষিণ কোরিয়ার পদক্ষেপের পর পরই সামনে এল ভারতের মামলার খবরটি।
অ্যাপল ও গুগলের মতো কোম্পানিগুলো বলছে, তাদের গৃহীত ফি প্লাটফর্মের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও বিপণন সুবিধার জন্য। কিন্তু প্লে-স্টোর ও অ্যাপ স্টোর ব্যবহার করা অনেক প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকরা এতে একমত নন। গত বছর ভারতের বেশ কয়েকটি স্টার্টআপ গুগলের প্লে-স্টোরে উচ্চ কমিশন নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছিল। এর বিস্তৃত একটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল সিসিআই, যা এখনো চলমান রয়েছে।
সম্প্রতি ডেভেলপারদের জন্য অ্যাপ স্টোরে বিধিনিষেধ শিথিল করেছে অ্যাপল। নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই ও কিন্ডেলের মতো কিছু প্লাটফর্ম অ্যাপ স্টোরে লিংক যুক্ত করতে পারবে। এর মাধ্যমে পেইড সাবস্ক্রিপশনের জন্য অর্থ আদায় করতে পারবে তারা। অ্যাপল বলছে, অ্যাপ স্টোরে রিডার অ্যাপ জাতীয় প্লাটফর্মগুলো সরাসরি নিজেদের সাইনআপ লিংক সংযুক্ত করতে পারবে। নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই ও অ্যামাজনের কিন্ডেলের মতো অল্প কয়েকটি সেবা অ্যাপলের এ রিডার শ্রেণীভুক্ত হচ্ছে। নতুন নীতিমালায় অ্যাপ স্টোরের আর্থিক লেনদেনের প্লাটফর্ম ব্যবহার করতে হচ্ছে না। এমনকি অ্যাপ স্টোরকে মোট আয়ের ৩০ শতাংশ কমিশন দিতে হবে না। জাপানের অ্যান্টিট্রাস্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির পরিপ্রেক্ষিতে নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছে অ্যাপল।
আগামী বছরের শুরুর দিকে বৈশ্বিকভাবে নতুন নীতিমালা কার্যকর করা হচ্ছে। তবে কোন অ্যাপগুলো এ সুবিধা পাবে তা নির্ধারণের ক্ষমতা থাকছে অ্যাপলের হাতেই। কিছু কোম্পানি বলছে, অ্যাপলের এ ঘোষণা পর্যাপ্ত নয়। স্পটিফাই টেকনোলজিস এক বিবৃতিতে জানায়, সীমিত পর্যায়ে কিছু পরিবর্তন আমাদের সব সমস্যা সমাধান করছে না।