ঘরের আলো জ্বালানো থেকে শুরু করে দরজা তালা দেয়ার ক্ষেত্রে বাসাবাড়ি ও শোবার ঘরে ঢুকেছে বিভিন্ন স্মার্ট হোম ডিভাইস। করোনাকালে বাসা থেকে কাজ বৃদ্ধিতে ওয়ার্ক ফ্রম হোম টুলস হিসেবেও জায়গা করে নিচ্ছে তারা। বাজারের চাহিদার দিকে তাকিয়ে অ্যামাজন, মেটা ও গুগলের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরা ঝুঁকছে বিভিন্ন স্মার্ট হোম অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট।
পারিবারিক ও কর্মজীবনের মধ্যে ফারাক ঘুচিয়ে দিয়েছে করোনা মহামারী। ঘরে থেকে বা অফিসের বাইরে থেকে কাজ আগে যেখানে ছিল অল্প কতকের, সেখানে কভিডকালে প্রায় প্রত্যেকেই তাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এতে বিভিন্ন স্মার্ট হোম ডিভাইসের ওপর নির্ভরশীলতা আরো বেড়েছে। এখন হয়তো কোনো জরুরি ভার্চুয়াল মিটিং কিংবা ব্যস্ত শিডিউল ঠিক রাখার জন্য অনেকে নির্ভর করছে অ্যালেক্সা কিংবা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের ওপর। বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন মানুষকে কিছুটা আয়েস দিচ্ছে তেমনি বাড়িয়ে দিচ্ছে উদ্বেগও। স্মার্ট হোম ডিভাইসগুলো হয়তো অনেকের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে দিয়েছে, কায়িক পরিশ্রম কমিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তাতে নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হুমকিতে পড়ারও ঝুঁকি রয়েছে, যা ব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে বিপদে ফেলতে পারে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকেও। এজন্য বিভিন্ন স্মার্ট হোম ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতার আহ্বান রাখেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, অ্যামাজন ইকো স্পিকার, গুগল নেস্ট, থার্মোস্টেট, স্মার্ট স্মোক অ্যালার্ম থেকে শুরু করে স্মার্ট ডোরবেল এখন মূলধারার প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যেসব বাড়িতে ওয়াই-ফাই সংযোগ রয়েছে তার ৭৭ শতাংশে অন্তত একটি করে স্মার্ট হোম ডিভাইস রয়েছে। এখন কাজের প্রয়োজনেও এ স্মার্ট হোম ডিভাইসগুলো ব্যবহার করছেন ভোক্তারা। আইডিসির জরিপে অংশ নেয়া ১ হাজার ৭০০ জনের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই বলছে, তারা কাজের প্রয়োজনে নিজস্ব স্মার্ট হোম ডিভাইস ব্যবহার করতে ইচ্ছুক।
স্মার্ট হোম ডিভাইসের বাজার দ্রুত সম্প্রসারণ হওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী স্মার্ট স্পিকারের চাহিদা বেড়েছে। আগামী দিনগুলোতেও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে তা সহজেই অনুমেয়। সম্প্রতি প্রকাশিত কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০-২৫ সালের মধ্যে স্মার্ট স্পিকার বাজার প্রতি বছর গড়ে ২১ শতাংশ সম্প্রসারিত হবে।
স্মার্ট হোম ডিভাইসের ঝুঁকির দিক নিয়ে চেক পয়েন্ট সফটওয়্যারের হেড অব ইঞ্জিনিয়ারিং মার্ক অস্ট্রোভস্কি জানান, শিগগিরই হয়তো এক ব্যক্তির সঙ্গে ১০টি ডিভাইস সংযুক্ত পাব। চার সদস্যের পরিবারে এ সংখ্যা ৪০টি ছাড়াবে, যা হ্যাকারদের কাছে খুব লোভনীয় হবে বলে মনে করেন সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানির এ শীর্ষ কর্তা।
কিন্তু অনেক ঝুঁকি সত্ত্বেও বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এ খাতে বড় আকারের বিনিয়োগ করছে। অধিক গ্যাজেট নির্ভরতার সঙ্গে অধিক ঝুঁকিও আসে বলে শঙ্কার কথা জানান নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। ব্যক্তিগত ও পেশাগত তথ্য গুলিয়ে ফেলা এবং বিভিন্ন ডিভাইসে সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে ভোক্তাদের সতর্ক থাকতে বলেন তারা। বিভিন্ন ডিভাইস নির্ভরতায় হয়তো কোম্পানির সংবেদনশীল অনেক তথ্য সাইবার অপরাধীদের হাতে চলে যেতে পারে। তা ঠেকাতে কোনো ডিভাইসের প্রাইভেসি ও সিকিউরিটি নিয়ে ওয়াকিবহাল হওয়ার পাশাপাশি তার নিয়মিত আপডেট দিয়ে যেতে হবে। যে স্মার্টফোন নির্দিষ্ট সময় পর পর আপডেট নেয় না সেগুলো যেমন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে, স্মার্ট হোম ডিভাইসের জন্যও তা সত্য।