১০ বছর আগেও যদি কোনো অকালতত্ত্বজ্ঞানী বালক বলত ইউটিউবে বিজ্ঞাপন থেকে এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে, তাহলে হয়তো অনেকে চোখ কপালে তুলত। সমাজ কিংবা পরিবারের চোখে হয়তো তাকে বেকার বলেই গণ্য করা হতো। কিন্তু এখন আপনি যদি আপনার সৃজনশীল কনটেন্ট মনিটাইজ করে অর্থ কামান, বাসা ভাড়া দেন কিংবা পছন্দের গাড়িটি কেনেন, এটাকে অস্বাভাবিক চোখে দেখবে না কেউ। কারণ আপনি দ্রুত সম্প্রসারমাণ কনটেন্ট ক্রিয়েটর অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে দাঁড়িয়েছেন।
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম সিগন্যালফায়ারের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কনটেন্ট ক্রিয়েটরই এখন সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ক্ষুদ্র ব্যবসা। যদিও ক্রিয়েটর অর্থনীতি সত্যিকার অর্থে তৈরি হয়েছে এক দশক আগে, বর্তমানে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ নিজেদের ক্রিয়েটর হিসেবেই পরিচয় দিতে পছন্দ করে। এমনকি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শিশুই নভোচারীর (১১ শতাংশ) তুলনায় ইউটিউব স্টার (২৯%) হতে বেশি আগ্রহী। সুতরাং বলাই যায় যে ক্রিয়েটরদের জন্য আরো অনেক অনেক ক্ষেত্র তৈরি করছে নতুন নতুন স্টার্টআপ। এই বর্ধনশীল বাজারে অর্থ অর্জনের এটা একটা সুযোগ আর উদ্যোক্তারা সবাই চান অনেক অনেক অর্থ উপার্জন করতে।
কিন্তু সব ধরনের ব্যবসাই ক্রিয়েটরদের জন্য নয়, যেটা তারা করতে চান। গবেষকরা ক্রিয়েটরদের একটি ঝুড়িতেই সব ডিম না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। ধরা যাক এক ক্রিয়েটরের বানানো একের ভেতর সব ক্রিয়েটিভ প্লাটফর্ম বন্ধ হয়ে গেল, তাহলে কেমন হবে?
সেজন্য স্টার্টআপ ক্রিয়েটরদের একটা ব্যাকআপ পরিকল্পনা থাকতে হবে। কারণ যদি কেউ পরবর্তী প্যাট্রিয়ন না হতে পারেন তাহলে যেন ক্রিয়েটর ধ্বংসের মুখে না পড়ে।
ক্রিয়েটরদের অর্থপ্রাপ্তি সহজ করার জন্য মেম্বারশিপ প্লাটফর্ম প্যাট্রিয়ন জানিয়েছে, তাদের কাছে তিন মাসের জরুরি পরিচালনা ব্যয় আলাদা করে রাখা থাকে। কেউ ব্যর্থ হলে তারা যেন ক্রিয়েটরদের এ সময়ে অন্য প্লাটফর্মে নিয়ে যেতে পারে। আরেক প্রতিষ্ঠান ফোর্থওয়াল জানিয়েছে, যদি এমন কিছু ঘটে তাহলে তারা তাদের প্লাটফর্মকে মুক্ত উৎস বানিয়ে দেবে। কিন্তু তার পরও তা ঠিক সাহায্য করবে না।
তবে ক্রিয়েটিভ অর্থনীতির সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার জায়গা হলো, অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি এবং এ স্বাধীনতা যে বড় মূল্যের বিনিময়ে আসে সেটা উপলব্ধির মধ্যে থাকা ফারাকটা। যদিও বেশির ভাগ স্টার্টআপের লক্ষ্য মেধার সঙ্গে ব্র্যান্ড চুক্তিকে যুক্ত করা, নগদীকরণের বিভিন্ন উপাদান গঠন করা। এছাড়া নতুন নতুন সামাজিক প্লাটফর্ম তৈরি করার ক্ষেত্রে কোনো খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হলে সামাল দেয়ার জন্য কোন কোন বিষয়ে নজর রাখতে হবে, সেটাও তারা মাথায় রাখেন। উদ্যোক্তাদের ক্রিয়েটরের জুতায় পা গলিয়ে বুঝতে হবে তাদের যদি নিজেদের ব্যবসার ওপর বিশ্বাস থাকে তাহলে নৈতিক ও অর্থনৈতিক বাধা তেমন বড় হয়ে দাঁড়াবে না।