মুসলিম নারীদের ‘নিলামে তোলা’ ওপেন সোর্স অ্যাপ ‘বুল্লি বাই’ নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম থেকে মুছে দিয়েছে ওয়েব হোস্টিং প্ল্যাটফর্ম গিটহাব। ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে ভারতের দুটি অঙ্গরাজ্যে, আসামি করা হয়েছে অ্যাপটির ডেভেলপার এবং টুইটারে অ্যাপটির কনটেন্ট ও ছবি শেয়ারকারীদের।
একশ’র বেশি ভারতীয় মুসলিম নারীর ছবি পোস্ট আকারে ছিল ওই অ্যাপে। ছবির পাশে উল্লেখ ছিল “বিক্রয়” করা হবে তাদের। বিবিসি জানিয়েছে, ভারতে মুসলিম নারীদের অনলাইনে ‘নিলামে তোলার’ দ্বিতীয় চেষ্টা ছিল এটি। বিক্রির তালিকায় ছিলেন মুসলিম নারী সংবাদকর্মী, অধিকারকর্মী এবং অ্যাওয়্যার্ড জয়ী বলিউডি অভিনেত্রীর মতো অনেকেই।
জুলাই মাসে “সুল্লি ডিলস” নামের আরেকটি ভারতীয় অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে একইভাবে ৮০ জন মুসলিম নারীর প্রোফাইল আপলোড করে তাদের বিক্রির চেষ্টা চলেছে। উভয় অ্যাপের ক্ষেত্রেই বাস্তবিক কোনো লেনদেনের ঘটনা ঘটেনি; তবে মুসলীম নারীদের হেয় ও অপমান করার জন্যই তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি অ্যাপগুলোতে আপলোড করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।
‘বুল্লি বাই’ অ্যাপের ভুক্তভোগীদের তালিকায় আছেন ভারতীয় সংবাদকর্মী ইসমত আরা। সম্প্রতি দিল্লীর পুলিশ বিভাগের কাছে অ্যাপটি নিয়ে অভিযোগ করেছেন তিনি। বেনামী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন এবং ধর্মবিদ্বেষের অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
‘বুল্লি বাই’-এর তালিকায় থাকা আরেক নারীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় মামলাটি করেছে মুম্বাই পুলিশ। মামলায় আসামী করা হয়েছে অ্যাপটির ডেভেলপার এবং টুইটারের মাধ্যমে অ্যাপটির কনটেন্ট শেয়ারকারীদের।
‘বুল্লি বাই’-এর ভুক্তভোগী নারীদের অনেকেই টুইট করে জানিয়েছেন যে তারা ‘আতঙ্কিত’ এবং ‘মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছেন। তবে ছয় মাস পেরোলেও ভারতের পুলিশ বাহিনী ‘সুল্লি ডিলস’ মামলায় কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি বলে জানিয়েছে বিবিসি।
যে অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাপটি আপলোড করা হয়েছিল গিটহাব সেটিকে ব্লক করে দিয়েছে এবং স্থানীয় পুলিশ এবং সাইবার সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করছে বলে জানিয়েছেন ভারতের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনি বৈষ্ণ।
এই প্রসঙ্গে শিভ সেনা পার্টির জনপ্রতিনিধি প্রিয়াঙ্কা চাতুর্ভেদি টুইট করেছেন, “প্ল্যাটফর্ম ব্লক করার পাশাপাশি অপরাধীদের শাস্তি দেওয়াও জরুরী।” ‘সুল্লি ডিলস’ এর মূল হোতাদের শাস্তির আওতায় আনা যায়নি বলেই নতুন অ্যাপটি সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছে মন্তব্য করেছেন তিনি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদন বলছে, ভারতে একজন নারী বিভিন্ন বিষয়ে যতো বেশি সোচ্চার হন, অনলাইনে তার প্রতি নিপীড়নমূলক আচরণ ততো বাড়তে থাকে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হন ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং সুবিধাবঞ্চিত নারীরা।
সমালোচকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় রাজনীতিতে মেরুকরণ বেড়েছে এবং এর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মুসলীম নারীদের প্রতি নিপীড়নমূলক আচরণ।
“যেসব শিক্ষিত মুসলিম নারী নিজের মত প্রকাশ করেন এবং ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাদের মত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে এটি পরিকল্পতি আক্রমণ”– ‘সুল্লি ডিলস’ প্রসঙ্গে বিবিসি’র কাছে এই মন্তব্য করেছিলেন ভারতে অ্যামনেস্টির মুখপাত্র নাজিয়া ইরাম।