বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের সম্পত্তির বড় অংশই শেয়ারকেন্দ্রিক। শেয়ার মার্কেটে ২০২২ সালের শুরুটা বিশ্বসেরা এই ধনীর জন্য কঠিন হলেও খুব বেশি উদ্বিগ্ন নন তিনি। তার মালিকানাধীন টেসলা স্টক মার্কেটে চলতি বছর প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ তিন হাজার কোটি ডলার হারিয়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির কোম্পানি টেসলা গত সোমবার পর্যন্ত পুঁজিবাজারে ১২ শতাংশ দর হারিয়েছে।
আশার কথা বছরের পরবর্তী মাসগুলো মাস্কের জন্য সবচেয়ে বেশি লাভজনক হতে পারে। বিশ্লেষকরা সঠিক হলে, টেসলা এ বছর ভালো আর্থিক ফল পাবে শেয়ারমার্কেটে লেনদেন করে। ধারণা করা হচ্ছে স্টক মার্কেটে ফুলেফেঁপে উঠবে টেসলার লেনদেন।
কাগজে–কলমে মাস্ক বিশ্বের সর্বাধিক বেতনের নির্বাহী। যদিও তিনি টেসলা থেকে কোনো বেতন বা বোনাস নেন না। তবে এর বেশির ভাগ ইক্যুইটির মালিকানা তার। এর পরিবর্তে, তিনি নির্দিষ্ট আর্থিক এবং বাজার মূল্যের উপর ভিত্তি করে কোম্পানি থেকে লভ্যাংশ পান। তবে তার জন্য কোনো ট্যাক্সের আওতায় আসেন না তিনি। মার্কিন ফেডেরাল ইনকাম ট্যাক্সের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে কোনো রকম ফেডেরাল ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়নি টেসলার মতো কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ককে।
২০১৮ সালের বেতন প্যাকেজে কোম্পানি থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলারের শেয়ার বরাদ্দ করা হয় মাস্কের জন্য। যা ১২টি সমান ধাপে প্রদানের নিয়মে আনা হয়। স্টক মার্কেটের ১০১ মিলিয়ন ডলারের প্যাকেজের মধ্যে ২০১৯ সালে দুটি, ২০২০ সালে দুটি ও ২০২১ সালের নয় মাসে তিনটি সুবিধা নিয়েছেন। যেখান থেকে ৫৯ মিলিয়ন ডলারের শেয়ার এরই মধ্যে নিয়েছেন মাস্ক।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে টেসলা এই বছর বাকি পাঁচটি আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে যাতে মাস্ককে সেই ২০১৮ সালের প্যাকেজের অধীনে সম্ভাব্য সব বিকল্প দিতে পারে। যদি তারা সঠিক হয়, তবে এ বছর চারটি পর্বের জন্য যোগ্যতা অর্জন করবে টেসলা।
প্রযুক্তিবিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, পুঁজিবাজারে এবছরও চাঙা থাকবে টেসলা। পরবর্তী মাসগুলোতে মাস্ক অনেক বিকল্প পাবেন, তাকে সম্ভবত প্রায় পাঁচ বছর সেগুলোর জন্য কোনো করও দিতে হবে না। কারণ তিনি বিকল্পগুলো অনুশীলন করার পরে এবং অতিরিক্ত শেয়ার কিনলে তাকে শুধু বিকল্পগুলোর উপর কর দিতে হবে। তিনি গত বছর এটি করেছিলেন যখন তিনি ২২ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার বিকল্প ব্যবহার করেন। যা ২০২২ সালের আগস্টে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। গত বছরের জন্য যার ট্যাক্স বিল নির্ধারণ হয় ১১ বিলিয়ন ডলার।
সর্বশেষ বিকল্পগুলোর মেয়াদ ২০২৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত শেষ হবে না, তাই তিনি সম্ভবত ২০২৭ সাল পর্যন্ত সেগুলো ব্যবহার করবেন না। ২০১৮ সালের পে প্যাকেজের অংশ হিসাবে এরইমধ্যে প্রাপ্ত ৫৯ মিলিয়ন বিকল্পের উপর তাকে এখনও কর দিতে হয়নি। তিনি সম্ভবত পরবর্তী বারো মাসের মধ্যে প্রাপ্ত ৪২ মিলিয়ন অতিরিক্ত বিকল্পগুলোর কোনোটির উপর কর দেবেন না, সেগুলোর মূল্য যতই হোক না কেন।
তবে মাস্কের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো টেসলার শেয়ারের একটি বিশেষ বছর যেটি খারাপ যাচ্ছে। তিনি ১৭৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারের শেয়ারের মালিক। যদিও অতিরিক্ত ৫৯ মিলিয়ন শেয়ার কেনার বিকল্পগুলো এরইমধ্যে তিনি ব্যবহার করেছেন। এটিই ২০২২ সালে তার মোট সম্পদে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। যেখানে বর্তমানে ফোর্বসের রিয়েল টাইম বিলিয়নিয়ার ট্র্যাকারে মাস্কের মোট সম্পদের মূল্য ২৪১ বিলিয়ন ডলার।
ফেডারেল রিজার্ভে উচ্চ হার এবং কম উদ্দীপনাসহ মুদ্রাস্ফীতির কারণে বিনিয়োগকারীরা টেসলার মতো ঝুঁকিপূর্ণ প্রযুক্তির স্টক সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। যদিও এটি স্টক মার্কেটে ১০টি বিশ্বের সেরা কোম্পানির মধ্যে একটি।
টেসলার শেয়ার কেনাবেচায় ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীরা সেদিকেই ঝুঁকছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অনেকে টেসলার স্টক মার্কেটের সাম্প্রতিক দরপতনকে সাময়িক ধাক্কা হিসেবে দেখছেন। ২০২১ সালের শুরুতেও পুঁজিবাজারে টেসলার দরপতন ঘটে। পরবর্তীতে সেটির বিপরীতে দর বেড়ে যায় ৫০ শতাংশ।
বিশ্লেষকদের নিয়ে করা রিফিনিটিভের জরিপের তথ্য বলছে, গতবছরের ১০টি শেয়ার বিক্রির সুপারিশের বিপরীতে এবার রয়েছে ১৮টির। তবে পুঁজিবাজারে টেসলার লেনদেন কমা-বাড়ায় তার ওপর খুব একটা প্রভাব পড়ে না বলে দাবি করেন ইলন মাস্ক।
বিভিন্ন সময়ে তিনি নিজেই বলেছেন, তার হাতে নগদ খুব কম থাকে। এমনকি লস অ্যাঞ্জেলেস অঞ্চলে তার বাড়ির অনেকাংশই বন্ধক রাখা।
তার দাবি, তিনি শুধু দু’টি প্রধান প্রতিষ্ঠান টেসলা ও স্পেসএক্সের শেয়ারের মালিক এবং এ দুটি প্রতিষ্ঠানের অধীন তার অনেক দেনাও রয়েছে।