প্রযুক্তির অগ্রসর এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে যাওয়ার কারণে দিন দিন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের পরিধি বেড়েই চলেছে। তাই নতুন ডিভাইস কিনার পাশাপাশি পুরাতন বা সেকেন্ড হ্যান্ড ডিভাইস কেনার চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। দেশের মানুষদের সাধ্যের মধ্যে তার পছন্দের পন্য সার্ভিস ওয়ারেন্টিসহ তুলে দিতে এবং ই-বর্জ্য বিশাল ক্ষতির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে বিশাল ভূমিকা রাখছে একমাত্র রি-কমার্স প্লাটফর্ম সোয়াপ। ২৪ মাসে প্রায় ৫০ গুণ বড় হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কাজ করছেনন স্যামসাং, শাওমি, অ্যাপল, বাজাজের মতো লিডিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
রাজধানীর বনানীর রি-কমার্স প্লাটফর্ম সোয়াপ এর প্রধান কার্যালয়ে টেকজুম ডটটিভির সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সোয়াপ প্রধান নির্বাহী মো. পারভেজ হোসেন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন টেকজুম ডটটিভির প্রতিবেদক মিরাজুল ইসলাম জীবন।
টেকজুম : সোয়াপের শুরুর গল্পটা যদি বলতেন?
পারভেজ হোসেন: ঢাকা ইউনিভার্সিটি আইবিএ তে পড়াশুনা কালীন নিজের জন্যে পুরাতন ল্যাপটপ কিনতে গিয়ে বেশ সমস্যার মুখোমুখি হয় ,সেই থেকে ভাবতে শুরু করেন এমন একটি সল্যুশন যদি তৈরি করা যায় যেখানে যেকোনো মানুষ যে কোনো প্রান্ত থেকে একটি প্ল্যাটফর্মে পুরাতন ইলেকট্রনিক প্রোডাক্ট কেনা এবং বিক্রি করার সুবিধা পাবেন। নিজের ডিভাইস কেনার সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে হঠাৎ মনে হলো, মানুষের মধ্যে তো পুরোনো জিনিসের চাহিদা রয়েছে। তাই তখন থেকেই পুরোনো ল্যাপটপ বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি কেনাবেচার একটি ব্যবসা গড়ে তোলার চিন্তা মাথায় আসে।’এই চিন্তা থেকেই রি-কমার্স প্লাটফর্ম সোয়্যাপ (SWAP) এর যাত্রা শুরু।
টেকজুম : বলেছেন সোয়াপ রি-কমার্স প্লাটফর্ম। বিষয়টা যদি পাঠকদের একটু বুঝিয়ে বলতেন. . .
পারভেজ হোসেন: আসলেই শব্দটার সাথে অনেকে পরিচিত না। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কাস্টমাররা। ই-কমার্স হলো ওয়েবসাইট থেকে ক্রেতারা তাদের পছন্দ মতো নতুন পণ্য মূল্য দেখে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে অর্ডার করেন। প্রতিষ্ঠান অর্ডার পেয়ে ক্রেতার নির্দিষ্ট ঠিকানায় পণ্যটি ক্যাশ অন ডেলিভারি দেয়। ক্রেতা সেটি টাকা দিয়ে বুঝে নেন। আর রি-কমার্স হলো পুরানো পণ্য কাস্টমারের কাছ থেকে আমরা কিনে নিচ্ছি। সুতরাং এটা হলো রিভার্স ই-কমার্স। যেখানে আপনি ই-কমার্স থেকে নতুন পণ্য কিনছেন, সেখানে আমরা পুরানো পণ্য বিক্রি করার প্লাটফর্ম দিচ্ছি। এটাকেই বলা হচ্ছে রি-কমার্স প্লাটফর্ম।
টেকজুম : দেশের প্রথম ও একমাত্র রি-কমার্স প্লাটফর্ম সোয়াপ। আপনারা কী ধরনের সেবা দিচ্ছেন?
পারভেজ হোসেন: সোয়াপ বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র নির্ভরযোগ্য রি-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। এই প্লাফর্মে সোয়াপ একটি কাস্টমার টু বিজনেস (সিটুবি), বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) এবং কাস্টমার টু বিজনেস টু কাস্টমার (সিটুবিটুসি) মার্কেটপ্লেস হিসেবে কাজ করে, যেখানে গ্রাহকরা তাদের ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক্স এবং অটোমোবাইল কিনতে, বিক্রি করতে বা অদল-বদল করতে পারেন।
এখানে ব্যবহারকারীরা নানা প্ল্যাটফর্ম, পেমেন্ট পদ্ধতি এবং পরিষেবামূলক বিকল্পগুলি ব্যবহার করতে পারেন নির্ভরযোগ্যভাবে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী। অনেক নিম্ন আয়ের উপার্জনকারীদেরও পণ্য ক্রয়, বিক্রয় এবং বিনিময় করতে প্ল্যাটফর্মটি সক্ষম, যা উদীয়মান ই-কমার্স বাজারে অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
সারাদেশের আগ্রহী গ্রাহকরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে যেনো ঘর বসে সহজে তাদের পুরাতন পণ্য বিক্রি করতে পারেন। সেই সাথে তাদের ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক পণ্যের বিনিময়ে শুধু ন্যায্য দামই নয়, বরং কম দামে নতুন পণ্য কিনতে পরেন সে দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সোয়াপ। এ বিষয়ে গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা ও পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দেয়ার পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের তাদের ই-বর্জ্য যথাযথভাবে বর্জন করার সুযোগও দিয়ে থাকে রি-কমার্স প্ল্যাটফর্ম।
টেকজুম : সোয়াপ এর ব্যবসার পরিধি কেমন এবং সারাদেশে কি সোয়াপ এর এজেন্ট আছে?
পারভেজ হোসেন: মাত্র ২৪ মাস বয়সী এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাজ করছেন ১০০ জন কর্মী । মাত্র ২৪ মাসে প্রায় ৫০ গুণ বড় হয়েছে সোয়াপ। স্যামসাং, শাওমি, অ্যাপল, বাজাজের মতো লিডিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার মানুষকে এই বিজনেস এর সাথে কানেক্ট করেছে সোয়্যাপ (SWAP)। বর্তমানে আমাদের রেজিস্টার্ড গ্রাহক এর সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ ৫০ হাজার। সাড়ে পাঁচ লাখ এরও বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে আমাদের এপ্সটি। একদম প্রথম মাসে মাত্র ১৭ লাখ টাকা আয় হলেও গত নভেম্বর মাসে সোয়্যাপ (SWAP)ের আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ কোটি টাকায় এবং প্রতি মাসে প্ল্যাটফর্মটির সেল বাড়ছে প্রায় ১০ শতাংশ। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কাস্টমারদের কাছে এই সেবাটি পৌঁছে দেয়ার। প্রথমে ঢাকা থেকে এটি শুরু করেছিলাম। এখন আমরা ২৬টি জেলায় কাজ করছি। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ২০২৩ সালের মধ্যে ৬৪টি জেলায় সেবাটি পৌঁছে দেয়ার। রাজধানীতে পুরানো পণ্য বিক্রির সুযোগ রয়েছে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ সুযোগটা নেই।
টেকজুম : এই প্লাটফর্মে কী ধরনের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে?
পারভেজ হোসেন: প্রথমে আমরা পুরনো মোবাইল ফোন দিয়ে কার্যক্রমের যাত্রা শুরু করি। পরে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কোম্পানির ল্যাপটপ ও গ্যাজেট যুক্ত হয় ক্যাটেগরিতে। গ্যাজেটের মধ্যে স্মার্টওয়াচ, ট্যাবলেট, আইপ্যাড, অ্যাক্সেসরিজ। এছাড়াও আছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বাইক, গাড়ি এবং ফার্নিচার এসব পণ্য নিয়ে কাজ করছি।
টেকজুম : আপনারা পুরানো পণ্যের এক্সচেঞ্জ সুবিধা দিয়ে থাকেন। ওই বিষয়টা যদি একটু বলতেন. . .
পারভেজ হোসেন: এ সেবাটা আমরা দুই ভাবে দিয়ে থাকি। একটা হলো কাস্টমার যদি ঘরে বসে তার পুরানো ফোন, বাইক বা ল্যাপটপটি বিক্রি করতে চান, তাহলে ওই কাস্টমারকে বিক্রির জন্য আমদের এখানে ওয়েবসাইটে অনুরোধ করতে হবে। অনলাইনে প্রক্রিয়ার মধ্যে উল্লেখ করতে হবে আপনি কোন পুরানো পণ্যটা বিক্রি করে কোন নতুন পণ্যটা নিতে চান। তাহলে আমাদের টিমের সদস্যরা সাথে সাথে বাসায় গিয়ে ওই পুরোনো পণ্য দেখে নির্দিষ্ট দাম দিয়ে নতুন পণ্যও দিয়ে আসবেন। যেমন একটা স্যামসাংয়ের ফোন নিতে চান। ফোনটার দাম ৩০ হাজার টাকা। এখন আপনার পুরানো ফোনের দাম ১২ হাজার টাকা। আপনি পুরানো ফোন দিয়ে বাকি ১৮ হাজার টাকা দিয়ে নতুন ফোনটা নিতে পারবেন। একই স্টাইলে বাইক বা ল্যাপটপটিও এক্সচেঞ্জ করতে পারবেন।
টেকজুম : দেশে পুরানো পণ্য মার্কেটের আকারটা কত বড়?
পারভেজ হোসেন: বাংলাদেশে পুরানো পণ্যের মার্কেটের আকার অনেক বড়। আমরা একটা রিসার্চ করেছি। সেখানে দেখা গেছে এই মার্কেটে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার সমমূল্যের পুরাতন ইলেকট্রনিক পণ্য রয়েছে, যা চাইলেই বিক্রি করা সম্ভব। দুঃখের বিষয় হলো এই পণ্যগুলি কখনো বিক্রি হয় না। গড়ে দেখা যায় যে, ৫০-৬০% পণ্য বিক্রিই হয় না। এই বাজারে বিক্রয়যোগ্য পণ্যগুলো ২৫-৫০% বিক্রি হচ্ছে। বাকিগুলো দেখা যাচ্ছে ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলির মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিক্রি হয়। দেশের পুরাতন পণ্য বিক্রির বাজারটা অনেক বড়। বিশ্বে প্রতি বছর ১১% করে এই বাজার বৃদ্ধি হচ্ছে। আগামীতে পুরানো ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মার্কেটটা নতুন মার্কেটের চেয়ে দ্বিগুন বড় হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন স্মার্টফোনের বাজারের চেয়ে পুরানো বা ব্যবহার করা ফোনের বাজারটা তিনগুন বড় হবে।