সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে বড় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে; ২০২২ সালের শুরু থেকে ব্যবহারকারী কমার প্রবণতা বন্ধ হয়েছে, উল্টো সক্রিয় ব্যবহারকারী বেড়েছে তাদের।
ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা বুধবার জানিয়েছে, এ বছরের প্রথম তিন মাসে তাদের দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে ১৯৬ কোটিতে পৌঁছেছে।
মেটার কর্ণধার মার্ক জাকারবার্গ অবশ্য জানিয়েছেন, তার কোম্পানির আয়ের প্রবৃদ্ধি এক দশকের মধ্যে এখনই সবচেয়ে ধীর।
গত বছরের শেষ তিন মাসে সামাজিক নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মটি তাদের ইতিহাসে প্রথমবার দৈনিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমার ঘোষণা দিয়েছিল। তাতে পুঁজিবাজারে এক ধাক্কায় কোম্পানির মূল্য ২০০ কোটি ডলার কমে যায়।
ফেব্রুয়ারি মাসে ২০২১ সালের শেষ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর ফেসবুকের শেয়ারের দাম অর্ধেকে নেমে যায়। তবে বুধবার এ বছরের প্রথম প্রান্তিকের প্রতিবেদন প্রকাশের পর শেয়ারের দাম এক লাফে ১৯ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
জাকারবার্গ বলেছেন, “আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি মানুষ এখন আমাদের সেবা ব্যবহার করছে, এবং আমাদের পণ্য বিশ্বজুড়ে যেভাবে জনগণকে সেবা দিচ্ছে, তাতে আমি গর্বিত।”
তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের মালিক প্রতিষ্ঠান মেটার আয় এ বছরের প্রথম তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ৭ শতাংশ বেড়েছে। আগের বছর একই সময়ে আয় ছিলো দুই হাজার ৭৯০ কোটি ডলার। ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করা ফেসবুকের জন্য এটাই সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধির হার।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ব্যবসার পরিচালনা খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপনে ব্যয় কমিয়ে দিচ্ছে, ইউক্রেইনে যুদ্ধও একটি বড় ভূমিকা রাখছে এর পেছনে।
এছাড়া এতদিন অনলাইনে বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে গুগল ও ফেসবুকই মূল প্ল্যাটফর্ম ছিল, কিন্তু এখন টিকটকের মতো নতুন প্ল্যাটফরম এবং কেনাবেচার প্ল্যাটফরম অ্যামাজন এ বাজারে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে।
এ সপ্তাহের শুরুতে গুগলের মালিক প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট জানিয়েছিল, প্রথম প্রান্তিকে তাদের বিজ্ঞাপনী আয় ২২ শতাংশ বেড়েছে, যা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়ে কম।
মেটার কর্ণধার মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, টিকটকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকতে তারা তাদের ‘রিল’ ভিডিওর ওপর বিনিয়োগ করছেন এবং আশা করছেন বিজ্ঞাপনের বাজারে আরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।
তবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেমে গোপনীয়তার নীতিতে পরিবর্তন আনার কারণেও মেটার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফরম পরিচালনা করে। এই ব্যবসায় শীর্ষস্থানে আছে গুগল।
মেটার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আসন্ন মাসগুলোতে কোম্পানির আয় ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ডলারের মধ্যে থাকতে পারে – যা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়ে কম।
সার্বিকভাবে এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে মেটার মুনাফা হয়েছে ৭৪৬ কোটি ডলার। এই অংক বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হলেও বছরভিত্তিক প্রবৃদ্ধির তুলনায় কম।