ঠিক এরকমই এক ফিচার নিয়ে কাজ করছে গুগল। নতুন ওই ফিচারটি সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে ধারণা দেওয়ার কাজটিও গত বছরই সেরে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ ওই ফিচারটিকে বলা হচ্ছে ‘ভিজুয়াল পজিশনিং সিস্টেম’ বা ‘ভিপিএস’।
চলুন একাধিক প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ও গুগলের বরাতে আমরাও ধারণা নিয়ে নেই নতুন ওই প্রযুক্তিটি সম্পর্কে-
‘ভিজুয়াল পজিশনিং সিস্টেম’ আসলে কী?
প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট অ্যান্ড্রয়েড অথরিটি বলছে, ভিজুয়াল পজিশনিং সিস্টেম বা ভিপিএস আদতে গুগল ম্যাপসের একটি ফিচার। শুধু অবস্থান সম্পর্কে ধারণা নিয়েই অগমেন্টেড রিয়ালিটিনির্ভর এ ফিচারটি ব্যবহারকারীকে বিস্তারিতভাবে জানিয়ে ও দেখিয়ে দিতে পারবে তার আশপাশে কী কী রয়েছে। নিজের কাজটি সম্পন্ন করতে ব্যবহারকারীর স্মার্টফোন ক্যামেরা, গুগলের ব্যাক-এন্ড ডেটা এবং অগমেন্টেড রিয়ালিটির সাহায্য নেবে ফিচারটি।
শুনে বুঝা যাচ্ছে, জিপিএসের সঙ্গে এর বেশ মিল রয়েছে। অনেকে একে দৃশ্যমান জিপিএস’ও বলছেন। তবে, জিপিএস যেখানে পরিপূর্ণ তথ্য জানাতে অক্ষম, সেখানে বিস্তারিতভাবে ডেটা জানানোর পাশাপাশি দৃশ্যত তা দেখিয়েও দিতে পারবে ভিপিএস।
ঠিক কীভাবে কাজ করবে গুগল ভিপিএস?
কল্পনা করুন কোনো এক রাস্তা ধরে হাঁটছেন, পাশে বড় ছোট অনেক দালান কোঠা। জিপিএস বলছে ঠিক জায়গাতেই পৌঁছে গেছেন আপনি। কিন্তু যে স্থানটির খোঁজে এসেছিলেন, সেটি চোখে পড়ছে না।
ঠিক ওই সময়টিতেই স্মার্টফোনের ক্যামেরা চালু করলেন, আশপাশের দৃশ্য ও নিজ অবস্থান সম্পর্কে ধারণা দিলেন ভিপিএস’কে। স্মার্টফোনের ক্যামেরার লাইভ ফিডে একটি ‘সাইনবোর্ড’ উপস্থিত হয়ে আপনাকে দেখিয়ে দিল, সামনের দালানের চতুর্থ তলা হচ্ছে আপনার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। রেসিং গেইমের মতো তীর চিহ্ন উপস্থিত হয়ে পথ দেখিয়ে দিল আপনাকে।
এটি করেই কিন্তু ক্ষান্ত দিল না নতুন এই প্রযুক্তি, বাড়তি হিসেবে শেয়ালের মতো একটি লাল রংয়ের প্রাণী এসে হাজির হলো ক্যামেরার লাইভ ফিডে। প্রয়োজনে গাইডের ভূমিকা পালন করে পথ দেখিয়ে পৌঁছে দেবে আপনাকে।
উপরের হিসেবগুলো কিন্তু কোনো কল্পনা নয়। আদতে ওভাবেই কাজ করবে ভিপিএস। অন্তত সেরকম ধারণাই দিয়েছেন গুগলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অপর্না চেন্নাপ্রাগাদা।
মোদ্দাকথা, স্মার্টফোনের পর্দা দিয়েই দুনিয়া দেখতে হবে আপনাকে। তাহলেই কেবল ফিচারটির সাহায্যে হদিস পাবেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের।
জিপিএস’র সঙ্গে ভিপিএস’র পার্থক্য
একদম সহজ করে বললে, লেখা ও ছবির মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, জিপিএস এবং ভিপিএসের ক্ষেত্রেও প্রায় একই ধরনের পার্থক্য চোখে পড়বে।
জিপিএস নানা ধরনের জ্যামিতিক আকৃতি ও লেখার সমন্বয়ে ব্যবহারকারীকে সেবা দিয়ে থাকে। এ কারণে সেবাটির বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। সবসময় পরিপূর্ণ ও বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারে না জিপিএস। অন্যদিকে ভিপিএসের পুরো সেবাটাই দৃশ্য নির্ভর। ফলে জিপিএসের চেয়ে অনেক গুণ বেশি সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত তথ্য জানানোর ক্ষমতা রাখে সেবাটি।
কবে নাগাদ আসতে পারে ভিপিএস?
ভিপিএস-এর ব্যাপারে গুগল প্রথম জানায় ২০১৮ সালের মে মাসে। পরে ২০১৯ সালে প্রযুক্তিটি হাতেকলমে পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ পান প্রযুক্তিপ্রেমীরা।
মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ব্যক্তিগত প্রযুক্তি বিষয়ক কলামিস্ট ডেভিড পিয়ার্স ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিসকোর রাস্তায় ফিচারটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখেন।
তবে, ফিচারটি ভালো হলেও চোখের সামনে স্মার্টফোন ধরে হাঁটায় অভ্যস্থ হতে যে প্রযুক্তিপ্রেমীদের আরেকটু সময় লাগবে, সে বিষয়টিই আকারে ইঙ্গিতে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন পিয়ার্স।