বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং খাতের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার নানা দিক নিয়ে আলোচনা ও কর্মশালা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুই দিনব্যাপী বিপিও সামিট বাংলাদেশ-২০১৯। চতুর্থবারের মতো আয়োজিত এ সামিটে এবারো ছিল কর্মসংস্থানের সুযোগ। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয় এবারের সামিট।
সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিসেস অ্যালায়েন্সের (উইটসা) মহাসচিব জেমস এইচ পয়সান্ট, আইসিটি বিভাগের
সচিব এনএম জিয়াউল আলম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন প্রমুখ।
বিপিও সামিটে এবার দুদিনে মোট ১২টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এসব সেমিনারে অংশ নেন ৪০ জন স্থানীয় ও ২০ জন আন্তর্জাতিক বক্তা।
বিপিও খাতে চাকরি প্রত্যাশীদের আগ্রহ ছিল সামিটকে ঘিরে। সামিটের শেষ দিনে তিতাস রুমে আয়োজন করা হয় ‘অন জব স্পট ইন্টারভিউ’। এতে হাজারের বেশি চাকরি প্রত্যাশী তরুণ-তরুণী অংশ নেন। ২০১৫ সালে প্রথম বিপিও সম্মেলনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি পান ২৩৫ শিক্ষার্থী। এর পর থেকে এ সংখ্যা বাড়ছে।
বিপিও সামিটের প্রথম দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বলরুমে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিপিও অ্যাজ অ্যা ক্যারিয়ার ফর ইয়ুথ অ্যান্ড লিভারেজিং বিপিও ফর এমপ্লয়মেন্ট’ শীর্ষক সেমিনার। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
তিনি বলেন, বিপিওতে ৪ হাজার ৮০০ রকমের কাজ আছে। আমাদের তরুণরা যে এর মধ্যে কোনো একটি কাজ করতে পারবে না, এমন নয়। সেজন্য চাই নিজের প্রচেষ্টা।
সেমিনারে আলোচক ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব এনএম জিয়াউল আলম, ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিসেস অ্যালায়েন্সের (উইটসা) মহাসচিব জেমস এইচ পয়সান্ট, আইসিটি বিভাগের ডিজি এএমএ আরশাদ হোসেন, দ্য উইনারস সার্কেলের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ওয়াজেদ সালাম, সিএনসি ডাটা (এলএলসি) এমডি রাজ মহান ভাইরামুথু, রেডিসন টেকনোলজিসের এমডি দেলোয়ার হোসেন ফারুক। এতে সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন বাক্যর সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন।
বেসরকারি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সেবা নিতে নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার। বিপিও সামিটের প্রথম দিন ‘গভর্নমেন্ট প্রসেস আউটসোর্সিং: স্টেপস ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক পার্থ প্রতীম দেব।
তিনি বলেন, বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে এটি চূড়ান্ত করা হবে। বর্তমানে সরকারের ৫৪ প্রকারের সেবা আছে। এগুলোর মধ্যে কোন সেবা আউটসোর্সিং করা যাবে আর কোনটা করা যাবে না, তার তালিকাও থাকবে নীতিমালায়।
সেমিনারে অংশ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি সরকারি সেবা বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে আউটসোর্সিং করা হচ্ছে। এর মধ্যে হজ ব্যবস্থাপনা অন্যতম। তাছাড়া সেবা হিসেবে ৯৯৯ ও ৩৩৩ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে বেশি পরিমাণে সরকারি সেবা আউটসোর্সিংয়ে না যাওয়ার পেছনে সরকারি কর্মকর্তাদের মানসিকতাকেও দায়ী করেন তিনি। এ মানসিকতা পরিবর্তনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সেমিনারের সঞ্চালক ছিলেন বেসিসের সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম। এ সময় আরো কথা বলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ এইচ কাফি প্রমুখ।
গত রোববার বিপিও সামিট উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ।
যৌথভাবে এ সামিটের আয়োজন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর (ডিওআইসিটি) এবং বাক্য।
আয়োজনে সহযোগিতা করেছে বেসিস, বিসিএস, বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি (বিডব্লিউআইটি), আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ)।