ওয়েব ব্রাউজিংয়ের সময় প্রায়ই ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহারকারীর কিছু সাধারণ তথ্য চায়। এর মধ্যে অধিকাংশ সাইট ই-মেইল অ্যাড্রেস শেয়ার করতে বলে। নিরাপদ মনে করে ব্যবহারকারীরা দ্বিধা ছাড়াই এটি শেয়ার করে থাকে। তবে স্বাভাবিক মনে হওয়া এ সিদ্ধান্ত সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কেননা একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহারকারীর অনেক তথ্য ধারণ করে।
প্রথমত, বুঝতে হবে কোম্পানিগুলো কেন ই-মেইল অ্যাড্রেস চায়। বিজ্ঞাপনদাতা, ওয়েব পাবলিশার্স ও অ্যাপ ডেভেলপাররা ই-মেইল অ্যাড্রেস শুধু যোগাযোগের জন্যই নিচ্ছে না। এটি কোম্পানিগুলো একটি ডিজিটাল ব্রেডক্রাম্প হিসেবেও ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে তারা ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং সাইট ও অ্যাপের কার্যকলাপকে সমন্বয় করে প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে।
কয়েক দশক ধরে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রি ইউজারদের অনলাইন কার্যক্রম অনুসরণ করে আসছে। ওয়েবসাইট ও অ্যাপ অ্যাক্টিভিটির ওপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে। অবশ্য এ সিস্টেমে এখন ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। অ্যাপল ২০২১ সালে একটি সফটওয়্যার ফিচার রিলিজ করেছে, যা আইফোন ব্যবহারকারীদের ট্র্যাকিং ব্লক করার সুযোগ দেয়। গুগল ২০২৪ সালের মধ্যে ক্রোম ব্রাউজারের কুকিজ ডাটা সংগ্রহ থেকে ওয়েবসাইটগুলোকে ব্লক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই বিজ্ঞাপনদাতা, ওয়েব পাবলিশার্স ও অ্যাপ ডেভেলপাররা এখন ভিন্ন উপায়ে ট্র্যাকিং করার চেষ্টা করছে। এজন্য সহজ পদ্ধতি হলো একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস সংগ্রহ করা।
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের একটি বিজ্ঞাপন সংস্থা মডার্ন ইমপ্যাক্টের প্রধান নির্বাহী মাইকেল প্রিয়েম বলেন, ‘আমি আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস থেকে এমন সব তথ্য খুঁজে পেতে পারি, যা আপনি হয়তো জানেন না। ই-মেইল অ্যাড্রেসের সঙ্গে একটি ব্র্যান্ডকে আপনার সম্পর্কে যে পরিমাণ তথ্য দিচ্ছেন সেটা আশ্চর্যজনক।’
বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে। এজন্য ই-মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহারের আগে ভেবে নিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রি ওয়েবসাইট ব্রাউজিংয়ের ভিত্তিতে প্রোফাইল তৈরি করে থাকে। এতদিন কুকিজ ও অ্যাপের মধ্যে ইনস্টল করা অদৃশ্য ট্র্যাকার দিয়ে ব্যবহারকারীর তথ্য গোপনে সংগ্রহ করা হতো। এখন অ্যাপগুলো থেকে সিস্টেমটি যেহেতু ব্লক করা শুরু হয়েছে, তাই নতুন বিজ্ঞাপন কৌশল খুঁজছে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো। এ থেকে বাঁচতে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
একাধিক ই-মেইল অ্যাড্রেস তৈরি
যখন কোনো সাইট বা অ্যাপ্লিকেশন ই-মেইল অ্যাড্রেস চাইবে সেখানে লগ ইন করার জন্য একটি ভিন্ন ই-মেইল ব্যবহার করতে হবে। তাহলে বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রির কোম্পানিগুলো সহজেই ই-মেইলের ভিত্তিতে প্রোফাইল তৈরি করতে পারবে না। এটি একটি দারুণ পদ্ধতি। কেননা অসংখ্য ই-মেইল অ্যাড্রেস ও পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা করা সময়সাপেক্ষ।
ই-মেইল মাস্কিং টুল ব্যবহার
অ্যাপল ও মজিলা এমন সরঞ্জাম সরবরাহ করে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোনো অ্যাপ্লিকেশন বা সাইটে লগ ইন করার জন্য ই-মেইল অ্যালায়েস তৈরি করে। অ্যালায়েসগুলোয় প্রেরিত ই-মেইল আসল ই-মেইল অ্যাড্রেসে ফরোয়ার্ড করা হয়। অ্যাপলের ‘হাইড মাই ই-মেইল’ টুল এবং মজিলার ‘ফায়ারফক্স রিলে’ এক্ষেত্রে ব্যবহার করা সুবিধাজনক।
বিজ্ঞাপন সাইট থেকে অপ্ট-আউট করা
কিছু বিজ্ঞাপনদাতা ইউআইডি ২.০ ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে অনলাইন ব্যবহারকারীদের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে থাকে। এসব বিজ্ঞাপন এড়াতে ব্যবহারকারীকে ই-ইমেল অ্যাড্রেসটি ‘ট্রান্সপারেন্ট অ্যাডভারটাইজিং ডট অর্গ’ সাইট থেকে অপ্ট-আউট করে নিতে হবে। যদিও সব সাইট ইউআইডি ২.০ ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে না। যদি প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপন দেখার আগ্রহ থাকে, গোপনীয়তা নিয়ে কোনো উদ্বেগ তৈরি না হয় তাহলে ব্যবহারকারীরা ই-মেইল অ্যাড্রেস শেয়ার করতে পারবে। দ্য স্ট্রেইটস টাইমস অবলম্বনে