একটা সময় প্রযুক্তি খাতে হুয়াওয়ে ব্র্যান্ড সবাই এক নামে চিনত। প্রযুক্তি পণ্যের দিক থেকে ব্র্যান্ডটির অবস্থানও ভালো ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য বিরোধ শুরুর পর হুয়াওয়েসহ অনেক প্রতিষ্ঠান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে এবং বৈশ্বিকভাবে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
বিশ্ববাজারে যখন হুয়াওয়ের ভালো অবস্থান ছিল তখন অনেক সহযোগী ও অংশীদার প্রতিষ্ঠান লোগো এবং ব্র্যান্ড নাম ব্যবহারের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়েছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে এটি ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের প্রভাব বিস্তারে সক্ষম। বর্তমান পরিস্থিতিতে নাম ও লোগো ব্যবহার সম্মানহানি করতে পারে। আর এজন্য অংশীদার ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পণ্যে হুয়াওয়ের লোগো ও নাম ব্যবহার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
সব থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠানের জন্য এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্মার্টফোন, গাড়িসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক পণ্যও এর অন্তর্গত। প্রযুক্তিবিশারদদের মতে, এটি হুয়াওয়ের জন্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া প্রচারণা থেকে কোম্পানির নাম রক্ষা করতে পারবে। পাশাপাশি হুয়াওয়ে ব্র্যান্ড নামের অপব্যবহারও প্রতিরোধ করবে।
২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের পরই এ ঘোষণা দেয় চীনের এ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান রেন ঝেংফেই এতে স্বাক্ষর করেন। এর পর তিনি হুয়াওয়ের সব কর্মীকে নতুন ঘোষণা মেনে চলার আহ্বান জানান। অন্যান্য বিভাগকেও একই নির্দেশনা দেয়া হয়।
রেন জানান, নির্দেশনার পর থেকে কোনো গাড়িতে বা ডিজাইনে হুয়াওয়ে লেখা বা লোগো ব্যবহার করা যাবে না। ঘোষণার পর হুয়াওয়ের অংশীদার প্রতিষ্ঠান এআইটিও তাদের গাড়ির প্রচারণায় ব্যবহৃত হুয়াওয়ে লোগোসহ সবকিছু মুছে দিয়েছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং দলও তাদের গাড়ির সামনে হুয়াওয়ের নাম ব্যবহার করতে পারবে না।
অন্যদিকে হুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান জু ঝিজুনও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কিছু ব্যক্তি, কোম্পানি ও সহযোগী হুয়াওয়ে ব্র্যান্ড নামের অপব্যবহার করছে। হুয়াওয়ে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
সম্প্রতি উইবোর এক ব্লগার জানান, লোগো ও ব্র্যান্ড নেম ব্যবহার বন্ধে যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেটি কার্যকরে সব স্টোরকে নির্দেশ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত স্মার্টফোন থেকে সব ধরনের প্রচারণামূলক উপাদান সরিয়ে নেয়ার জন্যই এ নির্দেশনা। এছাড়া হুয়াওয়ে স্মার্ট সিলেকশন ক্যাটাগরির অধীনে যত থার্ড পার্টি স্টোর আছে তাদেরকেও এ ঘোষণা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
কিছু সেলফোন উৎপাদনকারীর হুয়াওয়ের ডিজাইন ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। নির্দেশনার কারণে তাদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো পণ্য বিক্রিতে বা প্রমোশনাল স্লোগানে হুয়াওয়ের নাম ও লোগো ব্যবহার করতে পারবে না বলে সূত্রে জানা গেছে।
হুয়াওয়ে যে শুধু সহযোগীদের ডিজাইন ব্যবহারের সুবিধা দিয়ে থাকে তা নয়। সহযোগীদের পণ্য বাজারজাতেও সহায়তা করে। এর অন্যতম উদাহরণ হলো হাই নোভা ব্র্যান্ড। তাদের একটি স্মার্টফোন হলো হাই নোভা ১০। এতে হুয়াওয়ে নোভা ১০ প্রো-এর বৈশিষ্ট্য ও ডিজাইন ব্যবহার করা হয়েছে। অনলাইন রিটেইল স্টোর ভিমলে হুয়াওয়ে হাই নোভা ফোনের প্রচারণা চালিয়ে থাকে।
নিশ্চিতভাবেই হুয়াওয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘমেয়াদে নিজেদের সুনাম রক্ষা করতে পারবে। পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে ব্র্যান্ড নামের অপব্যবহারও রোধ করতে পারবে।