মোবাইলে ফেসবুক চালু করলেই স্কিনে ভেসে উঠছে একাধিক অনলাইন জুয়ার পেজ। অনলাইন জুয়া পরিচালনা হচ্ছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সাইট থেকে। ফেসবুক-ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে এসব সাইটের তথ্য। অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে উড়ছে কোটি কোটি টাকা। অনলাইন জুয়ার বেশিরভাগ লেনদেন হচ্ছে এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে। এই টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। জুয়াড়ি চক্রের সদস্যরা মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও বেশির ভাগই থাকছে অধরা।
মোবাইল অ্যাপ ছাড়াও অপরাধীরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ডোমেইনের মাধ্যমে সরাসরি অনলাইন গেম বা জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। এজন্য দেশে এবং বিদেশে হোস্টকৃত বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রথমে অ্যাকাউন্ট খুলে নিবন্ধন করা হয়। তারপর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিকাশের মাধ্যমে জমা দিয়ে জুয়ায় অংশ নিতে হয়।
চক্রের সদস্যরা প্রতিদিন বিকাশের মাধ্যমে কোটি টাকার লেনদেন করছেন। যার পরিমাণ বছরে হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মাধ্যমে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। এসব জুয়ার লেনদেনে ব্যবহার করা হচ্ছে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস) অ্যাপ এবং কিছু ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ও কার্ড, যা উদ্বেগজনক বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্র জানায়, অনলাইন জুয়ার টাকা লেনদেন হয় বিকাশের মাধ্যমে। সর্বনাশা জুয়ায় দেশের মোবাইল আর্থিক সেবার অ্যাপসগুলো শুধু ব্যবহৃতই হচ্ছে না, এমএফএসগুলোর মাধ্যমে জুয়ার প্রতিষ্ঠানকে ‘মার্চেন্ট’ হিসেবে অন্তর্ভুক্তি (অনবোর্ড) করার ঘটনাও ঘটছে।
যেভাবে চলছে অনলাইন জুয়া : এক্ষেত্রে ডলার কেনাবেচা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে না। সব সময় বিকাশ মাধ্যমে লেনদেন ও বেট নিতে পারবেন। এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যাংকের কার্ড থেকেও লেনদেন করা যাবে। কয়েন জিতলেই নিজেকে সরিয়ে নিয়ে এজেন্টদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিতে পারেন। কারও কাছে কয়েন বিক্রির জন্য বসে থাকতে হবে না। এজেন্ট থেকে আপনার বিকাশ বা নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ সরাসরি চলে যাবে। এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে ‘সেভেন উইকেট ডটকম লাইভ’ নামে একটি সাইটে জুয়াড়ি চক্রের সদস্যরা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে ছড়িয়ে দিয়েছে জুয়ার নেশা। এ ধরনের শতাধিক বেটিং সাইট সক্রিয় রয়েছে দেশে, যেগুলো সাইটে ভার্চুয়ালি জুয়া খেলে অল্প টাকা বিনিয়োগে বেশি আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অধীনস্থ সুপার এজেন্টদের মাধ্যমে স্থানীয় এজেন্ট বা মাস্টার এজেন্ট নিয়োগ করে থাকে। ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা জামানত রাখা সাপেক্ষে এজেন্ট হওয়া যায়। এসব এজেন্ট জুয়ায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের ভার্চুয়াল চিপস বা কয়েন সরবরাহ করে। সেই চিপস বা কয়েন দিয়ে জুয়া খেলা হয়।
ফেসবুক আইডি, পেজ, গ্রুপ, ওয়েবসাইট ও মোবাইলভিত্তিক এনক্রিপ্টেড অ্যাপ দিয়ে চলছে এই জুয়ার সাইটগুলো। এতদিন বিদেশি আয়োজনে এসব জুয়ার সাইট চললেও এখন দেশিয় অনেক প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষও বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা এসব জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। খোয়াচ্ছে বিপুল পরিমাণ টাকা। অনেকে ধার-দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়ছেন। কিছুদিন আগে জুয়ায় সর্বস্ব হারানো এক জন ব্যাংক কর্মকর্তার ব্যাংক থেকে টাকা চুরির ঘটনা বেশ আলোচনার সৃষ্টি করেছিল। খেটে খওয়া মানুষ দিনের উপার্জনের পুরোটাই দিয়ে দিচ্ছেন এসব অনলাইন জুয়ায়।
ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে অনেক তরুণ। তরুণদের ডিজিটাল প্রতারকদের খপ্পর থেকে রক্ষা করতে ৩৩১টি ওয়েবসাইট সম্প্রতি বন্ধ করেছে সরকার। আরো ৬৯টি নতুন জুয়ার ওয়েবসাইট বন্ধ করতে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তালিকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের টেকনিক্যাল কমিটি। অনলাইন জুয়া বন্ধে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে বলেও জানিয়েছে কমিটি।