১৭ বছর বয়সী রবিনের কোনো স্মার্টফোন নেই। এজন্য বন্ধুবান্ধবের কাছে প্রায়ই কথা শুনতে হয় তার। কারণ ‘বাটন’ ফোনধারী রবিন ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম স্ক্রল করতে পারে না। কল ও টেক্সট দেওয়া-নেওয়ার বাইরে তার ফোন থেকে তেমন কিছুই করা যায় না।
একরকম ঝোঁকের বসেই বাটন বা ফিচার ফোন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রবিন। দুই বছর আগে ফোন হারিয়ে গিয়েছিল তার। হাতে টাকা কম থাকায় একটি সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোনের দোকানে ঢুঁ মারে সে। সেখানে গিয়ে দেখে পুরনো আমলের হ্যান্ডসেটও আছে কিছু। এবং সেগুলোর দামই সবচেয়ে কম। অগত্যা সেখান থেকে একটি বাটন ফোনই বেঁছে নেয় সে। মোবিঅয়্যারের সেই ফোন কিনতে তার খরচ হয়েছিল মাত্র আট পাউন্ড।
এই ফোন ব্যবহার শুরু করার সঙ্গেই এক ধরনের পরিবর্তন অনুভব করতে শুরু করে সে। প্রথম পরিবর্তন হচ্ছে খরচ। মাসিক ডাটার খরচ নিয়ে আর চিন্তা করতে হচ্ছিল না তার।
‘বাটন ফোন নেওয়ার পর আমি আমি বুঝতে পারি স্মার্টফোন আমার জীবনের কত বড় একটা অংশ দখল করে ছিল। ফোনে অনেক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ ছিল। যতটকু কাজ করার সামর্থ্য আছে, কখনোই ততটুকু করতে পারছিলাম না আমি,’ বলে রবিন।
বাটনফোন বিশ্বজুড়েই আবার পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। সফটওয়্যার সংস্থা সিমরাশের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এসব ফোন সম্বন্ধে গুগল সার্চ ৮৯ শতাংশ বেড়েছে।
গত কয়েক বছরে এ ঘরানার ফোনের বিক্রিও বেড়েছে বহুগুণে। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী ৪০ কোটি বাটন ফোন বিক্রি হয়েছিল। ২০২১ সালে এই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ১৪০ কোটিতে। ২০২১ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে প্রতি ১০ জনে একজন বাটন ফোন ব্যবহার করে।
মোবাইল বিশেষজ্ঞ আর্নেস্ট ডকু বলেন, ‘বাটন ফোনের এই পুনরুজ্জীবনের পিছনে বেশ কিছু জিনিসের ভূমিকা রয়েছে। ফ্যাশন, নস্টালজিয়া, এবং টিকটক ভিডিওয়ে ব্যবহার করার চাহিদা থেকে মানুষ এসব ফোন কিনছে। অধিকাংশের জীবনে প্রথম ফোন ছিল বাটন ফোন। তাই এসব ক্লাসিক হ্যান্ডসেটের প্রতি আমরা এক ধরনের নস্টালজিয়া অনুভব করি।’ ডকু জানান, ২০১৭ সালে নোকিয়া তাদের ৩৩১০ হ্যান্ডসেটটি আবারও বাজারে আনে। ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো বাজারে আসা এই সেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত ফোনগুলোর একটি।
‘নকিয়া ৩৩১০ উচ্চ-পযুক্তির মোবাইলের জগতে একটি সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবে হাজির হয় সবার সামনে,’ বলেন ডকু। পাঁচ বছর আগে, মনোবিজ্ঞানী প্রজেমেক ওলেনিকজাক নোকিয়া ৩৩১০-র দ্বারস্থ হন। প্রাথমিকভাবে ব্যাটারির স্থায়িত্বের জন্যই স্মার্টফোন ছেড়ে এই ফোন গ্রহণ করেছিলেন তিনি। কিন্তু কয়েকদিন চালানোর পরই বুঝতে পারেন, শুধু ব্যাটারি না, আরও অনেক গুণাগুন আছে এই ফোনের।
‘ভ্রমণের সময় আমি সবসময় স্মার্টফোনেই বাস এবং রেস্তোরাঁর খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু এখন তো সেটা সম্ভব না। সেজন্য বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই সকল তথ্য টুকে বের হই। আর এতে ভালোই অভ্যস্ত হয়ে গেছি।’
শুধু পুরনো হ্যান্ডসেট না, এখন নতুন নতুন ফিচার ফোনও তৈরি করছে অনেক কোম্পানি। ‘লাইট ফোন’ নামের এক মার্কিন কোম্পানি নতুন এক ধরনের ফোন বাজারে এনেছে যেগুলো বাটন ফোনের মতোই, শুধু কিছুটা আধুনিক। এই ফোনে কল, মেসেজিংয়ের পাশাপাশি গান ও পডকাস্টও শুনতে পারবেন আপনি। এবং ব্লু-টুথ হেডফোন ব্যবহার করতে পারবেন।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, ২০২১ সালে সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড করেছে তারা। আগের বছরের তুলনায় তাদের বিক্রি বেড়েছে ১৫০ শতাংশ। কিন্তু বাটন ফোনের সমগোত্রীয় হয়েও এসব ফোনের দাম কিন্তু একেবারে কম না। ৯৯ ডলার (প্রায় সাড়ে আট হাজার টাকা) থেকে শুরু হয় এসব হ্যান্ডসেটের দাম।
‘স্মার্টফোনের এই আগ্রাসন কিন্তু আর থামবে না। এটি আরও খারাপের দিকে যাবে। ভোক্তারা এখন বুঝতে পারছেন, ঝামেলা আছে এসব প্রযুক্তিতে। সেজন্য বিকল্প নিয়ে হাজির হয়েছি আমরা।’ ট্যাং জানান, তার কোম্পানির প্রধান ভোক্তা শ্রেণির বয়স ২৫ থেকে ৩৫-র মধ্যে। তবে তিনি স্বীকার করেন, তারা আশা করছিলেন মূলত বয়স্করা কিনবে তাদের ফোন।