সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মেটা। দিন দিন বাড়ছে এ অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা। ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত এ অ্যাপ এখন মানুষের নিত্যসঙ্গী। কী নেই এ অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারে! মেটার সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩.০৩ বিলিয়ন। এত বেশি ব্যবহারকারী আনতে মেটা করেছে টানা পরিশ্রম। এতেই তাদের এত সাফল্য। তাই সাফল্যের অংশীদার হতে অ্যাপল, গুগল, মাইক্রোসফটের মতো মেটাতে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার আগ্রহ দেখান অনেকে।
মেটা একটি মার্কিন সংস্থা। এর প্রধান অফিস ক্যালিফোর্নিয়ায়। তবে বিশ্বের একাধিক দেশেই আছে মেটার শাখা। সেখানে মার্কিন কর্তারা কাজের দেখভাল করলেও মূল দায়িত্ব থাকে সে দেশের কর্মীদের কাঁধেই। বিশ্বজুড়ে ৭৭ হাজারের বেশি কর্মী আছে মেটার। সময়ের প্রয়োজনে বাড়ছে কর্মীর চাহিদা। মেটার ওয়েবসাইটে কাজের ধরন, স্থান, ক্যাটাগরি, অ্যাপ (ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, অকুলাস) ও সার্ভিসের ওপর ভিত্তি করে তারা চাকরিগুলো সাজিয়ে থাকে।
মেটার উল্লেখযোগ্য চাকরি হলো-
১. কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিক পলিসি
২. ডেটা বিশ্লেষণ
৩. পণ্য ব্যবস্থাপনা
৪. সিকিউরিটি
৫. বিজ্ঞাপন
৬. ডিজাইন অ্যান্ড ইউজার এক্সপেরিয়েন্স
৭. পিপল অ্যান্ড রিক্রুটিং
৮. সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
৯. টেকনিক্যাল প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট।
মেটায় চাকরির ক্ষেত্রে সাধারণত লিখিত কোনো পরীক্ষা দিতে হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইন্টারভিউয়ের ওপর ভিত্তি করেই চলে নিয়োগ। আপনার যদি ওপরের দক্ষতাগুলো থাকে, তাহলে নজর রাখুন মেটার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে। সেখানে প্রায়ই চাকরির জন্য মক টেস্টেরও আয়োজন করা হয়। হয় অনলাইন টেস্ট। এমনকি ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া কীভাবে হচ্ছে সেসব ভিডিও প্রায়ই আপলোড করা হয় ফেসবুকের অফিসিয়াল পেজে।
মেটার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বাংলাদেশের আবদুল্লাহ আল মামুনের মতে, ‘মেটায় আবেদনের আগে কিছু বিষয় জানা প্রয়োজন। এসব কোম্পানিতে অনেক সিভি জমা পড়ে। তাই টেকনিক্যাল হওয়া জরুরি। প্রতিটা টেক জায়ান্ট কোম্পানির ক্যারিয়ার পোর্টালে চাকরির অপশন দেওয়া থাকে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ডাইরেক্ট আবেদন করা যায়। তার আগে সিভির সঙ্গে লিংকড-ইন প্রোফাইল সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে হয়। প্রয়োজনীয় তথ্যের সঙ্গে সব স্কিল বিস্তারিত উল্লেখ করতে হয়। এছাড়া মেটায় চাকরি করেন পরিচিত কোনো লোক থাকলে তাদের রেফারেন্সে আবেদন করতে পারেন। এতে ইন্টারভিউ পাওয়ার চান্সটা বেশি থাকে।’
ইন্টারভিউ সম্পর্কে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘কয়েক ধাপে ইন্টারভিউ হয়। প্রথমেই রিক্রুটমেন্ট থেকে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। সেখানে একজন আবেদনকারীর পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানা হয়। পাশাপাশি দেখা হয়, তিনি মূল ভাইভা দেওয়ার জন্য যোগ্য কি না। এরপর ফোন স্কিন রাউন্ড হয়। এটি মূলত ভিডিও কলের মাধ্যমে নেওয়া হয়। এখানে কোডিং ও প্রোগ্রামিং স্কিল দেখা হয়। এ রাউন্ডে পাস করার পর আসবে অন-সাইট রাইন্ড বা ফাইনাল রাইন্ড। ফাইনাল রাউন্ডে কয়েক পর্ব থাকে। এতে থাকে সিস্টেম ডিজাইন রাউন্ড। এ পর্বে কোনো একটি সিস্টেম কীভাবে ডিজাইন হয়, সে সম্পর্কে ধারণা দিতে হয়। এছাড়া বিহ্যাভিওরাল ইন্টারভিউ হয়। এখানে আবেদনকারীর আগের কী কী অভিজ্ঞতা আছে, কী কী চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করবে, জবে থাকাবস্থায় সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করেছেন, কারো সঙ্গে মতবিরোধ হলে কীভাবে সমাধান করেছেন, এসব দক্ষতা দেখা হয়।’
সব মিলিয়ে আবেদন করা থেকে শুরু করে রেজাল্ট আসা পর্যন্ত একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। তবে গড় হিসাব করলে দেখা যায়, এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত সময় লাগে। আর বেতন নির্ভর করে দক্ষতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার ওপর। এছাড়া বিশেষ মেডিকেল সেবা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, ট্যাক্স কনসাল্টেশন, বোনাস ইত্যাদি সুবিধাও আছে।