আসছে বছর হতে যাচ্ছে বৈশ্বিক নির্বাচনী বছর। ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনের হাওয়া। নির্বাচনী এ মৌসুমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক আকারে ভুল ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। কারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নীতিমালায় নানা ধরনের পরিবর্তন আনছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।
ফেসবুকের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান মেটা ও ইউটিউবের মালিক প্রতিষ্ঠান গুগলের বিরুদ্ধে অনেকেই এমন অভিযোগ করছেন যে, নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে গিয়ে তাঁরা বাক স্বাধীনতা দমন করছে। এদিকে ইলন মাস্ক টু্ইটার (বর্তমান নাম এক্স) কিনে নেওয়ার পর অনেকেই তাদের ভুয়া অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করেছেন। এসব অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়ানো ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ছিল।
গবেষকরা বলছেন, আগামী বছর বিশ্বের অন্তত ৫০টি দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। মেটা ও গুগলের এসব পদক্ষেপের কারণে শুধু আমেরিকাতেই নয়, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশসহ আফ্রিকার দেশগুলোর নির্বাচনী সময়ে ভুল তথ্যের প্রলয় ঘটে যেতে পারে।
গ্লোবাল কোয়ালিশন ফর টেক জাস্টিস নামের একটি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান চলতি মাসে তাদের মূল্যায়নধর্মী প্রতিবেদনে বলেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অভিভাবক প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২৪ সালের নির্বাচনী সুনামি মোকাবিলায় প্রস্তুত নয়। তারা শুধু তাদের মুনাফার হিসাব চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য, ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচারের জন্য এবং নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য তাদের প্ল্যাটফর্ম যে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে, সেদিকে মোটেও নজর দিচ্ছে না তারা।
গত জুনে ইউটিউব বলেছিল, ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জালিয়াতি ও ত্রুটিপূর্ণ ছিল—এমন দাবিকে যারা মিথ্যা বলে, তাদের কনটেন্ট অপসারণ করা হবে না। তখন ইউটিউবের এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন গবেষকেরা। সে সব সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইউটিউব বলেছে, তারা যদি ওই সব কনটেন্ট সরায়, তবে রাজনৈতিক বক্তৃতা হ্রাস করার অনিচ্ছৃকত প্রভাব পড়বে।
‘বেপরোয়া যুগ’
করোনা মহামারির সময়ে ‘কোভিড মিসইনফরমেশন পলিসি’ গ্রহণ করেছিল টুইটার (এখন এক্স নামে পরিচিত)। সেই নীতি থেকে গত নভেম্বরে সরে এসেছে এক্স। এই পলিসি থেকে সরে আসার ফলেও প্রচুর ভুল তথ্য ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত তথ্য ছড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।
ধনকুবের ইলন মাস্ক গত বছর টু্ইটার অধিগ্রহণের পর হাজার হাজার বন্ধ অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দিয়েছেন। এসব অ্যাকাউন্ট ভুল তথ্য ছড়ানোর আভিযোগে বন্ধ ছিল। গবেষকেরা বলছেন, অ্যাকাউন্টগুলো ফিরে পাওয়ার কারণে ষড়যন্ত্রকারীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠবে এবং এক্স প্ল্যাটফর্মে ভুল তথ্যের মহামারি সৃষ্টি করবে। নাগরিক অধিকারকর্মী নোরা বেনাভিদেজ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ইলন মাস্ক টু্ইটার অধিগ্রহণের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলো একটি বেপরোয়া যুগে প্রবেশ করেছে।
একই ধরনের সমালোচনা করেছেন টেকফ্রিডম নামের থিংক ট্যাংকের প্রেসিডেন্ট বেরিন সজোকা। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলোর বেপরোয়া নীতিগুলো বরং তাদের দুর্বলতাকেই বাড়িয়ে তুলছে। ভুল তথ্য সংক্রান্ত কনটেন্টগুলো সরানোর ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করত বাইডেন প্রশাসন। এ সংক্রান্ত একটি আদেশের ওপর এ মাসের শুরুর দিকে সাময়িক স্থগিতাদের দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের যোগাযোগের ক্ষমতা সীমিত হবে।