গুগলের অনেক প্রযুক্তি পরিষেবার ক্ষেত্রে কোম্পানিটির বড় বাজার ভারত। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশটিতে ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে প্রযুক্তি জায়ান্টটির। উদ্দেশ্য ভারতকে কোম্পানিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন হাবে রূপান্তরিত করা। এর অংশ হিসেবে এবার সেখানে স্মার্টফোন উৎপাদনের কথা ভাবছে কোম্পানিটি। এছাড়াও ভারতে ক্রোমবুক ল্যাপটপও তৈরি করতে যাচ্ছে গুগল। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি এইচপির সঙ্গে চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে কোম্পানিটি।
রয়টার্সে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, অ্যালফাবেটের এক নির্বাহী সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন। এশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি বাজারে নিজেদের অবস্থান আরো শক্তিশালী করতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে প্রযুক্তি জায়ান্টটি।
অ্যালফাবেটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ভারতে তৈরি গুগলের প্রথম ফোন হতে যাচ্ছে পিক্সেল ৮ ও পিক্সেল ৮ প্রো। আগামী বছরের মধ্যেই এসব ফোন বাজারে আসবে। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা হবে। তবে অ্যালফাবেট বা গুগল কারো কাছ থেকেই কোম্পানিগুলোর নাম জানা যায়নি।
গুগলের এক অনুষ্ঠানে কোম্পানিটির ডিভাইস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক অস্টারলো বলেন, ‘আগামী বছরের মধ্যে ভারতে তৈরি এসব স্মার্টফোন বাজারে আসবে এবং রফতানি শুরু হবে। বিশ্বজুড়ে গ্রাহকের হার্ডওয়্যার ও বিল্ট-ইন সফটওয়্যার সক্ষমতার সেরাটা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পিক্সেল ফোনের জন্য ভারতের বাজারকে আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি।’
স্মার্টফোন বিক্রিতে অ্যাপলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বাজার হয়ে উঠেছে ভারত। কোম্পানিটি কয়েক বছর আগে থেকেই ভারতে আইফোন তৈরি শুরু করে। কোম্পানিটির বিক্রি প্রবৃদ্ধিতে দেশটি বড় প্রভাবক হয়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে মোট স্মার্টফোন বিক্রির ৫ শতাংশই হয়েছে ভারতে। দ্বিতীয়ার্ধে তা বেড়ে ৭ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে জানিয়েছে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট। এদিকে ভারতে প্রথম সেমিকন্ডাক্টর প্লান্ট স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মেমোরি চিপ কোম্পানি মাইক্রন টেকনোলজি।
আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ আকর্ষণে বিলিয়ন ডলার মূল্যের আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে নয়াদিল্লি। প্রযুক্তি পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে দেশটির সরকার স্থানীয়ভাবে স্মার্টফোনসহ বিভিন্ন ডিভাইস উৎপাদনে মনোযোগ বাড়াচ্ছে। আর এক্ষেত্রে শুল্ক কমানোসহ নীতি সহায়তার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে দেশটির সরকার।
অন্যদিকে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ভারতের টেলিকম খাতে ফাইভজি ব্যবহারকারী বৃদ্ধির বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া (টিআরএআই)। তথ্যানুযায়ী চলতি বছর শেষে ৩ কোটি ১০ লাখ ব্যবহারকারী ফাইভজি স্মার্টফোনে স্থানান্তর হবে।
এরিকসন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে স্মার্টফোন পরিবর্তনের এ তথ্য উঠে আসে। ফাইভজি প্রযুক্তি চালুর পর ব্যবহারকারীরা দ্রুত এটিতে স্থানান্তর হচ্ছে। আর পুরো সুবিধা পেতে প্রয়োজন উন্নত স্মার্টফোন। এরিকসনের ধারণা, বর্তমানে ভারতে ফাইভজি সেলফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ কোটি ১০ লাখ থেকে ১০ কোটির মধ্যে রয়েছে।
২০২২ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে ফাইভজি পরিষেবা চালু করেন। গত মাসে রিলায়েন্স জিও ও ভারতী এয়ারটেলের মতো কোম্পানি বিস্তৃত পরিসরে নেটওয়ার্ক পরিষেবা চালু করে।
সুইডিশ টেলিকম কোম্পানি এরিকসনের কনজিউমার ল্যাব গ্লোবাল সার্ভে নতুন তথ্য দিয়েছে। ফাইভজি পরিষেবা চালুর পর ভারতে ভালো রেজল্যুশনের ভিডিও স্ট্রিমিং, ভিডিও কলিং, মোবাইল গেমিং ও অগমেন্টেড রিয়ালিটির ব্যবহার বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশে ফাইভজি প্রযুক্তি আগে থেকেই প্রচলিত। কিন্তু এসব দেশের তুলনায় ভারতের ব্যবহারকারীরা ফাইভজি পরিষেবায় ২ ঘণ্টা বেশি সময় ব্যয় করছেন।
এরিকসন কনজিউমার ল্যাবের প্রধান জাসমিত সিং শেঠি বলেন, ‘আমাদের ধারণা চলতি বছরের বাকি সময়ের মধ্যে ভারতের ৩ কোটি ১০ লাখ ব্যবহারকারী ফাইভজি সেলফোনে স্থানান্তরিত হবে।’
আরেকটি বিষয় হচ্ছে প্রথমে যারা ফাইভজি ব্যবহার শুরু করে, তাদের তুলনায় ভারতের ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্টির মাত্রা বেশি।