ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল দক্ষতা সম্পন্ন মানব সম্পদই হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের হাতিয়ার। স্মার্ট নাগরিকরাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। এজন্য প্রচলিত শিক্ষার সাথে ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন করার উপযোগী স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য।
মন্ত্রী গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা অনুষদের প্রফেসর হাবিবুল্লাহ হলে অ্যাকসনিস্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য নেতৃত্বের দক্ষতা শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী নতুন প্রজন্মকে অত্যন্ত মেধাবী আখ্যায়িত করে বলেন, আমাদের সম্পদের নাম হচ্ছে মানুষ। আমরা তাদেরকে সম্পদে পরিণত করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বা যান্ত্রিক শিল্প বিপ্লব নয়, আমরা একটি মানবিক শিল্প বিপ্লব বা পঞ্চম শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়নে কাজ করছি। প্রথম ও দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব মিস করে প্রযুক্তিতে ৩২৪ বছরের পশ্চাদপদতা অতিক্রম করে আমরা মানুষ এবং যন্ত্রের মিশেলে এই মানবিক শিল্প গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের অভিযাত্রা শুরু হয়। এসময় কম্পিউটার প্রযুক্তি সাধারণের ক্রয় ক্ষমতায় পৌছে দিতে ভ্যাট ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ফলে বাংলাদেশ বিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত বলেন, ডিজিটাল সংযুক্তি হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের মেরুদন্ড। ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভের ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল সংযুক্তির শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাড়িয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছে সরকার।
ডাকসুর সুর্যসেন হল শাখার সাবেক নাট্য ও প্রমোদ সম্পাদক মোস্তাফা জব্বার বলেন, সারা পৃথিবীর সেরা লাইব্রেরি হচ্ছে ইন্টারনেট। এটির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা কাজে লাগাতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।
ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত বলেন, বঙ্গবন্ধু কেবল বাঙালি জাতি রাষ্ট্রই প্রতিষ্ঠা করেননি তার জন্যই ভাষাভিত্তিক বাংলা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সময়ে বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, টিঅ্যান্ডটি বোর্ড গঠন এবং আইটিইুউ ও ইউপিইউর সদস্য পদ অর্জনের মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক পশ্চাদপদ এ জনগোষ্ঠীকে ইন্টারনেট ভিত্তিক তৃতীয় শিল্প বিপ্লবে অংশ গ্রহণের ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেন বলে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী স্মার্ট মানব সম্পদের জন্য ডিজিটাল মানব সম্পদ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, স্মার্ট নাগরিক হওয়ার জন্য কম্পিউটার বিজ্ঞানি কিংবা মহাকাশ বিজ্ঞানি হওয়ার প্রয়োজন নেই , দরকার নূন্যতম ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন।
নতুন প্রজন্মকে ডিজিটাল মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, স্মার্ট নাগরিক কিংবা স্মার্ট সমাজ দক্ষ মানবসম্পদের ওপর নির্ভরশীল।
কম্পিউটারে বাংলাভাষার উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় গত পৌনে পনের বছরের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মন্ত্রী বলেন ‘২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়ে সরকার গঠন করেন এবং ২০২৪ সালে আমরা তাকে পুনরায় নির্বাচিত করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। যে কোনো মূল্যে আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত এই দেশটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বে যে রূপান্তর ঘটেয়েছেন তা অব্যাহত রাখতে হবে। এই লক্ষ্যে তিনি সবাইকে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।
অ্যাকসনিস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এএনএম ফকরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স ড. বার্নড স্পেনিয়ার, এটুআই কর্মকর্তা মানিক মাহমুদ এবং অ্যাকসনিস্ট ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি রাইসা নাসের বক্তৃতা করেন।
বক্তারা স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।