প্রযুক্তির ইতিহাস পাঠ করতে গিয়ে ২০২৩ সালকে ঘটনাবহুল হিসেবে জানবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। বছরটি মানুষের জীবনযাত্রাকে কেবল সহজ করেনি, নতুন এমন কিছু চিন্তা হাজির করেছে, যা আগে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। সে ধারাবাহিকতা থেকে ২০২৪ সালকে আরো বেশি সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছেন প্রযুক্তিবোদ্ধারা। নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্য, পরিবহন ও শিক্ষা খাত নিয়ে। আর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ভারি বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসছে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো।
জেনারেটিভ এআই: বাণিজ্যিকভাবে উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন খাতে রীতিমতো বিপ্লব নিয়ে এসেছে জেনারেটিভ এআই। প্রযুক্তি এখন সব কাজ অনায়াসে করছে, যা দীর্ঘদিন মানুষই করত। বর্তমানে কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লেখা, ছবি আঁকা এবং গান তৈরিতে অনায়াসে ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে জেনারেটিভ এআই। জেনারেটিভ এআই সম্পর্কে ধারণা শক্তিশালী করার মাধ্যমে যেকোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা, ডাটা সায়েন্স এবং ক্রিয়েটিভ প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা করে নিতে পারে।
ব্রেইন-কম্পিউটার: ইলোন মাস্কের প্রতিষ্ঠান নিউরোলিংক ২০২৪ সালে প্রযুক্তির দুনিয়ায় নতুন চমক হাজির করতে পারে। কম্পিউটার ব্রেইন নিয়ে গবেষণা এগিয়ে যাবে আরো কয়েক ধাপ, যা মানুষের সক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেবে। জয় করবে চোখ ও অন্য অঙ্গহানির মতো বিষয়। কিন্তু নিউরােলিংকের লক্ষ্য এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। কোম্পানিটি মানুষ ও চারপাশের দুনিয়ার মধ্যকার যোগাযোগ ব্যবস্থায়ই মৌলিক পরিবর্তন করতে চায়। ২০২৩ সালে অনুমোদন পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত এগিয়ে চলছে। যারা শারীরিকভাবে অক্ষম, তাদের জন্য নতুন মাইলফলক তৈরি করবে নিউরোলিংক। স্বাভাবিকভাবেই আগামী দিনগুলোয় এটা অন্যতম আকর্ষণের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
ড্রোন: ড্রোন খুব দ্রুত বিবর্তিত হচ্ছে। গ্রহণ করে নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেন্সর, ব্যাটারি ও স্বয়ংক্রিয় পরিচালন প্রক্রিয়া যা ব্যবসায়িক চিন্তাধারায় এরই মধ্যে পরিবর্তন এনেছে। ওপর থেকে ছবি ও ভিডিও ধারণের মাধ্যমে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। তাছাড়া যেসব জায়গায় আগে পণ্য সরবরাহ করা কঠিন হয়ে যেত, ড্রোন সেখানে পৌঁছানো সহজ করে দিয়েছে। ফসলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, সেচ ব্যবস্থাপনা, রিয়েল এস্টেট পর্যবেক্ষণ। এছাড়া প্রকৌশল ও পরিবহন খাতেও ভূমিকা রাখবে ড্রোন।
গেম: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের উত্থানের গুরুত্বপূর্ণ একটা উদাহরণ গেমিফিকেশন। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষা খাতকে উপভোগ্য করে তোলা যায়। পাশাপাশি গ্রাহককে ফিডব্যাক, রিওয়ার্ডস এবং রিকমেনডেশনের মাধ্যমে সম্পৃক্ততা বাড়ায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মানুষের আচরণকে শনাক্ত করা হয়। এছাড়া তা বিবেচনার মাধ্যমে সম্পৃক্ত বাড়ানোর জন্য নেয়া হয় পদক্ষেপ। ভোক্তার চাহিদায় আরো বেশি নির্দিষ্ট ধারণা লাভ করা যায়। আগামী বছর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং গেমিফিকেশনের মধ্যকার সম্পর্ক আরো গভীর হবে। গেমিফিকেশনের বড় পরিবর্তন এর মধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে ফিটনেস অ্যাপগুলোর ক্ষেত্রে। সেখানে রিওয়ার্ড দেয়া এবং অভ্যাস গড়ে তোলার চর্চা রয়েছে। এদের মধ্যে সবার আগে রয়েছে প্লেফিট। প্লেফিটের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে পুশ-আপ কিংবা স্কোয়াট করা যায়। এর পরে এটি গেমিংয়ের মতোই রিওয়ার্ড দেয়। তার মধ্যে রয়েছে পয়েন্ট, লেভেল কিংবা ব্যাজ। এ ধরনের পদক্ষেপ ফিটনেসের ক্ষেত্রেও গেমের আনন্দ দেয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা: মানুষ ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠছে। তারা ব্যবহারের বিশ্বাস ও আস্থা বাড়াতে চায়। ফলে ডিজিটাল নিরাপত্তা একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন আকারে দেখা দিয়েছে। মানুষ ডিজিটাল দুনিয়ার গতিবিধিকে আরো নিরাপদ রাখতে চায়। সাইবার সিকিউরিটি ও এথিক্যাল হ্যাকিং একটা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে আগামী দিনগুলোয়। এ দুই ক্ষেত্রে চাকরি তৈরি হবে। মাস্টার্স এমনকি ডিপ্লোমাও সুবিধা দেবে উচ্চ বেতনের পেশায়। সম্প্রসারিত হবে সাইবার সিকিউরিটি, সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ার, সিকিউরিটি আর্কিটেক্ট এবং নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি অ্যানালিস্ট হয়ে উঠছে জরুরি অনুষঙ্গ। এর মধ্যেই সেন্সর এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সম্ভাবনা বিস্তৃত হয়েছে। পোনটোসেন্সের কথা উল্লেখ করা যায়। পোনটোন্সের কয়েন সদৃশ সেন্সর আবিষ্কার করেছে, যার মাধ্যমে যাত্রীদের হার্ট রেট, ব্রিদিং রেট এবং অন্যান্য তথ্য রাখা হবে। পরবর্তী সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে এ তথ্যকে ইন্টারপ্রিট করে অর্থপূর্ণ সিদ্ধান্ত তৈরি করা হবে। কাজ করবে সহায়ক হিসেবে।
স্বাস্থ্যসেবা: স্বাস্থ্যসেবা খাতে ২০২৪ সালে আরো বেশি কার্যকর ও উপযোগী প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটবে। তার একটি হলো শ্রবণ সমস্যা দূরীকরণ। এক্ষেত্রে দৃষ্টি ও শ্রবণসীমার সমন্বয় করে তৈরি করা হবে ডিভাইস। ফলে শ্রবণজনিত সমস্যা কমে আসবে আগামী দিনগুলোয়।
মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে উইভিবিন ইনকরপোরেশনের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ল্যাটনার থেরাপি সামনে আনছেন। উইভিবিনের যুগান্তকারী এ প্রযুক্তি নিউরোলজিক্যাল সমস্যা শনাক্ত ও সমাধানে ব্যবহৃত হবে। প্রতিষ্ঠানের উন্মুক্ত করা চেজার অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারী তাদের মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষণ দিতে ও পরীক্ষা করতে পারছে। স্কেল কমিউনিটির মতো এক্সপার্ট সিস্টেমের মাধ্যমে তথ্যের সম্প্রসারণ সম্ভব। তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্য পরিষেবা রোগীদের চিকিৎসায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
শিক্ষা খাত: শিক্ষা খাতে প্রতিবন্ধকতা দূর করে নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত করবে প্রযুক্তি। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ব্লুমবক্স ডিজাইন ল্যাবসের মতো প্রতিষ্ঠান। ব্লুমবক্স ডিজাইন ল্যাবস কাজ করে ডিজাইন নিয়ে। এর মধ্য দিয়ে এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে যাবে। আরো কিছু প্রযুক্তি রয়েছে উদীয়মান পর্যায়ে। এছাড়া পরিবেশ অনুকূল প্রযুক্তি এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হয়ে উঠবে।