বৈশ্বিক পর্যায়ে শক্তিশালী অবস্থান তৈরিতে প্রযুক্তি খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এদিক থেকে চীন আগে ভালো অবস্থানে থাকলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে বাজার হারাচ্ছে। তাই এ খাতে স্বনির্ভরতা অর্জনে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটি।
চীনা পার্লামেন্টের বার্ষিক বৈঠকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে শুরু করে মহাকাশ প্রযুক্তিসহ ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত শিল্পগুলোকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। একই সময়ে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য উৎপাদন ও নির্দিষ্ট পরিষেবা খাতে প্রবেশাধিকার বাড়ানোর প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে।
কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী সময়ে প্রত্যাশার চেয়ে ধীরগতির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও চীনা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের কারণে বিদ্যমান বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের মধ্যে এ ঘোষণা সামনে এল। চীনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও আত্মনির্ভরশীলতার প্রচেষ্টা এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ভূরাজনৈতিক টানাপড়েনও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করছে।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স চীনের চেয়ারপারসন শন স্টেইন জানান, সংস্কার পরিকল্পনাগুলো ইতিবাচক হলেও তার প্রভাব পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে।
যদিও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর আগে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় শিল্পোৎপাদন খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানোর রূপরেখা দিয়েছিলেন। তবে বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে। চীনের দ্য ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশন টেলিকম ও চিকিৎসা পরিষেবার মতো শিল্পের বাজারে প্রবেশের বিধিনিষেধ সহজ করার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু এসব বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি।
অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের ফলে এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো চীনের শিল্পোৎপাদন খাতে বিদেশী বিনিয়োগ কমেছে। হুন্দাই মোটর ও ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল করপোরেশনের মতো কোম্পানিগুলো চীনে তাদের ব্যবসায়িক কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। যেমন সম্প্রতি হুন্দাই একটি যৌথ উদ্যোগের প্লান্ট এবং ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল একটি ফ্ল্যাশ মেমোরি তৈরির কারখানার অংশীদারত্ব বিক্রি করেছে।
চীনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে স্বনির্ভরতা ও শক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন। সম্প্রতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং একই লক্ষ্যমাত্রার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। চীন তার লক্ষ্য অর্জনে সম্পদ পরিচালনায় সরকারের ভূমিকার ওপর জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৩ সালে ঘোষিত পুনর্গঠনে ওই মন্ত্রণালয়ের বড় ধরনের রদবদলের পর গত বছর থেকে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি প্রযুক্তি সম্পর্কিত নীতিনির্ধারণের পরিবর্তনে বড় পদক্ষেপ নেয়। এ প্রচেষ্টাগুলো কিছুটা অগ্রগতি দেখিয়েছে। যেমন গত আগস্টে চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ে নতুন স্মার্টফোন বাজারে এনেছে। যাতে ব্যবহার করা হয়েছে চীনের নিজস্ব একটি চিপ।
প্রধানমন্ত্রী লি কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও লাইফ সায়েন্সের জন্য চীনের বাজার উন্মুক্ত করতে চায়। কৌশলগত ও শিল্প উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মসূচি চালু করার পাশাপাশি বিগ ডাটা, বাণিজ্যিক মহাকাশ ফ্লাইট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।