হুয়াওয়ের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় বেইজিং পাল্টা ব্যবস্থা নিলে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে অ্যাপল। অন্তত একজন বিশ্লেষক মনে করছেন, চীনের পাল্টা ব্যবস্থার প্রভাব হবে ভয়াবহ। কিছু মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি হতে পারে বিপর্যয়কর। খবর বিজনেস ইনসাইডার।
সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির আশঙ্কায় দেশের বাইরের কোনো কোম্পানির তৈরি টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম ক্রয়, সংযোজন অথবা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে এক নির্বাহী আদেশে গত বুধবার স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই আদেশে হুয়াওয়ের নাম উল্লেখ না করা হলেও লক্ষ্য যে এই চীনা প্রতিষ্ঠান, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ আদেশের ব্যাখ্যায় জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের এ নির্বাহী আদেশের ফলে এখন থেকে হুয়াওয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো মার্কিন কোম্পানি থেকে কোনো সরঞ্জাম কিনতে পারবে না।
নিজেদের যন্ত্রাংশের মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসা চীনা টেক জায়ান্ট হুয়াওয়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এতে দেশটির ফাইভজি প্রযুক্তির অগ্রগতিই বাধাগ্রস্ত হবে।
এ ব্যাপারে মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ স্ট্র্যাটেজিস ইনকরপোরেশনের বিশ্লেষক টিম বাজারিন বলেন, এ নির্বাহী আদেশ যে হুয়াওয়েকে লক্ষ্য করেই, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যদিও হুয়াওয়ের গুপ্তচরবৃত্তির কোনো প্রমাণ এখনো মেলেনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য নিষিদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ সত্য হতেও পারে। কিন্তু চীন মার্কিন পণ্য নিষিদ্ধ করে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। এটা অনেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতি হতে পারে, যাদের চীনে বড় বাজার রয়েছে।
বাণিজ্যযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে উভয় দেশ বিপুল পরিমাণ পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে। এর মধ্যে কিছু মার্কিন পণ্যের ওপর চীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে। যদিও আগামী মাসে জাপানে অনুষ্ঠেয় জি২০ সম্মেলন সামনে রেখে এ নির্বাহী আদেশকে ট্রাম্পের হুমকি বলে মনে করছেন ওয়েডবুশ বিশ্লেষক ডন আইভস। তবে এ হুঙ্কার যুক্তরাষ্ট্রের কিনারলগ্ন প্রযুক্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নাড়া দেবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, চীনের পাল্টা ব্যবস্থা এনভিডিয়া, কোয়ালকম ও ইন্টেলের মতো চিপ নির্মাতাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন বার্নস্টেইন বিশ্লেষক স্ট্যাসি রাসগোন। তিনি বলেন, হুয়াওয়ে সেমিকন্ডাক্টরের বড় ক্রেতা। কিন্তু হুয়াওয়ে মার্কিন সেমিকন্ডাক্টর কেনা বাদ দিলে নতুন সাপ্লাই চেইন দাঁড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ এর ফলে প্রযুক্তি সরঞ্জামের আন্তর্জাতিক বাজারে অন্য কোম্পানির কাছে চীনা কোম্পানিগুলো অংশীদারিত্ব হারাবে। তবে অন্তর্বর্তী সময়টা খুব বাজেভাবে যাবে বলেই মনে করেন তিনি। এসব কিছুর পরও চীনের পাল্টা ব্যবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান প্রযুক্তি কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাতে কোনো দ্বিমত নেই তার।
সেদিক থেকে সবচেয়ে অরক্ষিত অবস্থায় আছে অ্যাপল। এমনটিই মনে করছেন ওয়েডবুশের বিশ্লেষক আইভস। তিনি বলেন, অ্যাপলই চীনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে কিনা সেটাই চিন্তার বিষয়। তবে তাত্ক্ষণিকভাবে প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) ক্রফোর্ড ডেল প্রিট।
এদিকে ইউয়ানের বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হয়ে ওঠায় প্রান্তিক মুনাফা ধরে রাখতে গত বছর চীনে আইফোনের দাম বাড়াতে বাধ্য হয় অ্যাপল। এ ধাক্কা সামলাতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে হ্যান্ডসেটের পাইকারি দাম কমিয়ে দেয়। এছাড়া বাণিজ্যযুদ্ধে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়া চীনের অর্থনীতি ও হুয়াওয়ের সিএফও মেং ওয়াংঝু গ্রেফতারের প্রতিক্রিয়ায় জাতীয়তাবাদের উত্থানও আইফোনের বিক্রি কমিয়ে দিয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চীনে ৩০ শতাংশ কম আইফোন সরবরাহ করেছে অ্যাপল। ফলাফল হিসেবে চীনে কোম্পানিটির বাজার অংশীদারিত্ব ১০ দশমিক ২ থেকে ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নেমেছে।