বৈশ্বিক অনুসন্ধান জায়ান্ট গুগলের ছত্রচ্ছায়ায় সব সাইট। যে কারণে গুগলের নখদর্পণে বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের গ্রাহকদের কেনাকাটার তথ্য। পণ্য পছন্দ থেকে বিলের অংক—সবকিছুর তথ্য সংরক্ষণ করছে গুগল। বিপুলসংখ্যক মানুষের কেনাকাটার তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত জিমেইল ইনবক্স স্ক্যানিং করে আসছে। অনলাইনে কোত্থেকে কী কিনছেন, একটি পণ্য কতবার কিনেছেন, কোন পণ্যের প্রতি আপনার দুর্বলতা রয়েছে, তার সব তথ্যই চলে যাচ্ছে গুগলের হাতে।
গুগলে অনুসন্ধান না করে কোনো ই-কমার্স সাইট যেমন ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজন, সুইগি থেকে পণ্য কিনলেও গুগল নিজের কাছে রেখে দিচ্ছে গ্রাহকের কেনাকাটার তালিকা। এমনকি স্থানীয় বিভিন্ন সাইট থেকে পণ্য কেনার তথ্যও প্রতিষ্ঠানটির হাতে রয়েছে। কারণ বিলের অনলাইন রিসিপ্ট পৌঁছে যাচ্ছে গ্রাহকের ব্যক্তিগত জিমেইল অ্যাকাউন্টে, যা নিয়মিত স্ক্যান করে আসছে গুগল।
সিএনবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুগলের অনলাইন ‘পারচেজ’ তালিকায় ২০১২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সব কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। যঃঃঢ়ং://সুধপপড়ঁহঃ.মড়ড়মষব.পড়স/ঢ়ঁত্পযধংবং লিংকে ক্লিক করলে দেখা যাবে, এ পর্যন্ত একজন গ্রাহক বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট থেকে অনলাইনে যা কিছু কিনেছেন, তার তালিকা সাজিয়ে রেখেছে গুগল।
গুগলের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, গ্রাহকের সুবিধার জন্যই বানানো হয়েছে এ অনলাইন কেনাকাটার ট্র্যাক লিস্ট। যাতে তারা খুব সহজে মনে করতে পারেন, কী কিনেছিলেন, কোত্থেকে কিনেছিলেন, বুকিং এবং কোথায় কোথায় সাবস্ক্রিপশন করেছেন।
তিনি বলেন, গুগলের খাতায় যদি আপনি আপনার গোপন তথ্য না রাখতে চান, তাহলে রয়েছে ডিলিট অপশন। গুগল কখনই বিজ্ঞাপনের জন্য এসব তথ্য বিক্রি করে না। উল্লিখিত লিংকে ক্লিক করার পরই যার অনুমোদন চোখে পড়বে, যা একজন গ্রাহক চাইলে গুগলের ট্র্যাক তালিকা থেকে মুছে ফেলতে পারবেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অপশন থাকলেও গুগলের ট্র্যাক তালিকা থেকে অনলাইন কেনাকাটার তথ্য মুছে ফেলার কাজটা খুব সহজ নয়। একজন গ্রাহক দীর্ঘদিন ধরে যা কিছু কিনেছেন, সেসব পেজে গিয়ে ‘রিমুভ পারচেজ’ অপশনে ক্লিক করে ‘টু রিমুভ দিস পারচেজ, ডিলিট দ্য ইমেইল’-এ ক্লিক করতে হবে।
অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশন নিয়ন্ত্রিত গুগলের বিরুদ্ধে এর আগে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহারকারী প্রত্যেকের লোকেশন ডাটা বা অবস্থানগত তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল। প্লাটফরমটির গ্রাহকরা গোপনীয়তা রক্ষায় ডিভাইসের লোকেশন ডাটা ফিচার বন্ধ রাখলেও কৌশলে তাদের অবস্থানের তথ্য সংগ্রহ করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। গোপনে অবস্থানগত তথ্য সংগ্রহের এ কৌশলকে বলা হয়েছিল ‘ডার্ক প্যাটার্ন’। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের ভুল পথে চালিত করে তাদের তথ্যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল গুগল।
গুগলের পক্ষ থেকে সে সময় গ্রাহকদের অবস্থানগত তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ স্বীকার করে নেয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে বলা হয়েছিল, এসব তথ্য বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার কিংবা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হয় না। এর আগেও বিপুলসংখ্যক অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহারকারীর অবস্থানগত তথ্য সংগ্রহের চর্চা থেকে বেরিয়ে আসার পদক্ষেপ নেয়া হয় বলে জানিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, গুগলের গ্রাহক তথ্য সংগ্রহের চর্চা বেশ ভয়ানক। কারণ ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় যেকোনো সতর্কতা অবলম্বন করলেও ডিভাইস ইন্টানেটে যুক্ত করলে অ্যান্ড্রয়েড সফটওয়্যার অবস্থানগত তথ্যের পাশাপাশি আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিরবচ্ছিন্নভাবে গুগলের কাছে পাঠাতে থাকে। এটি এমন এক ফিচার, যা গ্রাহককে না জানিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছে। অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন কিংবা ই-কমার্স সাইট থেকে পণ্য কেনার সময় ব্যবহারকারী চাইলেও এ কার্যক্রম থেকে রেহাই পাবেন না। বহুজাতিক প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর গ্রাহক তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম নতুন কিছু নয়। হরহামেশাই শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকের নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ উঠছে।