সরকারের দয়া দাক্ষিণ্য নয়, পলিসি সমর্থনে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করতে চায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীরা। এই খাতের নেতারা বলেছেন, সরাকার যদি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তির চেয়ে দেশী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সুযোগ নিশ্চিত করে,ইন্ডাসাট্রির জন্য পর্যাপ্ত শীর্ষ ও মধ্যম সারির দক্ষ জন সম্পদ গড়ে তুলতে পারে এবং ব্যবসায় ব্যয় কমায় ও সহজী করন করে তবে আর প্রণদোনা চাইবে না তারা।
রবিবার বেসিস সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বাজেট পরবর্তী যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানান তারা। তারা বলছেন, প্রতিটি খাতকে স্মার্ট হতে প্রযুক্তির ব্যাবহারের বিকল্প নেই। সেই পথ দিয়ে আইটিইএস সেবার কর অবকাশ মেয়াদ আরো তিন বছর বাড়িয়ে নতুন প্রযুক্তিকে অন্তর্ভূক্ত করাকে সাধুবাদ জানান তারা। তবে আগের তালিকা থেকে সাতটি বিষয় বাদ দেয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে বৈদেশীক মুদ্রা বাঁচাতে ওয়েব হোস্টিং ও ক্লাউড সেবাকে আইটিইএস সেবায় অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানিয়ে অবকাশ মেয়াদ তিন বছর থেকে পাঁচ বছরে উন্নীত করার প্রত্যাশা করেছেন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।
তবে ২০৩১ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জনিয়ে বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরিফ প্রশ্ন তোলেন কোন যুক্তিতে মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশনের মতো খাত বাদ দেয়ায় আইসিটিতে রপ্তানি আয় কমবে। তার কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে বেসিস সভাপতি বলেছেন, নিজেদের সক্ষমতা অর্জনে আমাদের এই সুযোগ দরকার। এই সুবিধা পেলে বিদেশী বিনিয়োগ আসবে। ব্রেইন ড্রেইন কমবে।
রাসেল টি আহমেদ আরো বলেছেন, “বর্তমানে দেশের ক্লাউড সার্ভিস এবং ওয়েব হোস্টিং এর ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজারের মাত্র ১০% দেশীয় উদ্যোক্তাদের হাতে রয়েছে। নতুন করে একে করের আওতায় আনা হলে তা দেশীয় উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করবে। ওয়েব হোস্টিং ও ক্লাউড সার্ভিসেসের স্থানীয় বাজার যেভাবে বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে তাতে করে বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তি ও পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্বুদ্ধ করতে এই দুটি খাতকে কর অব্যাহতির আওতায় অবশ্যই রাখা প্রয়োজন। হাই-টেক পার্কের বিনিয়োগকারীরা তাদের বর্তমান শুল্কমুক্ত সুবিধা হারিয়ে প্রায় সমস্ত ক্যাটাগরির মূলধনি যন্ত্রপাতির ওপর ১% আমদানি শুল্কের মুখোমুখি হতে পারেন। এটি পুনর্বিবেচনা করে হাই-টেক পার্কের বিনিয়োগকারীদের জন্য বর্তমান শুল্কমুক্ত সুবিধা বহাল রাখার আহবান জানাচ্ছি।
বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বললেন, বাজেটে ক্লাউড সার্ভিস, আইটি প্রোসেস আউটসোর্সিং, মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন এবং এনটিটিএন সেবার মতো খাতগুলো থেকে কর অব্যাহতির বিষয়টি তুলে নেওয়ায় হয়েছে। ফলে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে । অন্যদিকে মোবাইলের সিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবায় সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করায় মোবাইল ইন্টারনেট সেবার ব্যয় বাড়বে। মোবাইল ইন্টারনেট এবং প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেটের সম্প্রসারণ ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জন করা সম্ভব নয়।”
ওয়েব হোস্টিং, ক্লাউডে চাপ পড়লে তা ই কমার্সের ওপর প্রভাব ফেলে উল্লেখ করে আম্বারিন রেজা বলেন, ক্যাশলেস হতে সরকার পেমন্টের ক্ষত্রে প্রণোদনা দেয়া, ইলার্নিং এ কর অব্যাহতি এবং ক্ষুদ্র ও কুটির উদ্যোক্তাদের টিডিএস উঠিয়ে নেয়ার দাবি করছি।
তিনি আরো বলেন, “ই-কমার্স ও স্মার্ট লজিস্টিক সেবা বিস্তৃত করতে লজিস্টিক খাতের বর্তমান ভ্যাট প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। কারণ এতে করে অনলাইনে বিক্রিত পণ্য সেবা এবং প্রচলিত দোকানের পণ্য সেবায় দামের পার্থক্য তৈরী হয়। এতে করে অনলাইন পণ্য সেবার উদ্যোক্তারা লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড পান না। তাই ই-ক্যাবের প্রস্তাবনা অনুসারে যেসব প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পণ্য সেবা ডেলিভারী করে তাদের ক্ষেত্রে ভ্যাট প্রত্যাহার। এবং যেসব প্রতিষ্ঠান তৃতীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য এই সেবা দেয় তাদের জন্য নূন্যতম ৫% ভ্যাট হতে পারে। ডিজিটাল পেমেন্টকে উৎসাহিত করতে এই সেক্টরে পেমেন্ট চার্জ সমমানের ন্যূনতম দুই শতাংশ ক্যাশ ইন্সেটিভ প্রদান করার দাবি জানাচ্ছি। পেমেন্ট গেটওয়ে চার্জকে উৎসে কর কর্তন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করার যৌক্তিক আহবান জানাচ্ছি।”
বাজেট দেখে মন খারাপ উল্লেখ করে আইএসপিবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, আইএসপিগুলো শতভাগ দেশী প্রতিষ্ঠান। তাদের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে তৃতীয় বারেও আইটিইএস-এ অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। এটা হতাশা জনক। দেশে ব্রডব্যন্ড পেনিট্রশন এখন ১০ শতাংশ। স্মার্ট বাংলাদেশ ব্স্তবায়নে এই হার ৬০ শতাংশে উন্নীত করা হবে।
তার দাবি, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর ১০% (এআইটি) ও অনু, ওএলটি এর ওপর বর্তমানে ৩৭% আরোপিত ভ্যাট ও শুল্ক এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যবহৃত সকল সামগ্রীর উপর শুল্ক না কমায় ইন্টারনেট সেবার প্রসার ও ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হবে।