সিলিকন ভ্যালির একজন বর্ষীয়ান পেটেন্ট আইনজীবী দাবি করেছেন, চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ তৈরিতে জোর দিচ্ছে। এ খাতে দেশটি যেভাবে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে আছে, তা মার্কিন প্রযুক্তি শিল্পের জন্য ভয়ংকর হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। ডেনিস ফার্নান্ডেজ নামে ওই আইনজীবী চলমান সিনো-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে এমন দাবি করলেন। এর মধ্যে মার্কিন প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী, চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থগিত করেছে গুগল।
ডেনিস ফার্নান্ডেজ সিলিকন ভ্যালিতে অন্তত দুই দশক কাটিয়েছেন। উদ্ভাবক, স্টার্টআপ এবং বিনিয়োগকারীদের পেটেন্ট সুরক্ষায় কাজ করে আসছেন তিনি। অর্থাৎ প্রযুক্তিজগতে বিস্তর অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তিনি। এ কারণে তার দাবির বিষয়টি সিলিকন ভ্যালি বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই নিচ্ছে।
ফার্নান্ডেজ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি মেধাস্বত্বের গতিপ্রকৃতি দেখে বেশ ধাক্কা খেয়েছেন। চীনা কোম্পানিগুলো এআই চিপ তৈরিতে অসম্ভব গুরুত্ব দিচ্ছে। আর এ ধরনের প্রযুুক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিপুল পরিমাণে পেটেন্ট আবেদন করা হচ্ছে।
বিজনেস ইনসাইডারকে তিনি বলেন, এআই পেটেন্ট আবেদনের দিক থেকে চীন এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে। কাস্টম স্মার্ট চিপ ডিজাইনের ক্ষেত্রে মার্কিন দুর্গ দ্রুতই ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
সিলিকন ভ্যালিতে ১৯৯৯ সাল থেকে মেধাস্বত্ব ও পেটেন্ট পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন ডেনিস ফার্নান্ডেজ। অ্যাপলের প্রথম দিকের বেসিক ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন ডিভাইস এবং মিডিয়া সার্ভিসের পেটেন্ট আবেদন নিয়েও তিনি কাজ করেছিলেন। সম্প্রতি তিনি নিউ মেক্সিকো স্টেট ইউনিভার্সিটির অ্যারোহেড সেন্টারের মেধাস্বত্ব বিভাগের প্রধান হয়েছেন।
ফার্নান্ডেজ বলেন, প্রাথমিক যুগের এআই প্রযুক্তি উন্নয়নের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র এখনো নেতৃত্বের আসনেই আছে। তবে এরই মধ্যে চীনের কয়েকটি স্টার্টআপ কোম্পানি এআই হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সিস্টেম তৈরিতে কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের লক্ষ্য মূলত স্বয়ংচালিত যান, পরবর্তী প্রজন্মের ফাইভজি হ্যান্ডসেট, পাশাপাশি আধাসামরিক নজরদারি ব্যবস্থার দিকেও তাদের মনোযোগ রয়েছে।
আটলান্টাভিত্তিক আইনি প্রতিষ্ঠান কিলপ্যাট্রিক টাউনসেন্ড অ্যান্ড স্টকটনের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় চীনের এআই প্রযুক্তির উত্থানের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এআই সম্পর্কিত পেটেন্ট আবেদনের হারের ভিত্তিতে তারা বলেছে, চীনে এআই প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতি ঘটছে।
ওই গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে চীনা কোম্পানির এআই পেটেন্ট আবেদনের সংখ্যা ছয় গুণ বেড়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ এআই প্রযুক্তি খাতে বিশ্বে নেতৃত্ব দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। ফলে এ খাতে বছর বছর দেশটির বিনিয়োগ বাড়ছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফার্নান্ডেজের মতে, চীনের দৃষ্টি মূলত সেমিকন্ডাক্টর ব্যবসার দিকে।
চীনের এআই চিপসংশ্লিষ্ট অনেক পেটেন্ট আবেদন তার হাত দিয়েই গেছে বলে জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রেই অনেক চীনা স্টার্টআপ এবং বিনিয়োগকারী এ খাতে বিনিয়োগ করছেন উল্লেখ করে ফার্নান্ডেজ বলেন, একটা বিষয় খুব চাউর যে, চীনারা আমেরিকান চিপ ইন্ডাস্ট্রিকে নকল করছে, বিশেষ করে উৎপাদন প্রক্রিয়া। কিন্তু আসল বিষয় হলো, এসব চীনা প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে উচ্চ প্রান্তিক উৎপাদনের ব্যবসার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা নিজস্ব চিপ ডিজাইন করছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ধারণা এরই মধ্যে কয়েক দশক পার করে ফেলেছে। তবে অতি সম্প্রতি এ প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। বিশেষ করে স্বয়ংচালিত গাড়ি, খুচরা বিক্রয় ব্যবস্থাপনা এবং ডিজিটাল বিজ্ঞাপন খাতে এ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ডিপ লার্নিংয়ের উন্নয়নে গত কয়েক বছরের মধ্যে এআই অবিশ্বাস্য রকম মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ডিপ লার্নিং মূলত মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্রম অনুকরণ করতে পারার বিশেষ এক সফটওয়্যার। আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এ ডিপ লার্নিং প্রযুক্তি মানুষের মস্তিষ্কের মতোই বিশাল আকারের ডাটা প্রক্রিয়াকরণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করছে।
ফার্নান্ডেজ বলেন, তবে এ ধরনের সফটওয়্যারকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে গেলে ইন্টেল বা এএমডির মতো প্রচলিত প্রসেসর দিয়ে খুব একটা কাজ হয় না। অবশ্য গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিটস বা জিপিইউ এআই সিস্টেম চালানোর মতো কাজ করতে সক্ষম হয়ে উঠছে। বিশেষ করে এনভিডিয়ার মতো কোম্পানি, যারা মূলত গেমিংয়ের জন্য জিপিইউ বানায়, তারা এখন এআইয়ের জন্য উপযুক্ত হার্ডওয়্যার তৈরির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। আবার ২০১৫ সালে এআই চিপ প্রস্তুতকারক নার্ভানা সিস্টেমস কিনে নেয়ার মধ্য দিয়ে চিপ জায়ান্ট ইন্টেলও এআই প্রযুক্তিতে নিজেদের আগ্রহের কথা জানান দিয়েছে।