প্রচলিত আইন তোয়াক্কা না করে দেশের অন্যতম সেরা মোবাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠান নগদে আইন বহির্ভূতভাবে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। মূলত নগদকে ধ্বংস করার মাধ্যমে অপর একটি প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি সুবিধা দেওয়ার জন্যেই পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করা হয়েছে বলে মনেকরেন নগদের প্রতিষ্ঠাতা তানভীর এ মিশুক।
একই সঙ্গে নগদের কর্মীদেরকে হয়রানি বন্ধ করা এবং জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য না করতে সংশ্লিষ্টদের প্রকি অনুরোধ করেন তিনি। গত ১০ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে রিটটি দায়ের করেন ব্যারিস্টার নওশাদ জমির।
“প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘পরিশোধ ও নিস্পত্তি ব্যবস্থা আইন ২০২৪’এ সুস্পস্টভাবে পদ্ধতিগত দিকটি বর্ণনা করা হলেও তা প্রতিপালন করেননি বাংলাদেশ ব্যাংক। বরং অত্যন্ত তড়িঘড়ি করে নগদে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। ঘটনার পরমপরা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বিশেষ একটি পক্ষের প্রেসক্রিপশানে এই কাজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক,” বলেন তানভীর।
তিনি বলেন, আইন অনুসারে কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগের প্রয়োজন হলে আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদেরকে জানাতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানটিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু নগদের বেলায় আইনের এই ধারা অনুসরণ করেননি তারা। ‘পরিশোধ ও নিস্পত্তি ব্যবস্থা আইন ২০২৪’এর ৩১(২) ধারায় এর সুস্পস্ট উল্লেখ আছে।
“আইনগত এই ব্যত্যয় ঘটিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ একটি পক্ষকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমরা মনেকরি অত্যন্ত তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদে প্রশাসক নিয়োগ করেছে। এ বিষয়ে আইনগত প্রতিকার চাইতেই আমরা আদালতে গিয়েছি,” ব্যাখ্যা করেন তানভীর।
২০১৭ সালে ডাক বিভাগের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ২০১৯ সালের মার্চে অনুষ্ঠানিভাবে যাত্রা করে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় তদানন্তীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয় নগদের। মূলত এ কারণেই সরকার পরিবর্তণের সঙ্গে সঙ্গে নগদের গায়ে রাজনৈতিক ‘ট্যাগ’ লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। বাংলাদেশের মোবাইল আর্থিক সেবার বাজারে আবারো মনোপলি প্রতিষ্ঠা করতে রাতারাতি প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে বলে মনেকরেন তানভীর।
গত ২১ আগস্ট সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংক নগদে প্রশাসক নিয়োগের ঘোষণা দেয়। পরদিন ভোরের আগেই নগদ অফিসে পুলিশ চলে আসে এবং কর্মীদেরকে নগদ অফিসে ঢুকতে না দিয়ে প্রশাসক এর দখল বুঝে নেয়। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ‘কাউকে ছাটাই করা হবে না’ বলে ঘোষণা দিলেও ইতিমধ্যে নগদের বেশ কয়েকজন নিবেদিত প্রাণকর্মীকে জোরপূর্বক অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কাউকে কাউকে পদত্যাগেও বাধ্য করা হয়েছে।
তানভীর বলেন, মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরে নগদকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসার পেছরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মীকে অফিসে না আসতে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেন অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত প্রশাসক। এক্ষেত্রে কর্মীদেরকে ভয়ভীতিও দেখান তারা। এসব পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসককে একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠান তানভীর। সেখানে তিনি (ইংরেজীতে) লেখেন, “ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন আপনি। আপনি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অপদস্থ করছেন, বিষয়টা পেশাগত বা আইনগতভাবে হচ্ছে না। এটা আমার মনে থাকবে। ভালো থাকেন। আপনার ভবিষ্যতের প্রতি শুভ কামনা ….।” এই ম্যাসেজকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে বনানী থানায় জিডি করেন প্রশাসক।
তানভীর বলেন, সব মিলে নগদ অফিসে একটা ত্রাসের রাজত্ত্ব কায়েম করা হয়েছে এবং তার ফলশ্রুতিতে নগদের লেনদেনের পরিমান অনেক কমে গেছে। মাস দুয়েক আগেও নগদে গড়ে দিনে ১৮’শ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নগদের বড় করা বাজার অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অসীম ক্ষমতা ও দায়িত্ব রয়েছে। আইন বিরুদ্ধ কোনো কাজ তারা করতে পারে না। আমরা এই ঘটনার প্রতিকার চাইতেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ ঘোষণার পাশাপাশি প্রশাসক নিয়োগ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতেই এই রিট করা হয়েছে।”