চলতি বছর শেষে বাংলাদেশে স্মার্টফোন বিক্রি কমতে পারে ২ শতাংশ। যদি পূর্বাভাস সঠিক হয়, তাহলে এটি হবে টানা তিন বছর দেশের স্মার্টফোন বিক্রি নিম্নমুখী থাকার রেকর্ড। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টার পয়েন্টের গত সোমবারের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। সংস্থাটি বলছে, এ বছর বিক্রি কিছুটা কমলেও আগামী বছর বাজারটি ১৫ শতাংশ বাড়ার প্রত্যাশা রয়েছে।
২০২৪ সালের প্রথমার্ধে উৎসব মৌসুমের কারণে এ বাজারে ডিভাইস বিক্রি কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সরকারবিরোধী আন্দোলন ও বন্যার প্রভাবে স্মার্টফোন বিক্রি কমতে থাকে।
কাউন্টার পয়েন্টের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে উৎসবসংক্রান্ত ছাড় ও অফারের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে ফিচার ফোন থেকে স্মার্টফোনে স্থানান্তরের গতি বাড়তে দেখা যায়। একই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমায় দেশের মুদ্রার মান কিছুটা বৃদ্ধি পায়, ফলে স্মার্টফোনের উপকরণ খরচ প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকে স্মার্টফোন বিক্রিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ ছিল জুলাইয়ে কারফিউ জারির সময় দেশব্যাপী পাঁচদিন ইন্টারনেট সংযোগ না থাকা ও আগস্টে দেশের পূর্বাঞ্চলে সংঘটিত বন্যা।
এছাড়া দেশীয় মুদ্রার বিপরীতে ইউএস ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া ও লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার মধ্যে জটিলটা সৃষ্টি হওয়ার কারণে পরিস্থিতি আরো বেগতিক হয়। মুদ্রাস্ফীতির ধারাবাহিকতার কারণে মানুষ কম খরচ করতে শুরু করে, ফলে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিশেষ করে স্মার্টফোন কেনা ধীর হতে থাকে। এ সময় বেশির ভাগ ব্যবহারকারী তাদের পুরনো ফোনে থাকতেই পছন্দ করেন, কিছু গ্রাহক কম মূল্যে সেকেন্ড হ্যান্ড ও আন-অফিশিয়াল ফোন বেছে নেন। তবু নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও দেশের বাজারে স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের বিক্রি ও পারফরম্যান্স কিছুটা উন্নত করতে সক্ষম হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৬ কোটি ৩০ লাখ স্মার্টফোন রয়েছে। বছর শেষে এ সংখ্যা ৬ কোটি ৪০ লাখে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রবৃদ্ধি মূলত প্রথমবারের মতো স্মার্টফোন কিনতে আসা ক্রেতা ও ডিভাইসের মাধ্যমে ডিজিটাল কার্যক্রম বাড়ার কারণে ঘটছে। কাউন্টার পয়েন্টের বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রগতিতে স্মার্টফোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উন্নত ডিজিটাল পরিষেবাগুলোর মাধ্যমে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। উচ্চ গতির নেটওয়ার্ক, ই-কমার্স ও ডিজিটাল সেবাগ্রহণ বাড়ার কারণে ২০২৫ সালে দেশের স্মার্টফোন বাজারের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
চলতি বছর দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ফাইভজি স্মার্টফোনের বিক্রি তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় তিন গুণ বেড়েছে। ২০২৪ সালের শেষে এসব ডিভাইসের বিক্রি প্রায় ১০ লাখ ইউনিটে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বাজার বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা, দ্রুত ও আরো নির্ভরযোগ্য মোবাইল সংযোগ এবং সাশ্রয়ী ফাইভজি স্মার্টফোনের চাহিদা ও উন্নত মোবাইল ইন্টারনেট পারফরম্যান্সের প্রতি আগ্রহ বাংলাদেশের ফাইভজি স্মার্টফোন বাজার বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
বাজার গবেষণা সংস্থাটির পুর্বাভাস অনুযায়ী, যদিও ২০২৪ সালে বাংলাদেশের স্মার্টফোনের বাজারে বিক্রি নিম্নমুখী থাকবে, তবে বার্ষিক হিসাব ২০২৫ সালে এটি ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখতে পারে। এর পেছনে কয়েকটি কারণ থাকবে, যেমন দেশের অর্থনৈতিক চাপ কমে আসা, ফিচার ফোন থেকে স্মার্টফোনে পরিবর্তন, প্রথমবার স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন উপায়ে স্মার্টফোন ব্যবহার করা, ফোনের যন্ত্রাংশের স্থানীয় উৎপাদন ও চলমান ডিজিটালাইজেশন।