মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদ লিমিটেডের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট সিস্টেম অ্যাক্ট, ২০২৪ কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আইনটি দ্রুত কার্যকর করার জন্য অন্তবর্তী সরকারকে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের একটি ডিজিটাল আর্থিক সেবা হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে ২০১৯ সালে বাজারে আসে নগদ। এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অস্থায়ী লাইসেন্স দিয়ে তা চলছে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত আগস্টে ‘নগদ’ পরিচালনায় ও লেনদেনে অনিয়মের অভিযোগে প্রশাসক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, গত জুলাইয়ে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ‘পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট সিস্টেম অ্যাক্ট, ২০২৪’ আইনের ৩১ ধারা অনুযায়ী নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে, আইনটি প্রকাশিত হলেও তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়নি।
কেননা, আইনের ধারা ১-এর ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে তারিখ নির্ধারণ করিবে সেই তারিখে এই আইন কার্যকর হইবে। তবে সরকার এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেনি।
এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সরকারকে জানিয়েছি। সংশ্লিষ্ট বিভাগ শিগগিরই সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারি করে তারিখ নির্ধারণ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ তারিখ নির্ধারণ না করার কারণে প্রশাসক নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভাষ্য—পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন, ২০০৮ ও বাংলাদেশ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস রেগুলেশন, ২০২২-এর আওতায় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।
তবে আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সর্বশেষ আইনটি আরও সুনির্দিষ্ট বলে মনে করছেন তারা।
গত ১০ সেপ্টেম্বর প্রশাসক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন ‘নগদ’র এক পরিচালক। এর পরিপ্রেক্ষিতে, গত সপ্তাহে নিয়মিত ব্যবসা পরিচালনার বাইরে ‘নগদ’র সব কার্যক্রমের ওপর দুই সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেন হাইকোর্ট।
নগদে অনিয়মের অভিযোগ
ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে, প্রশাসক নগদে অনেক অনিয়ম পেয়েছেন। এর মধ্যে একটি হলো—প্রকৃত মানি ও ই-মানির মধ্যে ৬০০ কোটি টাকার ঘাটতি পেয়েছে প্রশাসক। ই-মানি তৈরির মাধ্যমে এই টাকা এসেছে যা নগদে প্রকৃতপক্ষে ছিল না। সংশ্লিষ্টদের মতে, আর্থিক খাতে এটি বড় ধরনের জালিয়াতি।
অন্য এক উদাহরণ—সরকারি ভাতার জন্য নির্ধারিত ৪১টি ডিস্ট্রিবিউশন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কয়েক বছরে মোট প্রায় এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা অননুমোদিত উত্তোলন হয়েছে। প্রশাসকের পক্ষ থেকে বিষয়টি ডাক বিভাগের মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে। অনিয়মে জড়িত নগদ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন প্রশাসক। প্রশাসক নিয়োগের পর থেকে নগদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর এ মিশুকসহ প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অফিসে আসছেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেনসিক অডিট
২০২৩-২৪ অর্থবছরের নিয়মিত অডিটের পাশাপাশি নগদের আগের কার্যক্রমের ফরেনসিক অডিট করতে নিরীক্ষক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফরেনসিক অডিট হলো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির আর্থিক রেকর্ডগুলো পরীক্ষা ও মূল্যায়ন। এর মাধ্যমে প্রমাণগুলো আইন বা আইনি কার্যধারায় ব্যবহার করা হয়। গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক এক দরপত্রে অংশ নিতে বিদেশি নিরীক্ষকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়।