বিশ্বব্যাপী আইফোন ব্যবহারকারী রয়েছে ১৪৬ কোটি। ২০২৪ সালের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ আইফোন ব্যবহার করছে। স্ট্যাটিস্টার পূর্বাভাসের বরাত দিয়ে চলতি মাসে এ তথ্য প্রকাশ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ব্যাংকমাইসেল।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টার পয়েন্টের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া সেরা ১০টি স্মার্টফোনের মধ্যে চারটি ছিল অ্যাপলের। বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাপী ১৫ কোটির বেশি আইফোন বিক্রি করেছে টেক জায়ান্টটি। চতুর্থ প্রান্তিক নিয়ে বছরের মোট বিক্রির পরিমাণ পূর্ববর্তী সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল ডাটা বিশ্লেষণ প্লাটফর্ম ডিমান্ডসেইজ। তবে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের প্রবৃদ্ধির মধ্যে শেষ প্রান্তিকে এসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আইফোন বিক্রি কমেছে ৫ শতাংশ। এ উত্থান-পতনের মধ্যেও স্মার্টফোন বিক্রি, বাজার হিস্যা ও প্রবৃদ্ধির দিক থেকে গত ডিসেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকে শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির মধ্যে শীর্ষে আছে কুপারটিনোভিত্তিক এ টেক জায়ান্ট।
কাউন্টারপয়েন্ট টেকনোলজি মার্কেট রিসার্চের গ্লোবাল হ্যান্ডসেট মডেল সেলস ট্র্যাকার বলেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি বিক্রীত স্মার্টফোনের তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছে আইফোন ১৫। তালিকার পরবর্তী দুটি স্থানও অ্যাপলের, যথাক্রমে আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স ও আইফোন ১৫ প্রো। তবে স্মার্টফোন বাজারে অ্যান্ড্রয়েডের আধিপত্য রয়েছে বরাবরই। বিশ্বের বৃহত্তম অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন সরবরাহকারী দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এর ব্যবহারকারী প্রায় ১০৩ কোটি।
প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম বাজারে আইওএসের ব্যবহার কয়েক বছরে দ্রুত বেড়েছে। ২০২৩ সালে বিশ্বে আইফোন ব্যবহারকারী ছিল ১৩৭ কোটি। এ সংখ্যা ১০ বছর আগে ছিল ১০ লাখের কিছু বেশি।
স্মার্টফোন এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। ই-মেইল চেক, ট্রাফিক নির্দেশনা পাওয়া, বিশেষ মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি কিংবা প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সহজ করে তুলেছে ডিভাইসটি। ২০০০-এর দশকে এ ডিভাইস সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য হওয়ার সঙ্গে ‘স্মার্টফোন’ শব্দটি জনপ্রিয় হতে থাকে। অনেকেই ২০০৭ সালে প্রথম চালু হওয়া অ্যাপলের আইফোনকে প্রথম সত্যিকারের স্মার্টফোন হিসেবে মনে করেন। কারণ এটি ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের মতো ইন্টারনেটের অভিজ্ঞতা দিয়েছিল। প্রথম আইফোন ২০০৭ সালে প্রকাশিত হলেও এর যাত্রা ও ইতিহাস অনেক আগেই শুরু হয়েছিল ‘প্রজেক্ট পার্পল’ নামক প্রকল্পের মাধ্যমে। হিস্ট্রি কো-অপারেটিভ বলছে, যোগাযোগকে নতুন করে পরিবর্তন করার কোনো বড় পরিকল্পনা থেকে আইফোনের সূচনা হয়নি। এটি শুরু হয়েছিল একটি কম্পিউটারের সবচেয়ে ‘অস্বস্তিকর’ অংশ, মাউস উন্নত করার পরিকল্পনা থেকে। এ নিয়ে ২০০৩ সালে অ্যাপল অভ্যন্তরীণ একটি পরীক্ষা শুরু করে। লক্ষ্য ছিল মাউসের বদলে এমন একটি টাচপ্যাড তৈরি করা, যা আরো ভালো নিয়ন্ত্রণ ও নমনীয়তা দেবে। কোম্পানির প্রথম ডিজাইন করা মডেল ০৩৫ ছিল একটি ট্যাবলেট আকৃতির। এটির আঙুল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ইন্টারফেসের মাধ্যমে ব্যবহারকারী পিঞ্চ, স্ক্রল ও জুম করতে পারতেন, যা ওই সময়ের কম্পিউটারে সম্ভব ছিল না।
মূল আইফোনের এক বছর পর ২০০৮ সালে অ্যাপল দ্বিতীয় সংস্করণের আইফোন থ্রিজি চালু করে, যা তৃতীয় প্রজন্মের ওয়্যারলেস প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা দেয়। আইফোন থ্রিজি মুক্তির পর প্রথম তিনদিনে ১০ লাখ ইউনিট বিক্রি হয়। অ্যাপল স্মার্টফোনের সর্বশেষ সংস্করণ আইফোন ১৬ সিরিজ বাজারে আসে গত বছর সেপ্টেম্বরে।