২০১৮ সালের দ্বিতীয়ার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মোট ১৪৯টি অনুরোধের মাধ্যমে ১৯৫ জন ফেসবুক ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছে, যা বছরের প্রথমার্ধের তুলনায় কিছুটা কম। গত বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) মোট ১৫২টি অনুরোধের মাধ্যমে ২০৫ জন ফেসবুক ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছিল। মার্কিন সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্টটি প্রকাশিত ‘ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট’ শীর্ষক অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ফেসবুকে তথ্য চেয়ে ১৩০টি জরুরি এবং ১৯টি আইনি অনুরোধ করা হয়েছিল। এসব অনুরোধের মাধ্যমে যে ১৯৫ জন ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে, তার ৪৪ শতাংশের তথ্য সরবরাহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। জরুরি অনুরোধের ক্ষেত্রে ৪৮ শতাংশ এবং আইনি অনুরোধের ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশের তথ্য দেয়া হয়েছে। একই সময় ২০টি অনুরোধের মাধ্যমে ৩১টি অ্যাকাউন্টের তথ্য সংরক্ষণের অনুরোধ করা হয়েছিল, সেসব অ্যাকাউন্টের তথ্য সংরক্ষণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য চেয়ে ১৩৪টি জরুরি এবং ১৮টি আইনি প্রক্রিয়ার অনুরোধ ছিল। সে সময় মোট অনুরোধের ৫৭ শতাংশের তথ্য সরবরাহ করেছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
ফেসবুকের সর্বশেষ ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য চেয়ে অনুরোধ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যবহারকারীর তথ্য চেয়ে অনুরোধ কিছুটা কমেছে।
বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী ২৩০ কোটি ছাড়িয়েছে। বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর মধ্যে স্বচ্ছতা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে গ্রাহকতথ্য চেয়ে সরকারি অনুরোধের সংখ্যা প্রকাশ করে আসছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের শেষার্ধে গ্রাহকতথ্য চেয়ে ফেসবুকে ১২টি অনুরোধের মাধ্যমে ৩১টি অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছিল। সে সময় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সরকারের মোট অনুরোধের ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশের তথ্য সরবরাহ করে ফেসবুক। পাশাপাশি প্লাটফরমটি থেকে চারটি কন্টেন্ট সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীর নাম বা কন্টেন্ট সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি ফেসবুক।
২০১৫ সালের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ সরকার তিনটি অনুরোধের মাধ্যমে মোট তিনটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছিল। এছাড়া ২০১৪ সালের প্রথমার্ধে পাঁচটি ও শেষার্ধে ১৭টি, ২০১৩ সালের প্রথমার্ধে ১২টি ও শেষার্ধে পাঁচটি অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়। তবে এসব অনুরোধের বিপরীতে কোনো তথ্য দেয়নি ফেসবুক। যদিও ২০১৩ সালের শেষার্ধে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে তিনটি কন্টেন্ট সরিয়েছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন দেশের সরকারের তথ্য চাওয়ার তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর দ্বিতীয়ার্ধে দেশটির পক্ষ থেকে মোট ৪১ হাজার ৩৩৬ জন ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়। তবে ফেসবুক জানিয়েছে, তারা এর বিপরীতে ৮৮ শতাংশের তথ্য সরবরাহ করেছে। গত বছর দ্বিতীয়ার্ধে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে মোট ২০ হাজার ৮০৫ জন ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য চাওয়া হয়। এর মধ্যে জরুরিভিত্তিতে ৮৬১ জন ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য চাওয়া হয়। দেশটির চাহিদার বিপরীতে ৫৩ শতাংশের তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পরই ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য চাওয়ার তালিকায় রয়েছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্স।
ফেসবুকের ডেপুটি জেনারেল কাউন্সেল ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস সন্দরবাই বলেন, গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছ থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য চাওয়ার হার আগের চেয়ে ৭ শতাংশ বেড়েছে।