বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। ১০ বছর আগেও এ ব্যয় ছিল ৩ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ কোটি ডলার, যা চলতি বছর ১০ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা ১০ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে। সাইবারসিকিউরিটি ভেঞ্চারস নামক একটি গবেষণা সংস্থার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়। সংস্থাটি বলছে, সাইবার অপরাধ বিশ্বব্যাপী একটি বড় ও ব্যয়বহুল সমস্যা হয়ে উঠছে।
সাইবারসিকিউরিটি ভেঞ্চারসের তথ্যানুযায়ী, সাইবার অপরাধের কারণে হওয়া খরচ ইতিহাসের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক ক্ষতির প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হবে। ফলে উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের জন্য উৎসাহ হুমকির মুখে ফেলবে। এ ক্ষতির পরিমাণ প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় অনেক বড় হবে। এর মধ্যে হ্যাকিং, ফিশিং, সাইবার আক্রমণ, কোম্পানির গোপন নথি ও তথ্য চুরি এবং অন্যান্য সাইবার অপরাধের কারণে হওয়া আর্থিক ক্ষতিগুলো অন্তর্ভুক্ত। ব্যবসা, ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাংকিং সিস্টেম ও প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তার ওপর এর প্রভাব পড়বে।
সাইবার অপরাধের কারণে ক্ষয়ক্ষতির আনুমানিক খরচ অতীতের এ-সংক্রান্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হিসাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গবেষণা সংস্থাটি। এর মধ্যে কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন সাম্প্রতিক বছরে সাইবার হামলা বেড়ে যাওয়া, অপরাধী গোষ্ঠীর হ্যাকিং কার্যক্রমের ব্যাপক বৃদ্ধি ও ২০২৫ সালে সাইবার হামলার লক্ষ্যবস্তু আজকের তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে যাওয়া। এ সবকিছু মিলিয়ে সাইবার অপরাধের প্রবণতা চলতি বছর আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
সাইবারসিকিউরিটি ভেঞ্চারসের মতে, এসব অপরাধের ফলে যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তথ্য নষ্ট হওয়া বা হারানো, অর্থ চুরি ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার কারণে উৎপাদনশীলতা হ্রাস। এছাড়া জালিয়াতি ও আত্মসাতের মতো ঘটনাও এর অন্তর্ভুক্ত। সাইবার হামলার পর যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়, যেমন ফরেনসিক তদন্ত বা তথ্য পুনরুদ্ধার। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি সাইবার হামলা প্রতিষ্ঠানের সুনামও নষ্ট করে এবং গ্রাহকদের আস্থা হারাতে হয়। বর্তমানে সাইবার অপরাধ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যই ব্যয়বহুল হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
প্রযুক্তিসংশ্লিষ্টদের মতে, ‘হ্যাক’ শব্দটির আধুনিক সংজ্ঞা তৈরি হয় ১৯৫৫ সালের এপ্রিলে। ১৯৬৩ সালে দ্য টেক পত্রিকায় প্রথমবার ফোন হ্যাকিংয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। গত পঞ্চাশ বছরে সাইবার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ফোন সিস্টেম থেকে একটি বিশাল ডিজিটাল জগতে পরিণত হয়েছে। জগৎটি এত বড় ও জটিল যে মানুষ এখন আর একে পুরোপুরি সুরক্ষিত রাখতে পারছে না।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বে ২০০ জেটাবাইট ডাটা সংরক্ষিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত ও পাবলিক আইটি অবকাঠামো, ক্লাউড ডাটা সেন্টার, ব্যক্তিগত কম্পিউটিং ডিভাইস (পিসি, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, স্মার্টফোন) ও আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) ডিভাইসে সংরক্ষিত ডাটা। বিশাল এ ডাটাসমুদ্র সাইবার নিরাপত্তার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
এদিকে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান চেক পয়েন্ট বলছে, গত বছর বিশ্বব্যাপী সাইবার হামলায় সবচেয়ে বড় লক্ষ্যবস্তু ছিল শিক্ষা ও গবেষণা খাত। এর পরই ছিল সরকার বা সামরিক ও স্বাস্থ্যসেবা খাত। গত বছরের মাঝামাঝিতে সবচেয়ে বেশি সাইবার হামলা বেড়েছে হার্ডওয়্যার শিল্পে, যা বার্ষিক হিসাবে ১৯১ শতাংশ।
চেক পয়েন্টের প্রতিবেদন আরো বলছে, সাইবার আক্রমণের সংখ্যা ও তীব্রতা দুটোই উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সাইবার অপরাধীরা তাদের কৌশলগুলো জটিল করে চলেছে। তাই তাদের থেকে এগিয়ে থাকা শুধু পরামর্শযোগ্য নয়, এটি অপরিহার্য।