বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ উৎপাদন। এসব এআই চিপে ব্যবহৃত সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বৈশ্বিক পরিবেশবিষয়ক সংস্থা গ্রিনপিসের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে এআই চিপ তৈরি করতে গিয়ে সৃষ্ট নিঃসরণ আগের বছরের তুলনায় চার গুণ বেড়েছে। সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত আরো কিছু প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। খবর এনগ্যাজেট।
গ্রিনপিসের তথ্যমতে, গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) ও মেমোরি ইউনিটের উপাদান উৎপাদনে এনভিডিয়ার মতো বড় চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) ও এসকে হাইনিক্সের ওপর নির্ভরশীল। এ উৎপাদনের বেশির ভাগই তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে ঘটে। যেখানে পাওয়ার গ্রিডগুলো প্রাথমিকভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। এটি বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ বাড়ার একটি বড় কারণ। ২০৩০ সালের মধ্যে এআইয়ের জন্য বিশ্বব্যাপী বিদ্যুতের চাহিদা ১৭০ গুণ বাড়তে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে গ্রিনপিস।
প্রতিবেদন বলছে, গ্রিনপিসের হিসাব অনুযায়ী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে দ্রুত অগ্রগতির ফলে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে চিপ তৈরির জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে হবে। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে উল্টোটা। দক্ষিণ কোরিয়া সম্প্রতি চার গিগাওয়াট গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এদিকে তাইওয়ান এআই খাতের বিদ্যুৎ চাহিদাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্প ও গ্রিড অবকাঠামো সম্প্রসারণ করছে।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। সেখানে দেশটিকে কার্বন নির্গমনকারীর তালিকায় রেখেছে সংস্থাটি। আইইএর বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে এআই প্রযুক্তি বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যতে ডাটা সেন্টারগুলো প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ করবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসব এআই-নির্ভর ডাটা সেন্টারের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার অর্ধেক বাড়তে পারে। তাদের মতে, অবস্থা এমন হতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য যে পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগবে, তা দেশটিতে অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, সিমেন্ট বা রাসায়নিক উৎপাদনের মতো ভারী শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মোট বিদ্যুৎ খরচকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গ্রিনপিস বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ডাটা সেন্টার থেকে বিদ্যুতের চাহিদা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে প্রায় ৯৪৫ টেরাওয়াট-ঘণ্টা হতে পারে, যা জাপানের মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারের চেয়েও বেশি। একই সঙ্গে তা আয়ারল্যান্ডের মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারের ৩০ গুণ বেশি।
তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমর্থকদের দাবি, প্রযুক্তিটি বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন ত্বরান্বিত করবে, বিশেষ করে ব্যাটারি ও সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তিতে। ফলে এক সময় জ্বালানি সংকট কমে আসবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সম্ভাবনা এখনো অনিশ্চিত।
প্রকৃতিতে প্রযুক্তির প্রভাব উল্লেখ করে গত বছর মরগান স্ট্যানলির গবেষণায় বলা হয়, বিশ্বব্যাপী ডাটা সেন্টারের দ্রুত সম্প্রসারণের কারণে চলতি দশকের শেষ নাগাদ প্রায় ২৫০ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড-সম নিঃসরণ ঘটবে। ডাটা সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণে যে বাড়তি শক্তি ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রয়োজন, তা পরিবেশে বেশি কার্বন নিঃসরণের কারণ হতে পারে।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দ্রুত বাড়তে থাকা ডাটা সেন্টারের সংখ্যা ও আকারের কারণে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাবও বাড়ছে। তাই পরিবেশগত ক্ষতি কমাতে এসব ডাটা সেন্টারের জন্য আরো কার্যকর ও টেকসই প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে দ্রুত ও কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।