চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন বিক্রি বেড়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। বাজার গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি) এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। এতে বলা হয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চ—এই তিন মাসে প্রায় ৩০ কোটি ৪৯ লাখ স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কায় মার্কিন বাজারে স্মার্টফোন সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় সাময়িকভাবে এই প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। তবে এটি স্থায়ী কিনা, তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
শুল্ক আতঙ্কে সরবরাহ বাড়িয়েছিল কোম্পানিগুলো
আইডিসির ক্লায়েন্ট ডিভাইস বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিস্কো জেরোনিমো বলেন, ‘২০২৫ সালে শুল্ক বাড়বে—এই আশঙ্কায় অনেক প্রতিষ্ঠান আগেভাগেই বেশি পরিমাণ পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। ফলে বিক্রি বেড়েছে, কিন্তু এটি প্রকৃত চাহিদার প্রতিফলন নয়।’
তিনি আরও জানান, ‘এই বাড়তি সরবরাহ ভবিষ্যতে বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এ ধরনের কৌশল সাময়িক সমাধান দিলেও দীর্ঘমেয়াদে চাহিদা কমিয়ে দিতে পারে।’
চীনা কোম্পানির দাপট, শীর্ষে স্যামসাং
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের শুরুতে চীনা স্মার্টফোন কোম্পানিগুলোর বাজারেও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। শাওমি, অপো ও ভিভো রয়েছে এ তালিকার শীর্ষে।
তবে বাজার দখলের দিক থেকে এখনো সবার ওপরে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। এরপর রয়েছে অ্যাপল, শাওমি, অপো ও ভিভো।
শুল্কের ছায়া বাজারে
আইডিসির গ্রুপ ভাইস প্রেসিডেন্ট রায়ান রিথ বলেন, ‘চীন থেকে আমদানি করা স্মার্টফোনের ওপর শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত করায় কোম্পানিগুলো কিছুটা স্বস্তিতে আছে। কিন্তু ভবিষ্যতে ফের শুল্ক আরোপ করা হলে তা পুরো বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে।’
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চলতি মাসের শুরুতে নতুন করে ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর বড় ধরনের শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। যদিও পরে স্মার্টফোনসহ বেশকিছু পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আংশিকভাবে প্রত্যাহার করে নেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এতে সাময়িক স্বস্তি পেয়েছে অ্যাপলসহ প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিপর্যয়ের পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা
প্রসঙ্গত, স্মার্টফোন বিক্রির ইতিহাসে ২০২০ সাল ছিল সবচেয়ে বড় ধসের বছর। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি কমে যায় প্রায় ৩৮ শতাংশ। এরপর ২০২২ ও ২০২৩ সালেও বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল। অবশেষে ২০২৪ সালের শুরুতে বাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে মন্দা বা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা আবারো বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সাময়িক এই প্রবৃদ্ধিকে অতিরিক্ত আশাবাদের জায়গা থেকে না দেখে সতর্ক দৃষ্টিতে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।