ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, আমি বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং এ দেশের মানুষের একটি পয়সাও চুরি করবো না-এই আস্থাটা আমার ওপর রাখবেন আশা করি। আমি প্রচণ্ড রকম আর্থিক সততা নিয়ে বড় হয়েছি।
শনিবার (৩১ মে) নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে এসব কথা বলেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লেখেন, আমার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট’ এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদন্তের ব্যবস্থা করেছি, নির্দেশনা দিয়েছি। নগদের অ্যাক্টিং সিইও এই বিষয়ে প্রেস রিলিজে বলবেন। তবে বলে রাখি, এখানে অন্যায়ভাবে সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং আমাকে টেনে আনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নগদে সাবেক সরকারের লোকেরা ভুয়া ই-কেওয়াইসি করে, ই-কেওয়াইসি ছাড়া অ্যাকাউন্ট খোলে, ভুয়া এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে, ভুয়া ক্যাশব্যাক করে, অবৈধ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে লেনদেন করে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। ‘মানবজমিন’ সুকৌশলে এই দায় আমার এবং নাহিদ ইসলামের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছে, আমি এর নিন্দা জানাই।
ট্রান্সকম স্যাটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে জমা অর্থের বিপরীতে অবৈধভাবে ইলেকট্রনিক মানি তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে ফয়েজ আহমদ বলেন, ডাক বিভাগের রিপোর্ট মতে পরিমাণটা ৬৪৫ কোটি টাকা। আমি নিজে তদন্তকারী গোয়েন্দা সংস্থাকে এসব বিস্তারিত বুঝিয়েছি, প্রেজেন্টেশন দিয়েছি। যাদের আগ্রহ আছে, এসব পাবলিক করে দেব। এটা ভয়াবহ অনৈতিক আচরণ হয়েছে আমাদের ওপর-আওয়ামী লুটপাট আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ সন্দেহভাজন নগদ কর্মকর্তাকে আমি নিজে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুরোধ করেছি। তারা ঘটনা উল্টে দিয়ে বলেছে আমি ছাড়িয়ে দিয়েছি। এই মিথ্যা সাংবাদিকতার জবাব কে দেবে!
তিনি আরও বলেন, যে দুই মাসের কথা বলা হয়েছে, সেই সময় কোম্পানির মোট খরচ আনুমানিক ৪৩ কোটি টাকা, কিন্তু বলা হচ্ছে দুর্নীতি করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। অথচ একাধিক সংস্থা তদন্ত করছে। এমন প্রপাগান্ডামূলক সাংবাদিকতা মানতে পারছি না, বিশেষ করে যে পত্রিকায় আমি এক ডজনের বেশি কলাম লিখেছি।
২৭ মে সন্ধ্যায় নগদের দায়িত্ব বাংলাদেশ ডাক বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়ার পর ২৮ মে মাত্র এক কর্মদিবস দায়িত্বে নতুন অ্যাক্টিং সিইও ছিলেন উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ বলেন, সেদিনই তার নির্দেশে আসামিদের ইমেইল ব্লক করা হয়। আসামিরা ইমেইলে কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করছিল ও হুমকি দিচ্ছিল। নতুন অ্যাক্টিং সিইও সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন- কারো চাকরি যাবে না, ঠিক সময়ে বেতন-বোনাস দেয়া হবে। এর আগে ২ সপ্তাহ দায়িত্বে ছিলেন শাফায়াত গং। ৫ আগস্ট থেকে ১১ মে পর্যন্ত দায়িত্বে ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
তিনি আরও বলেন, আমরা সংবাদকর্মীদের কাছ থেকে জেনেছি যে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পক্ষ একটি এজেন্সির মাধ্যমে ১৫০ কোটির দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এর আগে তারা কিছু টিভি স্টেশনকেও অ্যাপ্রোচ করেছিল। দেশের শীর্ষ ফ্যাক্টচেকার এবং ডিজিটাল ভেরিফিকেশন এক্সপার্টরা সেটি এক্সপোজ করেছেন।
নগদে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসক বসানোর পর তারা কেপিএমজি-কে দিয়ে ফরেনসিক রিপোর্ট করাচ্ছে জানিয়ে ফয়েজ আহমদ বলেন, অভিযোগ আছে কেপিএমজির কিছু অ্যাকাউন্ট্যান্ট প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমি পলিসি অ্যাডভাইজার থাকাকালে বলেছিলাম সময় ও অর্থ সাশ্রয়ে সিসিএ কিংবা সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব ব্যবহার করা হোক। এসব বিষয়ে আমি গভর্নরকে বিস্তারিত জানিয়েছি এবং বলেছি, একটি রেগুলেটর যদি তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে কোনো কোম্পানির অপারেশন ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চালায়, তাহলে প্রতিযোগীরা সুবিধা পায় এবং মনোপলি হয়ে যায়। তাই নগদকে ডাক বিভাগে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে চালানোই টেকসই হবে। (আধা-সরকারি পত্র উন্মুক্ত করার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হওয়ায় জবাবদিহির জায়গা থেকে শেয়ার করছি)।
আমি কারও ক্ষতি করিনি, দেশের স্বার্থে শৃঙ্খলা আনতে দিনরাত কাজ করছি মন্তব্য করে তিনি বলেন, পাশাপাশি, বিএফআইইউ-কে অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে বেশ কিছু টাস্ক দিয়েছি। ভুয়া ই-কেওয়াইসি, ই-কেওয়াইসি ছাড়া অ্যাকাউন্ট খোলা, ভুয়া এজেন্ট নিয়োগ, ভুয়া ক্যাশব্যাক, অবৈধ মার্চেন্ট লেনদেন, সীমান্তে হুন্ডি বন্ধে এজেন্টদের জিও-ফেন্সিং করার নির্দেশনা দিয়েছি। তারা আমাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
সরাসরি বলি-ডাক বিভাগ থেকে আমরা দুই পক্ষের আইনি লড়াই থেকে নগদকে বাঁচাতে কাজ করছি দাবি করে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, শাফায়াত গং হেভিওয়েট ব্যারিস্টার এনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। এই দায়ও আমাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা হয়েছে। একটি অস্থিতিশীল সময়ে ডাক বিভাগের লাইসেন্স, রেগুলেটরের গাইডলাইন, টপ এক্সপার্টদের ম্যানেজ সার্ভিসে আনলে নগদ ভালো চলবে- এইটাই ডিও লেটারে লিখেছি। নগদ দেশের ৯ কোটি নাগরিকের সঙ্গে যুক্ত, এটি বন্ধ হয়ে গেলে দেশের মানুষের আর্থিক ক্ষতি হবে, প্রতিযোগীরা মাফিয়া মনোপলি হয়ে উঠবে, দাম বাড়বে।
মানবজমিন আমাকে গতকাল যে বিভীষিকাময় দিন উপহার দিয়েছে, এমন দিন আমার জীবনে কখনও আসেনি জানিয়ে ফয়েজ আহমদ বলেন, আমি মানবজমিনের কলাম লেখকদের একজন। আমার লেখা কলামগুলোর জন্য এখনো পেমেন্ট চাইনি। আমার যোগাযোগ নম্বর তাদের কাছে আছে। মানবজমিন চাইলে নাহিদ ইসলাম ও আমার কাছ থেকে বক্তব্য নিতে পারতো। এ ধরনের সাংবাদিকতা কতটা নৈতিক, সেটার বিবেচনার ভার নাগরিকদের।